ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবিস্মরণীয় কীর্তি আমলা-ককের

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

অবিস্মরণীয় কীর্তি আমলা-ককের

অভূতপূর্ব, বিস্ময়কর- যে কোনটাই বলা যায়। কুইন্টন ডি কক আর হাশিম আমলা যা করেছেন তা বদলে দিয়েছে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাস। তাদের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের রেকর্ডে সর্বাধিক রান তাড়া করে ১০ উইকেটে বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কক এবং আমলা ব্যাটিং শুরু করে আর ফেরেননি সাজঘরে। দলকে জিতিয়েই ফিরেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে যে কোন দলের বিরুদ্ধে প্রথম উইকেটে রেকর্ড ২৮২ রানের জুটি গড়েন তারা। এর আগে ২০১৬ সালের জুনে ২৫৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ১০ উইকেটে শ্রীলঙ্কাকে বার্মিংহামে হারিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই রেকর্ডকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়েছে প্রোটিয়ারা। কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের করা ৭ উইকেটে ২৭৮ রান টপকে যাওয়ার সময় এই রেকর্ডগুলো করেন আমলা-কক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আগের ১৮ ওয়ানডেতে যা করতে পারেনি বাংলাদেশ, কিম্বার্লিতে সেটাই করেছে। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক দলীয় সংগ্রহ গড়ে ৭ উইকেটে ২৭৮ রান তুলে। এছাড়া আরেকটি রেকর্ডের জন্ম দেন মুশফিকুর রহীম সেঞ্চুরি করে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। এমন একটি ম্যাচে দারুণ কিছুরই আশা করছিল বাংলাদেশ দল। টেস্ট সিরিজে ভয়ানক ব্যর্থতার পর ওয়ানডে সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর যে প্রত্যয় জানিয়েছিল সফরকারীরা। সেটা যেন এই দারুণ ব্যাটিং নৈপুণ্যের মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে। কিন্তু বোলাররা ব্যাটসম্যানদের সাফল্যটাকে কাজে লাগাতে পারেননি। দুই প্রোটিয়া ওপেনার কক ও আমলা যেন কাঁঠালের আঠা হয়ে আটকে যান উইকেটে। একের পর এক বাংলাদেশী বোলারদের হতাশায় ডুবিয়েছেন তারা। ব্যর্থতার আগুনে পুড়েছেন ৭ বোলার। কারও কাছে নতি স্বীকার দূরের কথা, প্রতিটি বোলারকে তুলোধুনো করেছেন এ দুই ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে ক্রিকেটে কক-আমলা জুটি অনেক আগেই নিজেদের সেরা একটা অবস্থানে নিয়ে গেছেন। ওয়ানডের ইতিহাসে যত ওপেনার এসেছেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থেকেছেন তাদের মধ্যে রসায়নটা সবচেয়ে ভাল আমলা-ককেরই। তাদের জুটির রেকর্ডটাই সেটা বলে দিচ্ছে। অনেক আগেই ওয়ানডের ইতিহাসে জুটিতে সর্বাধিক রান করার রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন তারা। সেটিকে ক্রমেই নিয়ে যাচ্ছেন অসামান্য উচ্চতায়। কিম্বার্লিতে দুজনই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ২৮২ রান দলীয় সংগ্রহে যোগ করে। এর ফলে ৫৫ ইনিংসে দুজন জুটি বেঁধে ২৪২৮ রান করেছেন ৪৫.৮১ গড়ে। জুটিতে আছে ৫ সেঞ্চুরি ও ৯ হাফ সেঞ্চুরি। সেদিক থেকেও অন্য যে কোন জুটির চেয়ে বেশি তারা। ভারতের শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা জুটিতে আছে ৫টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি। ৩১ ইনিংসে জুটি বেঁধে তারা ৪৭.৭৭ গড়ে ১৪৮১ রান করে তালিকায় আছেন তিন নম্বরে। আর সর্বাধিক ৯ অর্ধশতকও ৪ সেঞ্চুরি সহ ৩৯ ইনিংসে ১৭৪২ রান করে অস্ট্রেলিয়ার এ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার জুটি ৪৪.৬৬ গড়ে করেছেন ১৭৪২ রান। তারা তালিকায় আছেন দুই নম্বরে। অর্থাৎ অনেক এগিয়ে আমলা-কক জুটি। ম্যাচের শেষ দিকে সুযোগ এসেছিল বিব্রতকর রেকর্ড থেকে বেঁচে যাওয়ার। হয়নি নাসির হোসেনের ব্যর্থতায়। মাশরাফির বলে ডি ককের ক্যাচ ছুটে যায় তার হাত থেকে। আর তাসকিন আহমেদ ফিরতি ক্যাচটা ধরতে পারেননি। ওয়ানডেতে এ নিয়ে একাদশবার ১০ উইকেটে হারল বাংলাদেশ। সবশেষ ২০০৮ সালে এই তেতো স্বাদ পেয়েছিল তারা সালে করাচিতে পাকিস্তানের কাছে। ৯ বছর পর আবারও সেই লজ্জায় ডুবতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেটাই ছিল দু’দলের মধ্যে সর্বশেষবার এই ফরমেটে মুখোমুখি হওয়া। সেবার স্বাগতিক বাংলাদেশের কাছে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়েছিল প্রোটিয়ারা। প্রথমবার বাংলাদেশের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের ঠিক দুই বছর পর প্রথম মোকাবেলাতেই চরম প্রতিশোধ তুলে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশকে দিল ওয়ানডে ক্রিকেটে ১১তম বারের মতো ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারের কলঙ্ক। আর দক্ষিণ আফ্রিকা সর্বাধিক ৩ বার এই ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশকে। দুইবার করে বাংলাদেশকে এই ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা। আর ১ বার করে হারতে হয়েছে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের কাছে। উল্লেখ্য, ২০০২ সালের অক্টোবরে বেনোনিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের প্রথমবার ১০ উইকেটে হারের বিস্বাদটাও দিয়েছিল প্রোটিয়ারাই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যে দলটি ওয়ানডে ক্রিকেটে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছে সেই দলটির বিরুদ্ধে এমন জয় সত্যিই অস্বাভাবিক। কারণ, রান তাড়া করার ক্ষেত্রে কোন উইকেট না হারিয়ে জেতার বিশ্বরেকর্ড গড়েছে প্রোটিয়ারা। গত বছর জুনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বার্মিংহামে ইংল্যান্ড জিতেছিল ২৫৪ রান তাড়া করে ১০ উইকেটে। সেই বিশ্বরেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। চার পেসার আর তিন স্পিনার ব্যবহার করেও দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে পারেননি মাশরাফি। তার দলের কেউ ভাবাতেও পারেনি দুই ব্যাটসম্যানকে। একদম অনায়াস জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন ডি কক, আমলা। তাদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে বোলাররা। মাত্র দুটি সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তা কাজে লাগেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোন জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে ফেলে ১৫৫ পেরোতেই। আর ২৪৭ পার হতেই হয়ে যায় উদ্বোধনী জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড। অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেটে ডেভিড মিলার ও জেপি দুমিনির ২৫৬ ছাড়িয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দেশের সেরা উইকেট জুটির (২৮২) রেকর্ড এখন ডি কক-আমলার অধিকারে। আর প্রথম উইকেটে এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা জুটি ছিল হাশিম আমলা-রাইলি রুশোর ২৪৭। তারা জোহানেসবার্গে ১৮ জুন ২০১৫ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এই জুটি গড়েছিলেন। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে আমলা-ককের গড়া ২৮২ রানের এ জুটি আছে তিন নম্বরে। প্রথম উইকেটে সেরা জুটি ২৮৬ রানের। শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়া ও উপুল থারাঙ্গা ২০০৬ সালে প্রথম উইকেটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লিডসে করেছিলেন ২৮৬ রানের জুটি। আর এ বছরই জানুয়ারিতে এ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার-ট্রাভিস হেড ২৮৪ রানের জুটি গড়েন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আর যে কোন উইকেটে সেরা জুটির তালিকায় এর অবস্থান ৬ নম্বরে। শীর্ষে আছে দ্বিতীয় উইকেটে ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলসের করা ৩৭২ রানের জুটি। তারা ২০১৫ বিশ্বকাপে ক্যানবেরায় জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ২৪ ফেব্রুয়ারি ওই কীর্তি গড়েন।
×