ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মালদ্বীপে শতাধিক অবৈধ বাংলাদেশী আটক

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

মালদ্বীপে শতাধিক অবৈধ বাংলাদেশী আটক

ফিরোজ মান্না ॥ বৈধ কাগজপত্র না থাকায় গত দুই দিনে বাংলাদেশী এক শ’ জনের বেশি কর্মীকে আটক করেছে মালদ্বীপ পুলিশ। দেশটিতে গত কয়েক দিন ধরে অবৈধ প্রবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের অভিযানে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের কর্মী রয়েছে। তারাও নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে বাংলাদেশের ৬০ হাজার বাংলাদেশী কাজ করছেন। দেশের জন্য বাজারটি অনেক ভাল। তাই এ বাজারে কোন অস্থিরতা যাতে না হয় সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মালদ্বীপ থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে দেশটির রাজধানী মালের জিকরা মসজিদের রাস্তায় এ বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এরপর অভিযানের এলাকা বাড়িয়ে পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন দেশের কয়েক শ’ নাগরিককে আটক করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের এক শ’ জনের বেশি কর্মী রয়েছে। আটক কর্মীদের ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। যাদের ন্যূনতম বৈধতা আছে তাদের বিষয়ে বাংলাদেশের অনুরোধ রক্ষা করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তবে যাদের একেবারেই কোন বৈধতা নেই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। মালদ্বীপে বৈধ কর্মীর চেয়ে অবৈধ কর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ মাঝেমধ্যেই বিশেষ অভিযান চালিয়ে অবৈধদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। মালদ্বীপের বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ করা হয়েছে, দেশটিতে কোন অবৈধ কর্মী রাখা হবে না। মালদ্বীপ থেকে চাঁদপুরের মোতালেব নামের একজন টেলিফোনে জানান, পুলিশ গত কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে। তারা বৈধ অবৈধ যাকেই পাচ্ছে-তাকেই আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। পরে কর্মীদের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখছে। যাদের ন্যূনতম বৈধতা রয়েছে তাদের ছেড়ে দিচ্ছে। যাদের একেবারেই কোন কাগজপত্র নেই তাদের আটক রাখছে। বাংলাদেশ থেকে এক শ্রেণীর জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে মালদ্বীপ পাঠিয়ে দিচ্ছে। ট্যুরিস্ট হিসাবে এখানে এসে নানা কাজে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। গত দুই বছরে এ সংখ্যা বিপুল হারে বেড়েছে। যারা বৈধভাবে এদেশে এসেছে তারা এখন অবৈধদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম হয়ে গেছে। এতে করে বৈধ কর্মীদের মাঝেমধ্যে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এটা বন্ধ না করতে পারলে এখানে বৈধ কর্মীরা নানা অসুবিধায় পড়বেন। মালদ্বীপে বিভিন্ন দেশের প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার অভিবাসী কর্মী কাজ করছেন। এর মধ্যে ৬০ হাজার কর্মী রয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের পরেই ভারতীয় কর্মীদের স্থান। বাংলাদেশী কর্মীরা মাছ ধরা, নির্মাণ ও পর্যটন খাতে কাজ করছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মালদ্বীপের বাজারটি আগে বেশ শান্তই ছিল। এখানে বৈধভাবেই অনেক কর্মী গেছেন। হঠাৎ করে কিছু অসাধু জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বাজারটিকে ঘোলা করে চলেছে। প্রতিদিন দেশটিতে ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে কর্মী পাঠিয়ে বাজারটি অস্থির করে তুলেছে। মালদ্বীপে একজন কর্মী পাঠাতে তারা ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা নিচ্ছে। এদের অতি লোভের কারণে বাজারটি ঠিক রাখা আমাদের জন্য মুস্কিল হয়ে পড়বে। তবে চেষ্টা চলছে মালদ্বীপের বাজারটি যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে, কোন কোন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মালদ্বীপে কর্মী পাঠাচ্ছে। তাদের একটি তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাদের কারণে বাজার নষ্ট হচ্ছে-তাদের লাইসেন্স স্থগিত করা হতে পারে। দেশটির আদালত যৌন কর্মী পাচারের দায়ে তিন বাংলাদেশীকে ১০ বছর করে কারাদ- দিয়েছে। ট্যুরিস্ট ভিসায় কর্মী পাঠানোও এক ধরনের মানবপাচার হিসাবে বিবেচনা করে মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষ। দেশটির আইনে মানব পাচার বড় ধরনের অপরাধ। আমাদের দেশেও মানবপাচার বড় ধরনের অপরাধ। যারা এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের আইনের আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
×