ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াবার চালান ঠেকাতে গুলি চালানোর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

ইয়াবার চালান ঠেকাতে গুলি চালানোর নির্দেশ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ইয়াবার চালান ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনে গুলি চালানোর অলিখিত নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সতর্কতার সঙ্গে এমন নির্দেশ পালনের কথা বলা হয়েছে বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পাশাপাশি মাদক নির্মূলে দেশের ভেতরেও কঠোর অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইয়াবা ও রোহিঙ্গা সমস্যা ছাড়াও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলতি মাসেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিবি মহাপরিচালক, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে যাচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে। একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, জাতিগত দাঙ্গাসহ নানা নির্যাতনের কারণে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে বসবাস করছেন। সম্প্রতি দেশটিতে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় প্রায় শতভাগ রোহিঙ্গাই পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। সরকারও তাদের নিতান্তই মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড স্পেশাল এ্যাফেয়ার্সের সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই বাংলাদেশে অবস্থান করায় ইয়াবার চোরাচালান আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এমন সুযোগে দেশে ইয়াবার পাচার ঠেকাতে সরকারের তরফ থেকে কৌশলী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইয়াবা চোরাচালান বন্ধে প্রয়োজনে গুলি চালানোর অলিখিত নির্দেশ রয়েছে। ইতোমধ্যেই নাফ নদীর যেসব পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা পাচার হয়, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত নাফ নদীর ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে ইয়াবা চোরাচালান হয়। এসব জায়গা দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন বৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের চুক্তি নেই। এজন্য এসব জায়গায় বিজিবি ও কোস্টগার্ড টহল জোরদার করেছে। আর ডাঙ্গায় পুলিশ ও র‌্যাবসহ গোয়েন্দারা সাঁড়াশি অভিযান এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। এজন্য ইয়াবা আর আগের মতো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারছে না। এই কর্মকর্তা আরও বলছেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের এদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশে কার কাছে যাবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত ফিরিস্তি সংগ্রহ করার আগাম নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মূলত ভবিষ্যতে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের অজুহাতে কোন মিয়ানমারের নাগরিক যাতে ইয়াবাসহ প্রবেশ করতে না পারে এজন্যই এমন কড়াকড়ির কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে কোন রোহিঙ্গা শরণার্থী অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তাদের শনাক্ত করা ছাড়াও নানা কারণে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত করা হচ্ছে। শরণার্থী হিসেবে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী আত্মীয়-স্বজনদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, মিয়ানমারে মানবতা বিরোধী অপরাধ চলমান থাকায় বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এদেশে আর ইয়াবা প্রবেশ করতে না পারে, এজন্য আগাম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধসহ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে তিনিসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার যাচ্ছে। মিয়ানমার সরকারের কাছে ইয়াবা চোরাচালান বন্ধে সহযোগিতা চাওয়া হবে। কারণ তাদের সহযোগিতা ছাড়া ইয়াবা পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা মিয়ানমার যাচ্ছেন। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মিয়ানমার সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু, ইয়াবা পাচার, সীমানা আইন মেনে চলা, অবৈধভাবে অন্যদেশের জলসীমার মধ্যে প্রবেশ করে মৎস্য আহরণ, অবৈধভাবে মানবপাচারের রুট হিসেবে সীমান্ত ব্যবহারসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধ করতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে ইয়াবা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আলোচনা করেন। তারই প্রেক্ষিতে ইয়াবার আগ্রাসন ঠেকাতে স্থল ও জলসীমান্তে বিজিবি এবং কোস্টগার্ডকে এবং দেশের ভেতরে মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
×