ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিইসির পদত্যাগ চেয়ে সংলাপ বয়কট কাদের সিদ্দিকীর

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

সিইসির পদত্যাগ চেয়ে সংলাপ বয়কট কাদের সিদ্দিকীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে অভিহিত করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ চেয়েছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। একই সঙ্গে তিনি সিইসির এই বক্তব্যের প্রতিবাদে ইসির সংলাপ বয়কট করেন। সোমবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে বের হয়ে সিইসির পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। এর আগে তিনি দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে ইসির সংলাপে যোগ দেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল। প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক শেষে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন এ কথা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলতে পারেন না। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে থাকলেও কেউ না কেউ বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তিনি বলেন, সিইসির এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই। অন্য কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা না করে এককভাবে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন সিইসি। গত রবিবার নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয় দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। বেলা ১১টায় ইসির সংলাপে শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি সংলাপে অংশ নেয়ায় বিএনপি নেতাদের ধন্যবাদ দেয়ার পাশাপাশি দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেন। তার বক্তব্যে তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন ভূমিকা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিএনপির অবদানের কথাও উল্লেখ করেন। ইসির সঙ্গে সংলাপের পর বিএনপি নেতারা ইসির বৈঠককে সৌহার্দপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। এমনকি আগামী নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সংলাপে শেষে কাদের সিদ্দিকী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে উল্লেখ করায় এর ব্যাখ্যা দাবি করেন। এ সময় তিনি সিইসির উদ্দেশে বলেন এই কথা বলায় আপনি নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। এ সময় তিনি সিইসিকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে পদত্যাগের আহ্বান জনান। একই সঙ্গে তিনি সংলাপ বয়কট করে বেরিয়ে আসেন। সংলাপ শেষে বের হয়ে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, তারা আড়াই ঘণ্টা সংলাপ করার পর এই বক্তব্যের প্রতিবাদে সংলাপ বয়কট করেছি। তিনি বলেন, সিইসি এ বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তাদের বলেছেন, বিএনপি সংলাপে তাদের ভাল কাজগুলো তিনি বলার চেষ্টা করেছেন। কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত ৪০ দলকে সংলাপে আহ্বান করেছে, তাদের সঙ্গে নির্বাচন সম্পর্কে মতবিনিময় করার জন্য। এটা অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। কিন্তু সংলাপে আমরা আমাদের বক্তব্য অব্যাহত রাখতে পারিনি। আলোচনা বয়কট করে চলে এসেছি। বয়কট করেছি এই জন্য যে, গতকাল সিইসি টোটাল কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে নয়, তিনি এককভাবে বলেছেন যে, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। তার (সিইসি) এই বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত নই। সিইসি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। তিনি এ কথা বলতে পারেন না যে, জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন আর শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। তিনি অত্যন্ত বেহিসেবি কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বিএনপি সঙ্গে সিইসির আলোচন অত্যন্ত সৌহার্দ পরিবেশেই হয়েছে। তাই আমরাও এ বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী ছিলাম। ইসির সঙ্গে আমাদের আলোচনা ভাল হয়েছে। তারপরও আলোচনা বয়কট করতে হয়েছে। সিইসির বক্তব্যের কারণে তার পদত্যাগ চাইতে হয়েছে। ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে সোমবার সকালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। দলের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, সেনা মোতায়েন করাসহ ১৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এছাড়া বিকেলে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে ইসি। দলটির সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের দিলীপ বড়ুয়া বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় সংসদ বিলুপ্তির করার কোন প্রয়োজন নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও বিদ্যমান সংসদীয় আসনেই একাদশ সংসদের ভোট, সেনা না মোতায়েন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও জামায়াতের প্রতিনিধিরা যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে বিধান প্রণয়ন, ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে লালন-পৃষ্ঠপোষকতা করে এমন দলের নিবন্ধন বাতিল, ইভিএম চালু, ইসির নিজস্ব জনবল নিয়োগ, স্বাধীন ইসি গঠন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার, না ভোট চালু, প্রচারে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ, অনলাইনে মনোনয়ন ও নিবন্ধিত দলকে রাষ্ট্রীয় অনুদান প্রভৃতি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
×