ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নৌকাডুবিতে আরও ১৩ রোহিঙ্গার প্রাণহানি

আসিয়ানের কার্যকর ভূমিকা চায় মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

আসিয়ানের কার্যকর ভূমিকা চায় মালয়েশিয়া

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিয়ে উপায় ছিল না বাংলাদেশের। সরকারের মানবিক এ আচরণ প্রশংসিত হয়েছে জাতিসংঘসহ সারাবিশ্বে। কিন্তু এর জন্য বাংলাদেশকে কতকাল মূল্য দিতে হয় তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার তাদের ফেরাতে রাজি হলেও কী পরিমাণ রোহিঙ্গা শেষ পর্যন্ত নিজভূমে ফিরে যাবে সেই অনিশ্চয়তাও রয়েছে। একদা হালকা বসতির উখিয়া-টেকনাফে এখন জনসংখ্যার বাড়তি চাপ এবং আবাসন ও স্যানিটেশনে পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আসছে মাদকসহ নানা নিষিদ্ধ পণ্য। দিন যতই গড়াচ্ছে জীবিকার প্রয়োজনে তারা ক্রমেই নড়েচড়ে উঠছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে স্থানীয় জনজীবনে। রোহিঙ্গারা দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে কি না তা নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠা স্থানীয় পর্যায়ে। মিয়ানমার থেকে এখনও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। স্বদেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ সঙ্গে করে নিয়ে আসছে ইয়াবা। এ কারণে সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা প্রতিরোধে নজরদারি বাড়িয়েছে প্রশাসন। ওই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে থাকাকালে ইয়াবার কারবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল তারা আসার সময় হাতের কাছে থাকা ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ করার সময় মানবিক বিবেচনায় তাদের তল্লাশি করা হচ্ছে না। এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে ইয়াবার কারবারি রোহিঙ্গারা। তবে পৃথকভাবে ইয়াবার চালান নিয়ে দেশে প্রবেশ করার সময় এ পর্যন্ত অন্তত ৩০টি চালান জব্দ ও ১২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্টগার্ড । আসিয়ানের কার্যকর ভূমিকা চায় মালয়েশিয়া মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর কার্যকর ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদী। বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার এ মন্ত্রী সোমবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো চাপ দিলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব। তিনি নতুন করে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী জাহিদ হামিদী রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত গণহত্যা এবং নির্যাতনে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এ নির্যাতন বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি বলেন, নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চাপ পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। কিন্তু বাংলাদেশ একা নয়, মালয়েশিয়াও বাংলাদেশ সরকারের পাশে রয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মালয়েশিয়ার মানব উন্নয়ন মন্ত্রী রিচার্ড রিওদ এবং স্থানীয় পদস্থ কর্মকর্তারা। একই দিন বিকেলে কক্সবাজারে আসেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক উইলিয়াম ল্যাসি সুইং। তিনিও সরেজমিনে রোহিঙ্গাদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। সোমবার সকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসেন মালয়েশিয়ার এই মন্ত্রী। কক্সবাজার বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) কামরুল আহসান। নৌকাডুবিতে নিহত আরও ১৩ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আসার পথে নৌকাডুবিতে লাশ হলো আরও ১৩ রোহিঙ্গা। সোমবার ভোরে টেকনাফ উপজেলার শাহপরীরদ্বীপের ডাঙ্গাপাড়া পয়েন্টে ঘটে এ দুর্ঘটনা। রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি নাফনদ পার হয়ে এ পারে আসছিল। অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও কোস্টগার্ড। নিবন্ধিত প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। শুরুতে যে গতিতে চলছিল তাতে নিবন্ধন শেষ হতে বছর গড়িয়ে যাবে মনে করা হলেও এখন গতি বেড়েছে। রবিবার পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৬২ জন। দিনে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে নিবন্ধন করা সম্ভব হচ্ছে। সে হিসাবে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ২ লাখের কাছাকাছি। টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য ফের চালু একমাস বিশ দিন বন্ধ থাকার পর টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য ফের চালু হয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় মংডু থেকে ২০ মেট্রিক টন চাল নিয়ে একটি ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে এসেছে। গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে সেপ্টেম্বরে টেকনাফ স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে আকিয়াবের সঙ্গে কিছু কিছু পণ্যের আমদানি বাণিজ্য চালু ছিল। মংডু থেকে আসা চালের আমদানিকারক মেসার্স জিন্নাহ এ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী শওকত আলী জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়ায় ২০ মেট্রিক টন চালের প্রথম চালানটি টেকনাফ বন্দরে ভিড়েছে। সোমবার ওসব মাল খালাস করা হয়েছে।
×