ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে স্থায়ী ক্যাম্পাস হচ্ছে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

কেরানীগঞ্জে স্থায়ী ক্যাম্পাস হচ্ছে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের

আনোয়ার রোজেন ॥ অনুমোদন পেতে যাচ্ছে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প প্রস্তাব। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) আজকের সভায় উত্থাপন হতে পারে প্রকল্পটি। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরো অর্থই সৌদি সরকারের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়ার কথা রয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার ঘাটাচর ও মধ্যচরে ২০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় রেখে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হবে। মাদ্রাসা শিক্ষায় অধিক দক্ষ ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল সৃষ্টি হবে। তারা দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে, যা দেশের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচী, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ও ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সূত্র জানায়, এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি দেশের মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আলেম, পীর-মাশায়েখদের দীর্ঘদিনের। ২০১৩ সালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৩ বিল আকারে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদে এ বিল পাস হয়। বর্তমানে রাজধানীর পশ্চিম ধানম-ি সংলগ্ন বছিলা এলাকায় স্বল্প পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, আধুনিকীকরণ এবং দেশের সব ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথ পরিচালনার জন্য এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো স্থাপন করা হবে। ফাজিল (স্নাতক) এবং কামিল (স্নাতকোত্তর) পর্যায়ের কারিকুলাম ও সিলেবাস উন্নয়ন; শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষককে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিতে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক সুবিধা সৃষ্টি করা। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য কেরানীগঞ্জে ২০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এছাড়া ময়মনসিংহ বাদে দেশের অন্য সাতটি বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রও তৈরি করা হবে। আমরা আধুনিক মাদ্রাসা শিক্ষার সম্প্রসারণে কাজ করছি। নতুন করে ২১ মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করেছি। আরও কয়েকটি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ প্রকল্পটির উদ্যোক্তা। একনেকে অনুমোদন পেলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয় এপ্রিল ২০১৭ হতে জুন ২০২১ পর্যন্ত। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষ হয়ে যাওয়া নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জুলাই ’১৭ হতে জুন ’২১ পর্যন্ত। সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এই অর্থের মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যয় হবে প্রায় ১২৭ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭০ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ১০ তলা ভিত বিশিষ্ট ১০ তলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ৬ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ডরমিটরি নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও সংযোগ সড়ক, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ, যানবাহন ক্রয় ইত্যাদি। প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয় প্রকল্পের অঙ্গভিত্তি ব্যয় বিভাজন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হবে নির্মাণ ও অধিগ্রহণ খাতে। সামগ্রিক নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৩১ কোটি, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি। আর ২০ একর জমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। ৪ বছর মেয়াদী প্রকল্পে বেতন ও বিভিন্ন ভাতা খাতে খরচ হবে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এছাড়া ফিজিক্যাল ও প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে সাড়ে ৮ কোটি টাকা, সরবরাহ ও সেবা খাতে প্রায় ৯ কোটি টাকা, আসবাবপত্রের জন্য ৮ কোটি, যন্ত্রপাতি সংগ্রহে ৫ কোটি, যানবাহন সংগ্রহে ১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
×