ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুগদার খালে নিখোঁজ শিশু হৃদয় ৩১ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

মুগদার খালে নিখোঁজ শিশু হৃদয় ৩১ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নর্দমায় পড়ে নিখোঁজ তিন বছরের শিশু হৃদয় উদ্ধার হয়নি ৩১ ঘণ্টায়ও। খালের দুই পাড়ে শত শত মানুষ ভিড় করেছে। হৃদয়ের পিতা-মাতা, বোন, আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীদের আহাজারিতে সেখানকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে আছে। সবার মুখে মুখে ফিরছে হৃদয়ের করুণ পরিণতির কথা। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও র‌্যাব শিশুটিকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, খালটির ওপর তারা দীর্ঘদিন ধরেই একটি ছোট সেতুর আবেদন জানিয়ে আসছেন প্রশাসনের কাছে। একটি সেতু তৈরি করে দিলে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারত বলে তাদের দাবি। আর যেন কোন শিশু এভাবে নিখোঁজ না হয়, এজন্য দ্রুত খালটির ওপর একটি সেতু যেন নির্মাণ করা হয়। রবিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে মুগদার মদিনাবাগ লাগোয়া খালের ওপর দিয়ে যাওয়া বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছিল শিশু হৃদয়। স্থানীয়রা জানান, পা পিছলে সাঁকো থেকে পড়ে যায়। পড়ার পরপরই হৃদয়ের চিৎকারে সেখানে লোকজন জড়ো হয়। লোকজন জড়ো হয়ে খালে নামতে নামতেই আস্তে আস্তে হৃদয় ময়লার নিচে তলিয়ে যেতে থাকে। খালটিতে প্রচুর ময়লা জমে আছে। আর ময়লার নিচে প্রচ- গতিতে পানি বয়ে যাচ্ছে। নিমিষেই হৃদয় ময়লার নিচে তলিয়ে যায়। মুগদা থানার ওসি এনামুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, খালের পানির উপররিভাগে প্রচ- ময়লা আর ময়লার নিচের পানিতে স্রোত থাকায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। হৃদয়কে উদ্ধারে ইতোমধ্যেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যেই জনবল নিয়োগ দিয়েছে। তারা খালের উপরিভাগে থাকা ময়লা কেটে পরিষ্কার করছেন। এরপর সেখানে তল্লাশি অভিযান চলছে। তবে সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত হৃদয়ের হদিস মেলেনি। জানা গেছে, হৃদয়ের পিতার নাম কালাম আর মা রোজি বেগম। পিতা-মাতা পুরনো জিনিসপত্র কুড়িয়ে ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করেন। এটিই তাদের পেশা। তাদের সংসারে এক মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি নিখোঁজ হৃদয়ের বড়। বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার সোনাপুর গ্রামে। তারা খালপারের একটি টিনের ঘরে মাসিক প্রায় হাজার টাকা ভাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে ছেলেমেয়েসহ বসবাস করে আসছেন। খালের দুই পাড়ে জড়ো হয়েছে শত শত মানুষ। নিখোঁজ হৃদয়ের পিতা-মাতা, বোন আর আত্মীয়স্বজনসহ আশপাশের বাসিন্দাদের আহাজারিতে সেখানে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের ভিড় সামলাতে কাজ করছেন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ঘটনা জানার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল কাজ করছে। ডুবুরি দলে পাঁচজন দক্ষ ডুবুরি রয়েছেন। তারা নিরলসভাবে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। তাদের পুলিশ ও র‌্যাব সহায়তা করছে। তবে সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ শিশুটির সন্ধান মেলেনি। রাতেও অভিযান চলবে। অভিযান কখন শেষ হবে তা নিশ্চিত নয়। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হওয়া এবং না থাকার কারণে রাজধানীর শাহজাহানপুর বালুরমাঠ সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনিতে ওয়াসার পরিত্যক্ত পানির পাম্পে পড়ে চার বছর বয়সী শিশু জিহাদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিল। প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর শিশু জিহাদকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করা হয়। আর গভীর নলকূপ বসানোর কাজ পাওয়া এসআর হাউসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। উচ্চ আদালত শিশু জিহাদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়। এমন ঘটনার পর ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর কদমতলী থানার পালপাড়ায় ঢাকনা না থাকায় খেলতে গিয়ে ওয়াসার স্যুয়ারেজ পাইপে পড়ে যায় পাঁচ বছর বয়সী শিশু নিরব। চার ঘণ্টার টানা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা নিরবের লাশ ঘটনাস্থল থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার ভাটিতে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার করেন। এছাড়া গত ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর পল্লবীতে মিরপুর-১১ নম্বরের রূপনগর থানার চলন্তিকা মোড়ের ৭ নম্বর সেকশনের ম্যানহোলে পড়ে যায় এক যুবক। দুদিন পর ওই যুবকের লাশ উদ্ধার হয়।
×