ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাতালোনিয়া নিয়ে স্পেন কঠিন সঙ্কটে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

কাতালোনিয়া নিয়ে স্পেন কঠিন সঙ্কটে

স্পেনের কাতালোনিয়া প্রদেশে গত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গণভোটে সেখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতারা বলেছেন যে গণভোটের রায়ের ফলে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বর্গমাইলের এই ভূখ-ের স্বাধীনতা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় বলেছেন স্বাধীনতা ঘোষণায় কোন কাজ তো হবেই না, এমনকি যে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার এই প্রদেশটি ভোগ করবে তা স্থগিত করার বিষয়টি তার বিবেচনায় আছে। শেষ পর্যন্ত কি হবে এ মুহূর্তে বলা মুশকিল হলেও একটা ব্যাপার সন্দেহ নেই যে ১৯৮১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে এ ঘটনায় স্পেন ভয়াবহতম সাংবিধানিক সঙ্কটে নিপতিত হলো। এই সঙ্কট যে সহজে থামছে না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভোটের দিন রায়ট পুলিশ বৃদ্ধাদের ভোট দিতে না দেয়ার জন্য তাদের লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। অভিযোগ আছে ভোটের দিন পুলিশের হাতে ৯শ’ ব্যক্তি আহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রাহয় হয়ত ভেবেছেন যে লাঠির বাড়িতে বৃদ্ধাদের মাথা ফাটিয়ে দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ বন্ধ করা যাবে। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা বলে যে এর চেয়ে বড় ভ্রান্তি আর হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর এই আচরণে স্বাধীনতাকামীরা আরও নতুন উদ্যম লাভ করেছে এবং মিত্ররা হয়েছে মর্মাহত। সরকারের নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদে ৩ অক্টোবর হরতালে স্পেনের অন্যতম সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটি অচল হয়ে যায়। লাখ লাখ লোক বিক্ষোভে অংশ নিয়ে রুদ্ররোষে ফেটে পড়ে। কাতালোনিয়া শেষ অবধি যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে স্পেনের জন্য তা মহাবিপর্যয়ের হবে। তাই স্পেন কিছুতেই প্রদেশটিকে স্বাধীন হতে দেবে না। কাতালোনিয়াকে হারানো মানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী বার্সিলোনাকে হারানো। কাতালান স্বাধীনতা ইউরোপের অন্যত্র বিচ্ছিন্নতাবদ মাথাচাড়া দেয়ার পথ করে দিতে পারে। স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার দাবি যে নতুন করে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। তবে ইতালির উত্তরাঞ্চলে, কর্সিকায় এবং সম্ভবত ব্যাভেরিয়াতেও স্বাধীনতার চেতনা মাথাচাড়া দেবে। পরিস্থিতি যাই হোক কাতালোনিয়া একতরফাভাবে এবং সংবিধান পরিপন্থীদের স্বাধীনতা ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ভূখ- খ-িত হওয়ার আশঙ্কাটা স্পেনের ইতিহাসগত। ১৯৩০ এর দশকে স্পেনের গৃহযুদ্ধের পেছনে কাতালানের বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবনা ছিল অন্যতম কারণ। ১৯৭৮ সালে এই সাংবিধানিক বিধান বলে কাতালোনিয়াসহ স্পেনের বিভিন্ন অঞ্চলকে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয় এবং তাতে এই ব্যবস্থা ছিল সে দেশকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। গণভোটের প্রয়োজন হলে কেবল জাতীয় সরকারই তার আয়োজন করতে পারবে। স্বাধীনতাকামী নেতারা কিন্তু এই বিধানাবলী লঙ্ঘন করেই গণভোটের ব্যবস্থা করছিলেন। এতে স্পেনবাসীর অনেকেই অসন্তুষ্ট। কাতালোনিয়া স্পেনের অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল। বার্সিলোনিয়ার ফুটবল টিমের নাম। বিশ্বের কে না জানে। কাতালোনিয়া স্পেনের বার্ষিক আয়ের ২০ শতাংশ যোগায়। এমন এক প্রাণবন্তÍ অর্থনীতি থাকায় গণভোটের দিনটির আগ পর্যন্ত কেউ গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনি যে কাতালোনিয়ার ওপর শোষণ-নির্যাতন চলছে। সেই কারণে কাতালান নেতা কার্লেস সুইপাদেমন্তের স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে জোরালো কোন যুক্তি নেই। গণভোটের আগে জনমত জরিপে দেখা গিয়েছিল যে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কাতামান বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে ৯০ শতাংশ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছে এই দাবির মধ্যে ফাঁক আছে। এই ৯০ শতাংশ হচ্ছে অনিবন্ধিত ভোটার যাদের সংখ্যা প্রকৃত ভোটারের অর্ধেক। পুইগদেমন্তের পদ্ধতির মধ্যে ফাঁক যাই থাক না কেন তার পরও অনেকে মনে করে কাতালোনিয়ার আলাদা রাষ্ট্রসত্তা লাভ করার যুক্তি আছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়েই এটি টিকে থাকতে পারবে। কাতালোনিয়ার অনেক মানুষ নিজেদের আলদা জাতি বলে ভাবে। স্বায়ত্তশাসনের অধীনে সেখানকার নেতারা ভাঙ্গা ও জাতীয় পরিচিতির বিকাশ ঘটিয়েছেন। বিচ্ছিন্নতা হওয়ার বৈধতা থাক আর নাই থাক, স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা একবার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলে স্পেন সরকার সেটাকে তিন ভাবে মোকাবেলা করতে পারে- হয় সেই আকাক্সক্ষা দমন করে পর্যুদস্ত করা, নয়ত সেই আকাক্সক্ষার প্রতি নতিস্বীকার করা অথবা সংলাপের মাধ্যমে একটা সমঝোতায় আসা। শেষ পর্যন্ত কি ঘটবে দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×