ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে

নারী পাচার ও ইয়াবার রমরমা ব্যবসা

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

নারী পাচার ও ইয়াবার রমরমা ব্যবসা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ॥ মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘিরে শুরু হয়েছে ইয়াবা ও রোহিঙ্গা নারী পাচারের ঘটনা। শরণার্থী ক্যাম্পগুলো ঘিরে ইয়াবার রমরমা ব্যবসা শুরুর অভিযোগ উঠছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গারা কেউ ইয়াবা পাচার করছে, আবার কেউ ইয়াবা বহন করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ শরণার্থী ক্যাম্পে ইয়াবা মজুদের চেষ্টা করছে। সরকার মানবতা দেখাতে গিয়ে রোহিঙ্গা ও ইয়াবা প্রসঙ্গ নিয়ে বেকায়দায় আছে বলে কক্সবাজারের স্থানীয়দের অভিযোগ। এদিকে,কক্সবাজার থেকে পাওয়া খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে না যেতে উস্কানিদাতা রোহিঙ্গা জঙ্গীরা ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ত্রাণ সহায়তার নামে সাবেক আরএসও ক্যাডাররা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করছে প্রতিদিন। প্রশাসনের তরফ থেকে বিকেল ৫টার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরিচিতদের প্রবেশাধিকার নিষেধ থাকায় তারা দিনের বেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে একেকটি ক্যাম্পে। ২১ দফা দাবি সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টাঙ্গিয়ে রোহিঙ্গাদের উস্কানি দেয়া ঘটনার মূল হোতা মাহবুব আলম মিনারের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। চট্টগ্রাম থেকে পাওয়া র‌্যাব সেভেন সূত্রের খবরে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা শেষ পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন স্পট কক্সবাজারকে নষ্ট করার চক্রান্তে মেতেছে কিনা তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। দায়িত্বহীনতা ও আর অর্থ-বাণিজ্যের কারণে পুলিশ বাহিনীর অসাধু সদস্যদের সহযোগিতায় এখনও ইয়াবার চালান স্থানান্তরিত হচ্ছে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে। ফলে অভিযানে একের পর এক রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ক্যাম্প ও আশপাশ এলাকায় ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। এদিকে, চট্টগ্রামে জল ও সড়কপথে ইয়াবার চালান আসছে প্রতিনিয়ত। উল্লেখ্য, গত প্রায় ১০ মাসে র‌্যাব সেভেনের অভিযানে আনুমানিক ৬৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে, রবিবার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কক্সবাজার সদর আদালতের হাকিম মোশারফ হোসাইন উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার শহরের লারপাড়া থেকে সাবেক শিবির ক্যাডার রোহিঙ্গাদের উস্কানিদাতা মাহবুব আলম মিনারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত মিনার উখিয়ার ইনানী নিদানিয়ার আবদুর রশিদের পুত্র। কক্সবাজার সদর থানার ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া জানান, শহরের লারপাড়ার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতারের পর মিনার রোহিঙ্গাদের পক্ষে ২১ দফা দাবি সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার তৈরি ও ক্যাম্প এলাকায় টানিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। তার কাছ থেকে কিছু বিস্ফোরক দ্রব্যও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ওসি। স্থানীয়রা জানান, কতিপয় বেনিফিসিয়ারি রোহিঙ্গা নেতার কারণে দিন দিন আত্মঘাতী হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ ও জাতিসংঘসহ একাধিক রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে দিতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হলেও বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যেতে রাজি করানো মুশকিল হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা রোহিঙ্গা জঙ্গীদের অপতৎপরতা বন্ধ করা জরুরী হয়ে পড়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাসরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অশ্লীল বাক্যে নোংরা হয়ে উঠছে আশপাশের পরিবেশ। যে কোন মুহূর্তে হানাহানি ও মারামারিতে লিপ্ত হয়ে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা আশ্রিত হয়েও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। গত দেড় মাসে অন্তত ৩০ জনের কাছ থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ইয়াবা উদ্ধার করেছে। সাবেক আরএসও ক্যাডার বাংলাদেশী বলে দাবিদার রোহিঙ্গা নেতারা উস্কে দেয়ায় আন্দোলনের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে তাদের ২১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গারা দাবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার প্রকাশ অশুভ লক্ষণ বলে মত প্রকাশ করেছে সচেতন মহল। রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা প্রতিদিন নানা অপরাধ সংঘটিত করছে। আমাদের দেশের পরিবেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে। যেহেতু তাদের জন্য এদেশে বৈধ কোন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়নি, তাই তারা স্বাভাবিকভাবে অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন,খুব শীঘ্রই আমরা কর্মসূচী ঘোষণা করতে যাচ্ছি। দেশের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে আমরা প্রস্তুত।
×