ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ইসির সঙ্গে সংলাপ

সংবিধানের বাইরে এক চুলও ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

সংবিধানের বাইরে এক চুলও ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সংবিধানের বাইরে এক চুলও ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অর্থাৎ বর্তমান সরকারের অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালিত হবে আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই হবেন নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান। আজ বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলের এমন দৃঢ় অবস্থানসহ মোট ১১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেই জন্যও দলের পক্ষ থেকে আরও কিছু প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরবে দলটি। শুধু নির্বাচনের সময়ের সরকারই নয়, আজকের সংলাপে নির্বাচনী আসনে পরিবর্তন না করা, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) মৌলিক পরিবর্তন না আনা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতি চালু এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের ভোটার হওয়ার বিষয়টি সহজতর করার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে, ইসি চাইলে সেনাবাহিনীকে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে ব্যবহার করার কথা থাকবে। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিপক্ষে মত দেবে দলটি। আজ সকাল ১১টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় সম্মেলন কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে যোগ দেবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে এই সংলাপে অংশ নেবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইসির সঙ্গে সংলাপে দলের পক্ষ থেকে তারা ১১ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আজকের সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেবে আওয়ামী লীগ। বলা হবে- বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সরকারপ্রধান থাকবেন। নির্বাচনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান থাকলেও তিনি শুধু রুটিনমাফিক কাজ করবেন। তফসিল ঘোষণা করলেই সব ক্ষমতা ইসির কাছে থাকবে। সকল পর্যায়ের রদবদলের দায়িত্বেও থাকবে নির্বাচন কমিশন। সংবিধানের বাইরে আওয়ামী লীগ যে একচুলও নড়বে না তা স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেয়া হবে নির্বাচন কমিশনকে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠকে জানান, বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এই সরকারই নির্বাচনকালে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এই সরকার রুটিন কাজগুলো করবে। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। তাই আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। সংবিধানের বাইরে যাওয়া মানেই হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা। বিএনপি এটা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করতে চাইছে। ইভিএম নিয়ে আওয়ামী লীগ আগের জোরালো অবস্থানে নেই বলে জানা গেছে। তারা মনে করছে, সারাদেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটকেন্দ্র। আগামী নির্বাচনের আগে সব কেন্দ্রে ইভিএম যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা এবং সেই অনুযায়ী ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করা দুরূহ ব্যাপার। তারপরও আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে প্রস্তাব দেবে। বাকিটা নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে দলীয় প্রস্তাব তৈরির সঙ্গে জড়িত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন যাতে স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেই জন্যও দলের পক্ষ থেকে আরও কিছু প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরা হবে। ইভিএম প্রসঙ্গে তারা বলেন, আওয়ামী লীগ চাচ্ছে একটি ডিজিটাল নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করতে। এরই একটি অংশ হচ্ছে নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুরোপুরি ইভিএম চালু করতে না পারলেও অন্তত কিছু কিছু কেন্দ্রে এর ব্যবহার এবং স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশনের কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে। জানা গেছে, আজকের সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের সহজে ভোটার করার প্রস্তাব তুলে ধরা হবে নির্বাচন কমিশনের কাছে। এ ক্ষেত্রে কেউ দেশে এলে যাতে দ্রুততম সময়ে ভোটার হতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা এবং শান্তি মিশন বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত কেউ আসতে না পারলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিংবা দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের ভোটার করা যায় কিনা, সেই ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেবে দলটি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের বাইরে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী আছেন। তারা কেউ ভোটার হতে চাইলে বিদ্যমান ব্যবস্থায় তিন মাসেও তা হতে পারেন না। এটা তিন দিনের মধ্যে সম্ভব হলে অনেকেই ভোটার হবেন। দূতাবাস বা অন্য কোন উপায়ে এটা করা যেতে পারে। জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে হবে এটাই মূল নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও ভোট দেয়ার অধিকার প্রবাসীদের দেয়া উচিত। আজকের সংলাপে দলের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। এছাড়া ইসির নির্ধারিত এজেন্ডার মধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২, বিদ্যমান ইংরেজী আইনটি বাংলায় রূপান্তর ও এর প্রয়োজনীয় ধারা সংশোধনের ব্যাপারে বর্তমান আরপিওর ৯৪ ধারা অনুযায়ী বাংলায় রূপান্তর করার কথাই তুলে ধরবে দলটি। আগামী নির্বাচনের আগে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ নয়, পুরনো সীমানা অনুযায়ী নির্বাচন চাইবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে দলটির যুক্তি হলো- বর্তমান আইনানুযায়ী আদমশুমারির পর সীমানা নির্ধারণ হয়। যেহেতু ২০১৩ সালে আদমশুমারির ফল ঘোষণা করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে পুরনো সীমানায়ই নির্বাচন চায় ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনকালে নদীভাঙ্গন ও বিশেষ কোন কারণ ছাড়া ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরের ব্যাপারে দলের আপত্তি তুলে ধরতে পারে আওয়ামী লীগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অভীন্ন পোস্টার, প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা, নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট একটি ‘টোকেন মানি’ সরবরাহ, নির্বাচন কমিশনের নিয়োগবিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচন কমিশনের বাজেট স্বাধীনভাবে খরচ করতে দেয়ার প্রস্তাব থাকতে পারে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে। আওয়ামী লীগের অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সময় সিইসি কেএম নুরুল হুদা জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা উল্লেখ করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিরোধিতা করা হতে পারে। বিষয়টি যে মোটেই ঠিক নয় এবং সত্য নয় সে বিষয়টিও সিইসিকে সাফ জানিয়ে দিতে পারেন আওয়ামী লীগ নেতারা। উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ৩১ জুলাই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। এরপর ২৪ আগস্ট থেকে কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এ পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি।
×