ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোফি আনানের সঙ্গে শিরীন শারমিনের বৈঠক

রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানে কার্যকর ভূমিকা চাই

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানে কার্যকর ভূমিকা চাই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় সংসদের স্পীকার ও সিপিএ চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও এ্যাডভাইজরি কমিটি অন রাখাইন স্টেটের চেয়ারম্যান কোফি আনানের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ আহ্বান জানান। সোমবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দফতরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে মঙ্গলবার সংসদ সচিবালয় থেকে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ড. আনান অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ এবং রাখাইন রাজ্যের উপদ্রুত এলাকাগুলোতে জাতিসংঘ ও মানবিক সহায়তা সংস্থাসমূহ এবং গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। এসব পদক্ষেপ আশু বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যে এখন পর্যন্ত অবস্থানরত দুর্গত মানুষের মধ্যে আস্থার মনোভাব তৈরি করা সম্ভব বলে মতপ্রকাশ করেন কোফি আনান। কোফি আনান চলমান পরিস্থিতিতে মানবিক ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের জন্য স্পীকারকে অনুরোধ করেন। কোফি আনান রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অনুপ্রবেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এখন পর্যন্ত সঙ্কট চলমান থাকার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় ড. আনানকে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁর ধারণা ও সুপারিশসমূহ তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি ড. আনানকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণের আলোকে দ্রুত সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের অনুরোধ জানান। ড. আনান চলমান মানবিক বিপর্যয়কালে তাঁর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এদিকে সোমবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ইকোসক চেম্বারে ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট ও বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতা বিষয়ে’ জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরী ত্রাণ বিষয়ক সমন্বয়কারী এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক সদস্য রাষ্ট্রসমূহের জন্য এক ব্রিফিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে মার্ক লোকক কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরেজমিনে পরিদর্শনকালে তাঁর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এসব রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের উদারভাবে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান মার্ক লোকক। উদ্বাস্তু ক্যাম্পসমূহে জাতিসংঘ ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো গৃহীত বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের সংক্ষিপ্তসারও তুলে ধরেন লোকক। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই মানবিক আশ্রয়দানে অনন্য সাহসিকতা ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছেন। অসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।’ তিনি এ সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অমানবিক অবস্থার বর্ণনা দেন। স্পীকার বলেন, ‘আমরা এ সমস্যার জরুরী সমাধান চাই যাতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিরাপদভাবে এবং সম্মানের সঙ্গে তাদের ঘরে ফিরতে পারে এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অর্থপূর্ণ জীবন কাটাতে পারে। এ সঙ্কটের শিকড় মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারেই নিহিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করুন ডেপুটি স্পীকার রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করতে আইপিইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকা- উল্লেখ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে নিঃশর্তভাবে ফিরিয়ে নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান তিনি। মঙ্গলবার রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবার্গে চলমান ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৭তম সম্মেলনে এ সংক্রান্ত সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব আহ্বান জানান বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের এই নেতা। সম্মেলনে তিনি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন।
×