ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঠাকুরগাঁওয়ের বুড়ির বাঁধে মাছ শিকারীদের উৎসব

প্রকাশিত: ০১:৪২, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

ঠাকুরগাঁওয়ের বুড়ির বাঁধে মাছ শিকারীদের উৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ পৌর শহরের অদূরে শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় হাজার হাজার পেশাজীবী ও সৌখিন মৎস শিকারী খইয়া জাল, পলো ও মাছ রাখার পাত্র (খলই) নিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতেছে। সোমবার ভোরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাতে বাঁধের গেট খুল দেয়ায় মাছ শিকারে মেতেছে কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন তাঁদের বন্ধুবান্ধব ও স্বজনেরা। সেখানে সবাই হাতে সাধারণ জাল, কারেন্ট জাল, লাফিজাল দিয়ে সাধ্যমত মাছ শিকার করছে। এছাড়াও যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও দু’হাত দিয়ে মাছ শিকারে নেমে পড়েছে কাঁদার মাঝে। সব মিলিয়ে সেখানে মানুষের মধ্যে মাছ শিকারের নেশা যেন চেপে বসেছে। মাছ শিকারের উৎসব উপলক্ষে বাঁধের ওপরে বসেছে খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। এলাকার যুবকেরা বাইরের মানুষের মোটরসাইকেল, সাইকেল রাখার জন্য তৈরি করেছে অস্থায়ী গ্যারেজ। এলাকাবাসী জানায়, ১৯৮২ সালে শুষ্ক মৌসুমে কৃষি জমির সেচসুবিধার জন্য ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের সীমানায় শুক নদীতে বুড়ির বাঁধ নামের একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। এ জলকপাটে আটকে থাকা পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তর বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা অবমুক্ত করে। আর এ পোনাগুলো যাতে কেউ ধরতে না পারে তা দেখভাল করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ। এরপর শীতের শুরুতে এ মাছ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ শিকারের উৎসব চলে আসছে। মাছ শিকারে আসা লোকজন জানান, এ জলকপাট এখন খোলা থাকবে। আরও বেশ কিছুদিন এখানে মাছ পাওয়া যাবে। তবে প্রথম দিনেই বেশি ভিড় হয়। আকচা গ্রাম থেকে মাছ শিকারে আসা তানভির ও রবিউল বলেন, প্রতিবছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। আমি ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত ৬/৭ কেজি ছোট-বড় মাছ ধরেছি। আত্মীয় স্বজনকে দেওয়ার পর যা থাকবে তা বাড়ির জন্য রাখা হবে। মাছ ক্রয় করার জন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরাও ভিড় করেছেন সেখানে। তাঁরা এলাকার মানুষের কাছ থেকে মাছ কিনে তা বাঁধের ওপর বিক্রি করছেন। যাঁরা মাছ ধরছেন না তাঁরা সেগুলো কিনে নিচ্ছেন। আবার অনেকে শহরের বাজারে মাছ পাঠিয়ে দিচ্ছেন। পাইকারী ব্যবসায়ী বিশু রায় বলেন, ভোর থেকে মাছ কিনতে শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার মাছ কিনেছেন। আর সেগুলো সরবরাহ করছেন শহরের বাজারে। এ থেকে তাঁর বেশ লাভ হবে বলে তিনি আশা করেছেন। সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ বলেন, প্রতিবছর এখানে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। শুধু গ্রাম নয়, শহরের অনেক মানুষ এখানে মাছ ধরার জন্য ভিড় করেন।
×