ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মলয় বিকাশ দেবনাথ

মেধাবী শিল্পনির্দেশক ফারদিন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

মেধাবী শিল্পনির্দেশক ফারদিন

মঞ্চ, টেলিভিশন বা সিনেমা যাই হোক একটি পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনার পেছনে থাকে অনেকগুলো ধাপ। এর একটিকে ছাড়া অন্যটি অসম্ভব। লেখক, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও নির্দেশকের পাশাপাশি কারিগরি দিকগুলোও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের দেশে শিল্পের নেপথ্যে যারা তাদের নিপুণ দক্ষতা ও নান্দনিকভাবে একটি প্রযোজনার সেট, লাইট, কস্টিউম, ডিজাইন ও তার ব্যবহার করেন সেভাবে তাদের আমরা উপস্থাপিত করতে পারি না। ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত শিল্পীদের বা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ডিজাইনিংয়ের দিকে নিজেকে প্রস্তুত করার প্রবণতা খুব কমই পরিলক্ষিত হয়। সবাই নির্দেশক কিংবা অভিনেতা-অভিনেত্রী হতে চায়। মানুষের প্রতিভা সবদিকে সমান থাকে না। তাই যার ভেতর ডিজাইনিংয়ের শিল্প সত্তা থাকে সেও বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্ন দিকে নিজেকে নিয়ে যেতে চায়। আজ একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সর্বস্তরে। টেকনোলজির অগ্রসরমান ধারা বইছে সমস্ত শিল্প মাধ্যমে। নতুন প্রজন্ম এই ¯্রােতে গা ভাসাচ্ছে। ডিজাইনিং বা শিল্পনির্দেশনা একটি প্রযোজনাকে কতটুকু প্রভাবিত করতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৈয়দ জামিল আহমেদের ‘রিজওয়ান’ নাটক। আরও বড় পরিসরে বলতে গেলে লন্ডনের ‘দ্য লায়ন কিং’ মঞ্চ প্রযোজনাটি একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত প্রযোজনা। ডিজাইনের গুরুত্ব প্রতিটি দৃশ্যে বিদ্যমান। রিজওয়ান নাটকে ডিজাইনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এ প্রজন্মের মেধাবী ডিজাইনার ফরিদুল ফারদিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ থেকে ¯œাতকোত্তর করার সময়ই আগ্রহ জন্মে ব্যাক স্টেজে কাজ করার। নাট্যকলা বিভাগে পড়ার সুবাদে মঞ্চ ডিজাইনের কোর্স পড়তে হতো ফারদিনের মতে, ‘সৈয়দ জামিল আহমেদের তত্ত্বাবধানে কোর্সটি করার সময়ই এর প্রাথমিক ধারণা ও মূল বিষয়গুলো মাথায় ঢুকে পড়ে।’ মঞ্চের ডিজাইন প্রকৃতপক্ষে অন্য মাধ্যম যেমন টেলিভিশন কিংবা সিনেমা থেকে জটিল। কেননা একটি ফাঁকা মঞ্চে কাহিনীর আবর্তে নানান কিছু প্রতিষ্ঠিত করতে হয় যেমন নদী, গাড়ি-ঘোড়া, ঘর-বাড়ি ও মাঠ ইত্যাদি। সেই সঙ্গে দ্রব্যসামগ্রীও একটি বিশেষ স্থান দখল করে রাখে। অভিনয় ও নির্দেশনার পাশাপাশি ডিজাইনিং যতটা যথাযথ হবে প্রযোজনা হবে তত সমৃদ্ধ। এই উপলব্ধি জন্মেছিল ফারদিনের। নিজেকে প্রস্তুত করার অদম্য আকাক্সক্ষা তাকে আজ একজন সফল ডিজাইনার হিসেবে স্থান করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ‘রূপকার’ নামে একটি ডিজাইন হাউসে যোগদান করেন ভিজুয়ালাইজার হিসেবে। ডিজাইনিংয়ের বহুমাত্রিকতার জ্ঞান তিনি লাভ করেন সেখানকার কিরিটি রঞ্জন বিশ্বাসের কাছ থেকে। মঞ্চে কাঠ, বাঁশ, ককশীট কিংবা বোর্ডের ডিজাইন করতে করতে এক সময় তিনি উপলব্ধি করেন সময়ের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর। সারাবিশ্ব যখন এ্যানিমেশননির্ভর তখন নিজেকেও যেসভাবে প্রস্তুত করা আবশ্যক। নিজ চেষ্টায় আশ্বস্ত করলেন এ্যানিমেশন। এখানেও তিনি সফল। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তানিম শাহরিয়ারের শর্ট ফিল্ম ‘ডিজিটাল কোশ্চেন’-এর এ্যানিমেশনও সম্পাদনা করেছেন ফরিদুল ফারদিন। সব থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই এ্যানিমেশন তার ইউটিউব থেকে শেখা। পরে থ্রিডি ম্যাক্স সফটওয়্যার শিখে নেয় যা তাকে আরও পারদর্শী করে তোলে। এখন তিনি শিল্প নির্দেশনার পাশাপাশি বড় বড় বিল্ডিংয়ের এক্সটেরিওর ও ইন্টেরিয়র করেন। ইতোমধ্যে গুলশান-বনানীর পূজাম-প করে বিশাল সাড়া ফেলে দিয়েছেন। সত্যিই নজরকাড়া ডিজাইন। এ ছাড়া এ বছরই বাণিজ্যমেলায় তার নির্মিত স্টলটি প্রথম পুরস্কার পায়। এ ছাড়া তিনি ডিজাইন করেছেন অনেক ভাস্কর্যের। একুশে টেলিভিশনে প্রোগ্রাম প্রডিউসিংয়ের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার ঝুড়িতে। কাজ করেছেন বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান যেমন আরএফএল, এলজি, বাটারফ্লাই, ব্রিটিশ এ্যামেরিকান টোবাকো কোম্পানিসহ অনেক এনজিওতে। তবে সব থেকে বেশি ভাল লাগে মঞ্চে কাজ করতে। এ যাবতকালীন দেশের মঞ্চের শ্রেষ্ঠ ডিজাইনিং বলা হয় রিজওয়ান নাটককে যেখানে সমস্ত দ্রব্য নক্সা, জান্নাত ও চিঠির দৃশ্যের মেকানিজম এবং রিজওয়ানের ঝুলন্ত লাশের মুভমেন্ট সমস্তটাই এই ফারদিনের মেজিক্যাল ক্যারিশমা। এ ধরনের তারুণ্যের উপস্থিতি আমাদের শিল্পকে সফলতার চরম শিখরে স্থান করে দেবে। শিল্প হবে বিশ্বমানের।
×