ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইয়াবা পাচার!

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইয়াবা পাচার!

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ১৬ অক্টোবর ॥ মাত্র কয়েক ঘণ্টা বা এক রাতের জন্য ১০ হাজার টাকা! অবিশ্বাস্য শোনালেও এমনটি হচ্ছে ইয়াবা পাচারকারীদের পারিশ্রমিক। বিনিময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেটের ভেতর ইয়াবা ঢুকিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করেন তারা। এরপর পায়খানার রাস্তা দিয়ে সেগুলো বের করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেন। আর এজন্য তারা পারিশ্রমিক পান পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা। এসব কাজে ব্যবহার করা হয় নারী ও কিশোরদের। বিশেষ করে উঠতি বয়সের কিশোররা না বুঝেই রাতারাতি কিছু টাকা উপার্জনের আশায় এমন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে এ রকম দুই কিশোরকে আটক করা হয়েছে। এরা কক্সবাজার থেকে বিশেষ কায়দায় ইয়াবার ‘পোঁটলা’ বানিয়ে সেগুলো পেটের ভেতর নিয়ে কেরানীগঞ্জে এক মাদক বিক্রেতার কাছে এনেছিল পৌঁছে দেয়ার জন্য। কিন্তু বিধিবাম, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছে দুজনই। তাদের পেটের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৮০৫ পিস ইয়াবা। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বড়ডেল গ্রামের নজির আহমেদের ছেলে রফিক (১৪) ও একই এলাকার মোঃ বিন কাশেমের ছেলে জালালউদ্দিন। ঢাকা জেলা (দক্ষিণ) ডিবির এসআই মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম জানান, রফিক এবং জালালউদ্দিনকে আটক করার পর দেহ তল্লাশি করা হয়। কিন্তু তাদের কাছে কোন মাদক পাওয়া যায়নি। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা স্বীকার করে পেটের ভেতর বিশেষ কায়দায় ইয়াবা রাখা আছে। পরে পায়খানার সঙ্গে সেগুলো পেটের ভেতর থেকে বের করে আনে। রফিকের পেটের ভেতর ৪০০ এবং জালালউদ্দিনের পেটের ভেতর ৪০৫ ইয়াবা পাওয়া গেছে। ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা জানান, নগদ টাকার লোভে উঠতি বয়সের কিশোর ও তরুণরা এ কাজে ঝুঁকছে। প্রথমে তারা পলিথিনের মধ্যে ইয়াবা ভরে এর ওপর দুই দফা স্কচটেপ পেঁচিয়ে ছোট ছোট পোঁটলা বানায়। প্রতি পোঁটলায় ৩০ থেকে ৩৫ পিস ইয়াবা থাকে। পরে পাকা কলার সঙ্গে মেশিয়ে সেগুলো গিলে খায়। এরপর রওনা দেয় নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। ওই সময়টুকু সাধারণত তারা কিছু খায় না। মাদক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছার পর সুবিধাজনক স্থানে বসে পায়খানার সঙ্গে পেট থেকে বের করে আনে ইয়াবার পোঁটলা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতেই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে ইয়ারা পাচার করছে। তিনি আরও জানান, প্রতি ট্রিপে একজন পাচারকারী বা বহনকারী এক হাজার পিস পর্যন্ত ইয়াবা পেটের ভেতর আনতে পারে। আর এজন্য পিসপ্রতি ১০ টাকা করে কমিশন পায় তারা। এ বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের সার্জারি বহিঃবিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ হারিছ উদ্দিন বলেন, এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এটা যারা করছে তাদের প্রচ- স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অকেজো হয়ে যেতে পারে কিডনি, লিভার। তাছাড়া মলদ্বারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
×