ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

‘ফ্রি স্পিচ ওয়ারিয়র’ গুরমেহার কাউর

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

‘ফ্রি স্পিচ ওয়ারিয়র’ গুরমেহার কাউর

গুরমেহার কাউর হচ্ছেন- কারগিল যুদ্ধে নিহত এক ভারতীয় সেনার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে। তার এক মন্তব্যকে ঘিরে উত্তাল হয়েছিল সারা ভারত। গুরমেহারের পক্ষে-বিপক্ষে পুরো ভারত কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এ বিতর্কে সামিল হয়েছেন ক্ষমতাসীন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে ভারতের প্রখ্যাত খেলোয়াড় এমন কি বলিউড অভিনেতা অভিনেত্রীরা পর্যন্ত। এই গুরমেহার কাউর এবারের টাইম ম্যাগাজিনে প্রভাবশালী তারুণ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। তিনি অর্জন করেছেন ‘ফ্রি স্পিচ ওয়ারিয়রের খেতাব। শুরুর কথা বলতে গেলে ফেসবুকে এবিভিপির সমালোচনা করেছিলেন গুরমেহার। বলেছেন, তাদের দেয়া জাতীয় তাবাদের সংজ্ঞা তিনি মানেন না। কিন্তু এরপর থেকেই তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। দিল্লীর রামযশ কলেজে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ছাত্রনেতা উমর খালিদের অনুষ্ঠান বাতিলের পর থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। কলেজ চত্বরে বামপন্থী ছাত্রদের ওপরে হামলায় অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির ছাত্রদের বিরুদ্ধে। এরপর গুরমেহার একটি প্ল্যাকার্ডে লিখে জানান, ‘আমি দিল্লী­বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আমি এবিভিপিকে ভয় করি না। আমি একা নই। ভারতের সমস্ত শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে আছেন।’ ওই প্ল্যাকার্ডের ছবিসহ টুইট করামাত্রই সোশ্যাল মিডিয়ায় গুরমেহারকে নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। এবিভিপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী টুইট পোস্ট করার মধ্যেই গুরমেহারের আরও একটি টুইট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পরের বিতর্ক আগেরটিকেও কয়েকগুণে ছাড়িয়ে যায়। ওই টুইটে কারগিল যুদ্ধে নিহত ক্যাপ্টেন মনদীপ সিংয়ের ২০ বছর বয়সী মেয়ে গুরমেহার কাউর লিখেছিলেন, ‘পাকিস্তানের হাতে নয়, আমার বাবা নিহত হয়েছিলেন যুদ্ধের হাতে’। এরপরই দাবানলের মতো বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে ভারতজুড়ে। গুরমেহারের পক্ষে-বিপক্ষে দু’দল দাঁড়িয়ে যায়, পরের দু’দিন ধরে উভয় দলে যোগ দিয়েছেন ভারতের প্রায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। তীর্ব আলোচনা-সমালোচনার জোয়ারে ভেসে যেতে থাকা গুরমেহারকে ধর্ষণের হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল। আর প্রকাশ্যে বিজেপির ছাত্র শাখা এবিভিপির নিন্দা করার পর থেকেই তাকে এই দুর্ভোগের শিকার হতে হয় তাকে। এর আগে গুরমেহার এক সাক্ষাতকারে বিবিসিকে বলছিলেন, ‘ফোন বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে অত্যন্ত নোংরা ভাষায় আমাকে দেশদ্রোহী বলে গালিগালাজ করা হচ্ছে। আমি কারও কাছে দেশপ্রেমের প্রমাণ দেব না, কিন্তু যারা আমার মতো একজন ভারতীয় নাগরিককে ধর্ষণের হুমকি দেয় তাদের আগে দেশপ্রেমের পরীক্ষা হওয়া দরকার।’
×