ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভাতা নিয়ে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

ভাতা নিয়ে অনিয়ম

বাংলাদেশ সরকারের মহতী কার্যক্রমের অন্যতম গর্ভকালীন মায়েদের জন্য বিশেষ ভাতা বরাদ্দ করা, যাতে সমস্যাপীড়িত জনগোষ্ঠীর হতদরিদ্র নারীরা এই বিশেষ সাবধানতার সময় অতিক্রম করতে কোন ধরনের অর্থকষ্টে না পড়ে। গর্ভকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টিসহ বিশেষ চিকিৎসাসেবা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকারের এই কর্মসূচীর যাত্রা শুরু হয় ২০১৬-১৭ সালের অর্থবছরে। কিন্তু এমন একটি জনকল্যাণকর ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে নানা রকম অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বাউফলে এই মাতৃত্বকালীন ভাতা নেয়ার সময় গর্ভবতী নারীদের হরেক রকম হয়রানির আবর্তে পড়তে হয় বলে জানা যায়। অর্থাৎ প্রাপ্ত ভাতার কিছু অংশ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে চলে যায় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া যায়। মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের অধীনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাউফল উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে মোট ১২ হাজার ১শ’ ৮৫ জন অসহায়, দুস্থ গর্ভবতী মহিলাকে ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভাতার পরিমাণ ৫শ’ টাকা এবং ছয় মাস অন্তর এই ভাতা সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছে যায়। কিন্তু বিভিন্ন রকম অজুহাত দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ এবং ব্যাংকের কোন কোন কর্মকর্তা এসব গর্ভবতী নারীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রথমেই সংশ্লিষ্ট মহিলাদের ভাতা প্রাপ্তির জন্য তালিকায় নাম দিতে হয়। আর এই নাম দেয়া নিয়েও ইউপির কিছু সদস্য তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নেয়। তারপরেও আছে এই ভাতার জন সঞ্চয়ী হিসাব খোলা। সেখানেও অসুস্থ ও দুস্থ মহিলাদের টাকা দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয়। আবার যাতায়াতের খরচ হিসেবেও তাদের কিছু টাকা গচ্চা দিতে হয়। ছোট্ট একটা স্লিপে নাম লিখে দেয়ার জন্যও কাউকে না কাউকে বখশিশ দিতে হয়। এছাড়াও ভাতার কারণে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্মের খরচ বাবদ একটা অংশ চলে যায় কর্মকর্তাদের পকেটে। শেষাবধি যখন টাকা তোলা হয় সেখানেও ঘটে বিভ্রাট। শেষ মাশুলও দিয়ে আসতে হয় ব্যাংক কর্মকর্তাকে। এভাবে নাকি মাতৃত্বকালীন ভাতা সংশ্লিষ্টদের হাতে আসতে প্রায়ই ৬ ধাপ অতিক্রম করতে হয়। শেষমেশ যা আসে তা দিয়ে অসহায় এবং হতদরিদ্র নারীরা তাদের গর্ভকালীন সময় কিংবা তার পরের অবস্থা কিভাবে সামলাবেন সেটা কারোর বিবেচনার মধ্যেই থাকে না। একটি নারীর সবচেয়ে বিপন্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ সময় এই গর্ভকালীন অবস্থা। সরকার সাধ্যমতো জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচী প্রণয়নের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে কিছু অসাধু ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অন্যের প্রাপ্তিতে ভাগ বসাচ্ছে। এর চাইতে লজ্জা আর নিন্দনীয় কিছু হতে পারে না। নারীদের এই অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন মেটাতে সরকার মাতৃত্বকালীন ভাতার প্রচলন করে যে মহৎ কর্মযোগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সেখানে কিছু মানুষের অনিয়ম আর দুর্নীতির প্রকোপ পড়তে দেয়া মোটেই সমীচীন নয়। এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের প্রতিবাদ করতে হবে। তাদের ন্যায্য পাওনার দাবিতে সব ধরনের প্রতিবিধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি জরুরী। কিছু মানুষের অসাধু উপায় অবলম্বনের জন্য সাধারণ মানুষ ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে সেটা কাম্য নয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন আর সজাগ থাকা জরুরী।
×