ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলকোর্টকে বিবৃতির পেক্ষাপট জানালেন ওয়াহ্হাব মিঞা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

ফুলকোর্টকে বিবৃতির পেক্ষাপট জানালেন ওয়াহ্হাব মিঞা

বিকাশ দত্ত ॥ ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ছুটি নেয়া, বিদেশ যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে ছুড়ে দেয়া চিঠি ও বিবৃতির ভিত্তিতেই সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। তিনি বলেন, বিচারপতি এস কে সিনহা অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের কাছে ওই চিঠি না দিলে আজকের এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তার ওই বক্তব্যের কারণে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে এ বিবৃতির প্রয়োজন ছিল। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির নৈতিক স্খলন, অর্থ পাচারসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হাইকোর্টের বিচারপতিদের অবহিত করা হয়েছে। সোমবার উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে সুপ্রীমকোর্টের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্্হাব মিঞা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। এর আগে গত ২ অক্টোবর রাতে দায়িত্ব পেয়ে পরদিন ৩ অক্টোবর প্রথম কার্যদিবসেই ফুলকোর্ট সভা করেন তিনি। শনিবার ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অস্ট্রেলিয়া যাত্রার পরদিনই তার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, অর্থপাচারসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনে সুপ্রীমকোর্ট। রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। আনীত অভিযোগগুলোর মধ্যে আর্থিক অনিয়মসহ দুর্নীতির কথাও বলা হয়েছে। আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিÑবিচারপতি আবদুল ওয়াহ্্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোঃ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, তার এসব অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। প্রধান বিচারপতি এ সময় পদত্যাগের কথা বললেও তিনি পদত্যাগ না করে অস্ট্রেলিয়া চলে যান। যাবার সময় প্রধান বিচারপতি এক চিরকুটে তিনি সুস্থ আছেন আবার দেশে ফিরে আসবেন। এ সমস্ত বিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গনে বিএনপিসহ জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা বিভিন্ন কর্মসূচী প্রদান করে। এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্্হাব মিঞা ফুলকোর্ট সভায় হাইকোর্টের বিচারপতিদের বিষয়টি অবহিত করেন। রবিবার আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বিচারপতির বিষয়ে বিষদ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না এই ১১টি এলিগেশনের ব্যাপারে সুরাহা না হবে তারা (আপীল বিভাগের বিচারপতি) হয়ত তার (প্রধান বিচারপতি) সঙ্গে বসবেন না। তাহলে তিনি কী করে এখানে এসে বসবেন। আপীল বিভাগে একক বেঞ্চের কোন নিয়ম আছে বলে আমার জানা নেই। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের হাতে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন শনিবার বিবৃতি দেয় সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ ১১টি অভিযোগ ও সঙ্গে আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি বিচার কাজে না বসার কারণ উল্লেখ করা হয়। এর আগে ১১ অক্টোবর সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসনে শীঘ্রই রদবদল হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এর পর রবিবার সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ ১০ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। ১৩ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া যাবার প্রাক্কালে এক চিরকুটে বলেন, প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোন রেওয়াজ নেই। তিনি শুধু রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে। এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের সম্পর্কে আরও অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতি যে কাজ করতে পারেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ঠিক সেই একই কাজ করতে পারেন। সেটাই সংবিধানে (৯৭ অনুচ্ছেদে) বলা আছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমার বলতে হয়, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা আইনসঙ্গত নয়। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে প্রধান বিচারপতি তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমতে অন্য কোন ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতির স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপীল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন। সেই ক্ষমতা বলেই দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা এই রদবদলে সায় দিয়েছেন।
×