ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রাবণী আক্তার সান

রশীদের চোখে আরও বড় স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

রশীদের চোখে আরও বড় স্বপ্ন

মোহাম্মদ নবী, মোহাম্মদ শেহজাদের পর রশীদ খান এখন ক্রিকেটের ছোট দেশ আফগানিস্তানের বড় তারকা। অপর দু-জনের পরিচিতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দিয়ে, বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি২০। একটি জায়গায় তাদেরও ছাড়িয়ে গেছেন রশীদ। মাত্র ১৯ বছর বয়সে আইপিএল, বিপিএল, সিপিএল হয়ে প্রথম আফগান ক্রিকেটার হিসেবে ঐতিহ্যের অস্ট্রেলিয়ান বিগ ব্যাশ লিগে খেলতে যাচ্ছেন বিরল প্রতিভাধর এ লেগস্পিনার। ২০১৭-২০১৮ মৌসুমের জন্য এ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। রশীদ খান যেন ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’-এর নায়ক চরিত্র, একেবারে দরিন্দ্র এলাকা থেকে শীর্ষ পর্যায়ে উঠে এসেছেন। এখানেই থামতে চান না। দেশের হয়ে বড় টুর্নামেন্ট জিততে চান তিনি। চান টেস্ট ক্রিকেটেও নিজের বোলিং-ঝলক দেখাতে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি এলিট দেশ হিসেবে টেস্টে (দ্বিতী স্তর) নাম লিখিয়েছে নবী-রশীদদের আফগানিস্তান। ‘অর্থ বা তারকা খ্যাতির জন্য জন্য নয়, আমি ক্রিকেট খেলি আমার দেশের জন্য, আফগানিস্তানকে বিশ্ব ক্রিকেটের আরও বড় মঞ্চে নিয়ে যেতে পারলেই আমার ভাল লাগবে। দেশকে বড় কিছু উপহার দিতে চাই। চাই টেস্ট ক্রিকেটেও ভাল বোলিং উপহার দিতে।’ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন রশীদ খান। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে তৃতীয় কম বয়সী অধিনায়ক হিসেবে সম্প্রতি ঘরোয়া শাপগিজার ক্রিকেট লিগ টি২০তে ব্যন্ড-ই-আমির ড্রাগনসকে শিরোপা উপহার দিয়েছেন। টুর্নামেন্ট চলাকালে কাবুলের স্টেডিয়াম এলকায় সন্ত্রাসী হামলা হলে অনেক বিদেশী খেলোয়াড় আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যান। তবে টুর্নামেন্ট বন্ধ থাকেনি। রশীদ বলেন, ‘টুর্নামেন্ট চালিয়ে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। খেলা আসলে সম্প্রতি বন্ধন। আমরা এর মধ্য দিয়ে মানুষকে মানবতার কথা, ভালবাসার কথা বলতে চাই। শান্তির বার্তা দিতে চাই।’ পাকিস্তান সীমান্তের রিফিউজি ক্যাম্পে জন্ম। অথচ বয়স ২০ পূর্ণ হওয়ার আগেই বিশ্ব ক্রিকেটের বড় তারকা হয়ে উঠেছেন রশীদ। শাপগিজা ক্রিকেট লিগে এবার মাত্র ১৮ বছর ৩৫৭ দিন বয়সে ব্যান্ড-ই-আমীর ড্রাগনসকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যা কম বয়সী অধিনায়কের তালিকায় তিন নম্বরে। রশিদের আগে পাকিস্তানের তাইমুর আলী ও শ্রীলঙ্কার দিনেশ চান্দিমাল সবচেয়ে কম বয়সে অধিনায়ক হয়েছিলেন। তাইমুর আলী ১৭ বছর বয়সে আর চান্দিমাল ১৮ বছর ১৫১ দিন বয়সে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেছিলেন। ২০১৭-১৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে খেলবেন এ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের হয়ে। উচ্ছ্বসিত রশীদ বলেন, ‘এ রকম বড় একটা টুর্নামেন্টে সুযোগ পাওয়াটা আমার জন্য খুবই সম্মানের ব্যাপার। আমি আরও বেশি সম্মানিত বোধ করছি এটা ভেবে যে, আমিই আফগানিস্তানের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিগ ব্যাশে খেলতে যাচ্ছি।’ গত বছর অভিষেকেই আইপিএলে দারুণ নৈপুণ্য দেখানোর পর টি২০ লিগ বিগ ব্যাশে সুযোগ পেলেন রশীদ। আইপিএলে বেশ কয়েকজন বিদেশী খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ানোর সুযোগ থাকে। কিন্তু বিগ ব্যাশে নেয়া যায় মাত্র দুজন বিদেশীকে। সেই হিসেবে এ্যাডিলেডে খেলতে পারাটা বেশ দারুণ একটা ব্যাপারই হবে আফগান এই ক্রিকেটারের জন্য। এ্যাডিলেড কোচ ও সাবেক অসি পেসার জেসন গিলেস্পিও তরুণ স্পিনারকে পেয়ে খুশি, ‘টি২০ ক্রিকেটে রশীদ নতুন কিছু নিয়ে এসেছে। তার বোলিংয়ে দারুণ বৈচিত্র্য। সে স্টাম্প-টু-স্টাম্প বল করে যেতে পারে, যেটা খেলা খুবই কঠিন হয়ে যায় ব্যাটসম্যানদের জন্য।’ ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক টি২০তে অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত ২৭টি ম্যাচ খেলে রশীদ নিয়েছেন ৪২টি উইকেট। ২৯ ওয়ানডেতে শিকার ৬৩। আইপিএলের গত মৌসুমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সি গায়েও বাজিমাত করেছিলেন এই লেগস্পিনার। নিয়েছিলেন ১৭টি উইকেট। এরপর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) একটি হ্যাটট্রিকও করেছেন। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ১শ’র ওপরে টি-টোয়েন্টি খেলে প্রায় দেড় শ’ উইকেট শিকার করেছেন রশিদ খান। চলতি বছরের শুরুর দিকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০তে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট শিকার করেন রশিদ। তার ৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট টি২০ ইতিহাসেরই চতুর্থ সেরা বোলিং ফিগার। সত্যি অবিশ্বাস্য। গলি থেকে রাজপথ, স্বপ্নের দৌড়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট। সৌজন্যে আফগান ক্রিকেটের দুই উদীয়মান নক্ষত্র রশীদ খান ও মোহাম্মদ নবি। আইপিএলের দশম (সবশেষ ২০১৭) সংস্করণে সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেছে আফগানিস্তানের এই দুই ক্রিকেটার। গত আইপিএলে ৪ কোটি রুপিতে রাইজিং সানরাইজার্স হায়দরাবাদে নাম লেখান তরুণ রশীদ। একই দলে ৩০ লাখ রুপিতে চুক্তি করেন সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি। রশীদ এবং নবির এই স্বপ্নের উত্থানকে স্বল্প দৈর্ঘের ছবির (চলচ্চিত্র) মধ্যে দিয়ে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চাইছে আফগানিস্তান সরকার। ইতোমধ্যে সিনেমার নামও ঠিক হয়ে গিয়েছে। ‘আফগান ক্রিকেটারস : দ্য রাইজিংস্টারস’- এই নামেই মুক্তি পেতে চলেছে ছবিটি। ইংরাজী-সহ আরও তিনটি ভাষায় মুক্তি পাবে এই ছবি। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই খবর জানানো হয়েছে। আইপিএল চলাকালীনই এই ছবির শূটিং শুরু হয় বলে জানা গেছে। আইপিএলে রশীদ এবং নবির খেলার বিভিন্ন অংশও তুলে ধরা হবে এই ছবিতে। সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন ক্রিকেটারের সাক্ষাতকারও। আইপিএলে আফগান ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দেয়ায় ভারত সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতাও স্বীকার করে আফগান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। আফগান ক্রিকেটের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের আইপিএলে সুযোগ দেয়ায় ভারত সরকারের কাছে আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।’ যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে ক্রিকেটকেই মূল হাতিয়ার হিসাবে অবশ্য এর আগেও ব্যবহার করেছে আফগানিস্তান। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে আফগান ক্রিকেটে পাকিস্তানের প্রভাব ব্যাপক। দেশটির ক্রিকেটাররা শহীদ আফ্রিদি, সরফরাজ আহমেদ হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আর স্বপ্নবাজ মোহাম্মদ শেহজাদ, নবি-রশীদদের হাত ধরে আফগানিস্তান একদিন বৈষয়িক ট্রফি জিতবে, দেশটির ক্রিকেট ভক্তদের চাওয়া এমনটাই।
×