ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গঙ্গা-যমুনা উৎসবের মাধ্যমে বাঙালীর ঐক্য প্রকাশিত হচ্ছে ॥ রোকেয়া রায়

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

গঙ্গা-যমুনা উৎসবের মাধ্যমে বাঙালীর ঐক্য প্রকাশিত হচ্ছে ॥ রোকেয়া রায়

পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনয় ও আবৃত্তিশিল্পী রোকেয়া রায়। ‘অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে, নির্মল করো উজ্জ্বল করো সুন্দর করো হে’ রবীন্দ্রনাথের এই গানের চরণ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে শুরু করেন। দীর্ঘদিন মঞ্চাভিনয় ও আবৃত্তির মাধ্যমে দর্শক শ্রোতার মন জয় করেছেন। ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত গঙ্গা যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবে শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার অনীক প্রযোজিত ‘শকুন্তলা’ নাটকের এক বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। মঞ্চায়নের পূর্বে বাংলা মঞ্চ নাটক ও আবৃত্তিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে গুণী এই শিল্পীর সঙ্গে কথা হয়। আপনার দৃষ্টিতে গঙ্গা যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব। রোকেয়া রায় : আমার দৃষ্টি বলতে একটিই। একটা দেশই ছিল। এখনও আমরা মনে-প্রাণে এক। ভারত বর্ষে যেমন গঙ্গা ও যমুনা বাংলাদেশেও তেমন। আমার মনে হয়েছে যে, গঙ্গা- যমুনা উৎসবের মাধ্যমে বাঙালী জাতির যে ঐক্য তা কোথাও যেন প্রকাশিত। ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন চিন্তা করে, আমরা বাঙালী হিসেবে কিভাবে পৃথিবীতে নিজেদের তুলে ধরতে পারি। ‘শকুন্তলা’ নাটকে আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাই। রোকেয়া রায় : এ নাটকটি হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী যে এফেক্টগুলো রয়ে গেছে, মূলত এটা নিয়েই এ নাটক। এ নাটকে আমার চরিত্রের নাম হচ্ছে মুক্তি। তার জন্ম মুক্তিযুদ্ধের সময়। তার বাবাকে সে জানে না, কারণ মুক্তিযুদ্ধে যারা ভিকটিম হয়েছিল তাদের কারও ঔরস থেকেই মুক্তির জন্ম হয়েছে। সুতরাং এই জন্মটা সে কিভাবে পরবর্তী ক্ষেত্রে একসেপ্ট করছে বা তার বেঁচে থাকা সবটাই। তার মা কে সে জানে না, জানানো হয়নি। তার বাবাকে জানার কোন সুযোগই নেই। এই রকম একটা প্রজন্ম জন্মেছে যেখানে সেই জায়গা থেকে এই নাটকটি। অনিকেতের ১৬তম প্রযোজনা এ নাটকটি লেখা ও নির্দেশনার কাজ করেছেন অমলেশ চক্রবর্তী। কোন্ দিকে যাচ্ছে বাংলা মঞ্চনাটক? রোকেয়া রায় : আমি মনে করি খুব ভাল দিকেই যাচ্ছে। এ কারণে বলছি যে, মঞ্চনাটকে নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা এসেছে এবং আসছে, আমি বলি ভাষার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রডাকশন যেভাবে প্রেজেন্টেশন করছে তাতে কোথাও যেন আমরা আধুনিক জায়গায় যেতে পারছি। যার জন্যে কিন্তু আজকের প্রজন্ম ইন্টারেস্টেড হচ্ছে। নাটকে দর্শক সঙ্কট সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি? রোকেয়া রায় : না, আমি সেটা মনে করি না। দর্শক সঙ্কট যদি কখনও হয়েও থাকে সেটা দর্শকের দোষ নয়, দোষ হচ্ছে আমরা যারা কাজ করছি তাদের। যারা আমরা এই প্রযোজনাগুলো করছি তাদের। কারণ দর্শক হচ্ছে নিরপেক্ষ। তিনি আসবেন তখনি, আমি যখন তাকে ভাল কিছু দিতে পারব। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি, যে দর্শকের কোন সঙ্কট নেই। দর্শক তৈরি করা আমাদের কাজ, যেটা আমদের করতে হবে। আবৃত্তি ও অভিনয়ের বিষয়টাকে কিভাবে দেখেন? রোকেয়া রায় : আসলে আবৃত্তি ও অভিনয়ের মধ্যে সুক্ষ্ম তফাৎ রয়েছে। আমি যদি স্টেজে কখনও কোন কবিতাকে নাটকের মতো করে করবার চেষ্টা করি, দর্শক সেটাকে নেবে না। কারণ সেটা তখন মনে হবে কবিতা হয়নি। আবার যদি স্টেজে উঠে কোন ডায়লগকে কবিতার মতো করে বলার চেষ্টা করি তাহলে কিন্তু আমার কমতি থেকে যাবে যা দর্শক নেবেন না। আমি মনে করি আবৃত্তি এবং নাটক পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠতে পারে, তার সঠিক ব্যবহারের জন্যে। যদি কোন শিল্পী সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন তার সুক্ষ্মতাটা তাহলে কিন্তু এর পারস্পরিক একটা ভাল দিক খুঁজে পাব। মঞ্চনাটককে এগিয়ে নিতে করণীয় কি? রোকেয়া রায় : উদাহরণ হিসেবে যদি হিন্দী সিনেমার কথা বলি তাহলে দেখব, ষাট, সত্তর ও আশির দশকের ছবির চেয়ে এখনকার ছবির গুণগত মান অনেক উন্নত। এখন গল্পগুলো যেভাবে প্রেজেন্টেশন হচ্ছে তাতে কিন্তু একটা এক লাইনের গল্প সম্পূর্ণ ছবিতে পরিণত হচ্ছে। এই জায়গা থেকে মনে হয়, এগুলো এগুচ্ছে। আমি বলছি বিষয়গুলো এত সুন্দর তাতে মানসিক যে টানাপোড়েন, দর্শকের সঙ্গে তাদের যে ইন্টারেক এত সুন্দর হচ্ছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। -গৌতম পান্ডে
×