ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের তরুণ সমাজ ঝুঁকির কারণ হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

ভারতের তরুণ সমাজ ঝুঁকির কারণ হতে পারে

বিশ্বের সত্যিকারের শক্তিধর উদীয়মান বাজার হিসেবে চীনের চাইতে ভারতকেই বেশি সম্ভাবনাময় দেশ বলে গণ্য করা হয়। ভারতের ডেমোগ্রাফি এবং বিকেন্দ্রীকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে এক্ষেত্রে চীনের চেয়ে সুবিধাজনক হিসেবে দেখা হয়। চীনের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা কর্তৃত্ববাদী এর জনগোষ্ঠীর বয়স দ্রুত বাড়ছে। এটা চীনের এক মস্ত দুর্বল দিক। তার পরও ভারতের বর্ধিষ্ণু তরুণ জনগোষ্ঠী অচিরেই শক্তির উৎস হওয়ার পরিবর্তে দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভারতের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বয়স ২৫ বছরের কম। ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। অর্থনীতিকে উন্নততর স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এরা অনেক সম্ভাবনাময় শক্তি। পক্ষান্তরে চীনের জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের তুলনায় দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে। ১৯৮০ সালে চীনে মাঝ বয়সী জনগোষ্ঠী ছিল প্রায় ২২ শতাংশ। ২০৫০ সাল নাগাদ তা হবে ৪৮ শতাংশ। ফলে দ্রুত বর্ধিষ্ণু বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ তৈরি করার মতো শ্রমিকের সংখ্যা সেখানে কমে যাবে। তার পরও পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ডেমোগ্রাফির এই চিত্রটা বদলে দিতে পারে। বিশ্বে অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধির প্রভাব সবেমাত্র অনুভূত হতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে এর পরিণতিতে ভারতের ৬৯ শতাংশ এবং চীনের ৭৭ শতাংশ প্রচলিত চাকরি হুমকির সম্মুখীন হবে। এসব প্রযুক্তির বদৌলতে যত না চাকরি উঠে যাবে তার চাইতে বেশি চাকরির সৃষ্টি হবে এটাও সম্ভব। তবে আজকের শ্রমিক বা কর্মীদের আগামী দিনের প্রযুক্তিগতভাবে অধিকতর জটিল চাকরি পূরণ করার জন্য নতুন করে ট্রেনিং দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এর ফলে শ্রম বাজারে যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হবে তা গুরুতর সামাজিক অসন্তোষ ও অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই পরিবর্তন সামাল দিতে চীন বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও বয়স্ক জনগোষ্ঠী চাকরি ও মজুরির ওপর সৃষ্ট চাপ খানিকটা লাঘব করতে পারে। তবে এদিক দিয়ে ভারতের অবস্থা হবে আরও কঠিন। ভারতে প্রতি মাসে ১০ লাখ লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। অথচ ইতোমধ্যেই তাদের জন্য কাজের সুযোগ আছে অনেক কম। কালক্রমে ভারতের তরুণ জনগোষ্ঠী সমাজের জন্য সম্পদ না হয়ে দায় হয়ে দাঁড়াতে পরে। তবে চীনের কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র ব্যবস্থার তুলনায় ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটা সুফল আছে। স্বৈরাচারী ব্যবস্থা সর্বদাই নাজুক ও ভঙ্গুর হয়। কারণ এতে জনগণের হতাশা ব্যক্ত করার নিরাপদ কোন পথ থাকে না। ফলে মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশ ও মুক্তচিন্তার পথ রুদ্ধ হয়। সেদিক দিয়ে ভারতের রাজনৈতিক কাঠামোকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বলে গণ্য করা যেতে পারে। ২০০৯ সালে ভারত সরকার আদহার নামে বায়োমেট্রিক আইডি ব্যবস্থা চালু করে। ২০১০ সাল থেকে প্রত্যেকের অনন্য পরিচিতি রেকর্ড রাখার জন্য আইরিস ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের স্ক্যানিং শুরু হয়। এক শ’ কোটিরও বেশি লোক এখন ড্যাটাবেসের আওতাধীন। এই কার্যক্রম শেষ হলে প্রত্যেকে সুফল ভোগ করবে, ভর্তুকি নিয়ে জালিয়াতি দূর হবে, অধিক কর সংগৃহীত হবে এবং অপচয় ও দুর্নীতি কমবে। তবে ভারত ও চীনের মধ্যে আরেক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। গত আগস্ট মাসে ভারতের সুপ্রীমকোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে রায় দেয় যে প্রাইভেসি রক্ষার ব্যাপারে ভারতীয়দের মৌলিক অধিকার আছে। এই রায়ের ফলে আদহার ব্যবস্থার অধীনে ড্যাটার সম্ভাব্য অপব্যবহার থেকে নাগরিকের স্বার্থ রক্ষিত হতে পারে। এই ঘটনাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে ভারত এখনও এমন একটা দেশ যেখানে আদালত কখনও কখনও সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিতে পারে যা চীনের আদালত পারে না। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×