ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির ২০ দফা রোড ব্লক করার জন্য, বাস্তবায়নের জন্য নয় ॥ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

বিএনপির ২০ দফা রোড ব্লক করার জন্য, বাস্তবায়নের জন্য নয় ॥ তথ্যমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বিএনপির ২০ দফা প্রস্তাব নির্বাচনী রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য নয়, রোড ব্লক করার জন্য। তাদের বেশিরভাগ প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত এবং আরপিও পরিপন্থী। মঙ্গলবার সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বিএনপির কয়েকটি প্রস্তাব অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক বলেও মন্তব্য করেন। জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বর্ণনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হাসানুল হক ইনু বলেন, জিয়া সামরিকতন্ত্রের প্রবক্তা, গণতন্ত্রের নয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত রবিবার নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ২০ দফা সুপারিশে মোট ৬৬টি প্রস্তাব তুলে ধরে। তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে একটি সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান, ২০০৮ সালের আগের আসন সীমানায় ভোট, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে ভোটের মাঠে মোতায়েন এবং ইভিএম ব্যবহার না করার কথা বলা হয়েছে সেখানে। বিএনপির প্রস্তাবের সমালোচনা করে জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে নির্বাচনের ছয় মাস আগে থেকে সারাদেশের কাজকর্ম, লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হবে, ভাবটা এমন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে ইসি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে এই সংলাপে পেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাও অত্যন্ত খুশি। দলটি এবার নির্বাচনে অংশ নেবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করছেন। এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সংলাপ থেকে অর্থপূর্ণ কোন ফল না এলেও একে আশার যাত্রা হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলছেন, ইসিতে ২০ দফা প্রস্তাবের মাধ্যমে বিএনপি নির্বাচনী রোডম্যাপ বাস্তবায়নের আলোচনা ধামাচাপা দিয়েছে। তারা বিভ্রান্তির জাল তৈরির চেষ্টা করেছে, আগামী নির্বাচন বানচাল করাই তাদের লক্ষ্য। নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিতে বিএনপির তোলা প্রস্তাবকে চূড়ান্তভাবে চক্রান্তমূলক প্রস্তাব হিসেবে বর্ণনা করেন জাসদ সভাপতি ইনু। তিনি বলেন, এটা সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কিত করার প্রস্তাব। সশস্ত্র বাহিনীর যে কাজ, সেই কাজের বাইরে তাকে ন্যস্ত করার সুগভীর চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয়। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনের লক্ষ্যে স্থির নয়, তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এজন্য তারা নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে কথা বলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টা ঝুলিয়ে রাখতে চাইছে। এজন্য বিভিন্ন সময়ে তারা কথা পাল্টায়। এখনও সেই অবস্থায় তারা আছে। নির্বাচনকালীন সরকারের সময় কেন সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হবে না- সেই ব্যাখ্যা দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ ঘোষণার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নেই, তখন সংসদকে ডাকতে হয়। আর ভোটের সময় সংসদ বহাল থাকলেও এর কোন কাজ নেই, ভূমিকাও নেই। জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বর্ণনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হাসানুল হক ইনু বলেন, জিয়া সামরিকতন্ত্রের প্রবক্তা, গণতন্ত্রের নয়। তিনি রাজাকার-খুনীদের পুনর্বাসন করেছেন। আদালত জিয়ার শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবিধানিক পদ ইতিহাসচর্চা বা রাজনীতিচর্চার জন্য নয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি নির্বাচনকে ব্যাহত করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কোন দলের কোন নেতানেত্রীর গ্রেফতারের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই এবং কেউই আইনের উর্ধে নয়। প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন, বিচারপতিগণ স্বাধীন, বিচার বিভাগ তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। লিখিত বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ নয়, রোডব্লক করার জন্যই ২০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের আওতাবহির্ভূত অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক এসব প্রস্তাবই প্রমাণ করে নির্বাচন বিএনপির আসল উদ্দেশ্য নয়, জলঘোলা করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস। বিএনপি বরাবরের মতোই আবারও নির্দলীয় সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দিয়েছে, সংসদ ভেঙ্গে দিতে বলেছে, যা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের বাইরে। অনির্বাচিত কার দ্বারা সরকার পরিচালনা সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী বলে সর্বোচ্চ আদালত নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করার পরও বার বার একই প্রস্তাব দেয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনের দাবি করে মূলত বিএনপি অতিদরদ দেখিয়ে সশস্ত্রবাহিনীকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন ছিল। কিন্তু নির্বাচনে হেরে গিয়েই সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকার নিন্দা করেছিল। এর আগে ১৯৯৬ সালেও নির্বাচনে হেরে গিয়ে একই কথা বলেছিল তারা। অর্থাৎ সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন থাকা বা না থাকা নয়, হেরে গেলেই বিএনপি বলে- সশস্ত্রবাহিনী ও নির্বাচন নিরপেক্ষ নয়। নির্বাচনকালে আদালতের নির্দেশে ৩০০ আসনের প্রতিটিতে একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চারজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। ফলে সশস্ত্রবাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার কোন প্রয়োজন পড়ে না। সশস্ত্রবাহিনী প্রস্তুত থাকবেন, প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক সহায়তা করবেন। বিএনপির লক্ষ্য জঙ্গী-জামায়াতীদের রক্ষা করা উল্লেখ করে হাসানুল হক ইনু এ সময় বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী ফরমে দলীয় প্রার্থীর স্থলে দলীয় বা জোটের প্রার্থী লেখার জন্য। বিএনপির দাবি মূলত জঙ্গী-রাজাকার-জামায়াতীদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার অপকৌশল।
×