ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে মুশফিকই প্রথম সেঞ্চুরিয়ান

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে মুশফিকই প্রথম সেঞ্চুরিয়ান

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দুঃসহ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শুরু। দুই টেস্টে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাটিংই হতাশায় পুড়িয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে ওয়ানডেতে ভিন্ন একটা দল বাংলাদেশ এবং নিজেদের অন্যতম শক্তিধর হিসেবেই প্রমাণ করেছে গত কয়েক বছরে। রবিবার কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভাল স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে আর ভুল করেননি ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাÑ ব্যাটিং নিয়েছেন। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার এবং অন্যতম পেসস্তম্ভ মুস্তাফিজুর রহমানকে ছাড়াই নেমে ৭ উইকেটে ২৭৮ রান তোলে সফরকারীরা। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ বাংলাদেশের। এর পেছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল মিডলঅর্ডার ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিকুর রহীমের অপরাজিত ১১০ রানের ইনিংস। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন টেস্ট অধিনায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এর আগে কোন বাংলাদেশী সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি। মুশফিক সেদিক থেকে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কৃতিত্ব দেখালেন। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বেশ ভাল যাচ্ছে বাংলাদেশের টস ভাগ্য। সফরের শুরুতে প্রথম দুই টেস্টেই টস জিতেছিলেন অধিনায়ক মুশফিক। কিন্তু ব্যাটিং উইকেটেও বেছে নিয়েছিলেন ফিল্ডিং। সেটা নিয়ে চরম সমালোচনা হয়েছে এবং দলও বাজেভাবে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার রানোৎসবের পাহাড়ে চাপা পড়ে। তবে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ডায়মন্ড ওভালে সেই ভুলটি করলেন না। দারুণ ব্যাটিং স্বর্গে ব্যাটিংটাকেই বেছে নিলেন। দীর্ঘদিন পর তামিমকে ছাড়াই ওপেনিং জুটিÑ নামলেন ইমরুল কায়েস ও লিটন কুমার দাস। ইনজুরির কারণে তামিম বিশ্রামেই থেকেছেন। আর পেসস্তম্ভ মুস্তাফিজ গোঁড়ালির ইনজুরিতে না থাকায় পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ওয়ানডে অভিষেকের ক্যাপ পড়েন। শুরুটা বেশ ভালভাবেই করেছিলেন দীর্ঘ দুই বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরেই লিটন। ৪৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন দু’জন। টেস্ট সিরিজে ভীতির কারণ ছিল প্রোটিয়া পেস বোলিং, সেটাকে জয় করেছেন তারা শুরু থেকেই। তবে পেসার কাগিসো রাবাদা ঠিকই আটকে রেখেছিলেন ব্যাটসম্যানদের। তাকে বেশ সুস্থিরভাবে দেখেশুনে মোকাবেলা করলেও লিটন প্রথম শিকারে পরিণত হন এ পেসারের। ২৯ বলে ৪ চারে ২১ রান করে তিনি সাজঘরে ফেরেন। দারুণ স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছিলেন ইমরুল, তিনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার অভিষিক্ত পেসার ডেন প্যাটারসনের বলে ইমরুল সাজঘরে ফেরেন। তিনি ৪৩ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ রান করেছিলেন। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো সাকিব আল হাসান তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালই খেলছিলেন চারে নামা মুশফিকের সঙ্গে। কিন্তু ওয়ানডের ইতিহাসে পঞ্চম অলরাউন্ডার হিসেবে ক্যারিয়ারের ২০০’র বেশি উইকেট ও ৫ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেই তিনি ফিরে যান মাত্র ২৯ রানে। সাকিবের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৫৯ রান যোগ করে দলের বিপর্যয় ঘনীভূত হতে দেননি মুশফিক। টেস্ট ক্রিকেটে রান খরার মধ্যে থাকলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে বেশ ধারাবাহিক এ ব্যাটিংস্তম্ভ শুরু থেকেই বেশ সাবলীল ব্যাটিং করেছেন প্রোটিয়া বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে। সাকিব বিদায় নেয়ার পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে আরেকটি জুটি গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি। বেশিরভাগ সময়ই তিনি স্ট্রাইক নিয়েছেন এবং সঙ্গীকে সময় দিয়েছেন উইকেটের অবস্থা বুঝে ওঠার। সে কারণে চতুর্থ উইকেটে গড়ে ওঠে ৬৯ রানের ভাল আরেকটি জুটি। তবে মাহমুদুল্লাহও ২৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন। মুশফিক ছাড়া আর কেউ বেশিক্ষণ টিকতে পারছিলেন না উইকেটে। ইমরান তাহিরের লেগস্পিন আর ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের পেসের কাছে নতি স্বীকার করেন তারা। কিন্তু মুশফিককে দমিয়ে রাখা যায়নি। তিনি রানের চাকা সচল রাখেন। পঞ্চম উইকেটে সাব্বির রহমানের সঙ্গে তার ৪২ রানের দ্রুতগতির জুটি ভাল একটি সংগ্রহের পথ তৈরি করে দেয়। অর্ধশতক হাঁকিয়েও থামেননি মুশফিক। মাত্র ৫২ বলে ফিফটি হাঁকানোর পর অবশ্য কিছুটা ধীর হয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি আদায় করে নেন। দুই বছর পর আবার শতকের দেখা পেলেন ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স ও টেস্ট নেতৃত্ব নিয়ে চাপের মধ্যে থাকা মুশফিক। ২০১৫ সালের ৭ নবেম্বর সর্বশেষ শতকটি করেছিলেন তিনি জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ঢাকায়। এবার তিনি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেন ১১৬ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১০ রান করে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংস এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরি। এর আগে সৌম্য সরকারের ৯০ রানই ছিল প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের সেরা। ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই চট্টগ্রামে ওই ইনিংসটি খেলেছিলেন সৌম্য। মুশফিকের আগের শতকগুলো ছিল ১০১ (জিম্বাবুইয়ে, ২০১১- হারারে), ১১৭ (ভারত, ২০১৪- ফতুল্লা), ১০৬ (পাকিস্তান, ২০১৫- ঢাকা) ও ১০৭ (জিম্বাবুইয়ে, ২০১৫- ঢাকা)। এবারই প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকলেন মুশফিক। আর দেশের বাইরে করলেন সবেমাত্র দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তার এই ইনিংসের সুবাদেই শেষদিকে রাবাদা জ্বলে উঠলেও ৭ উইকেটে ২৭৮ রানের বড় সংগ্রহ পেয়ে যায় বাংলাদেশ দল। কিম্বার্লিতে ২০০২ সালে ২ অক্টোবর একমাত্র ম্যাচ খেলে ১৫১ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল। এবার সেটাকেও অনেক পেছনে ফেললো সফরকারীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এর আগে বাংলাদেশের সেরা সংগ্রহ ছিল ৮ উইকেটে ২৫১। ২০০৭ সালের ৭ এপ্রিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়া বিশ্বকাপে এই রান করেছিল বাংলাদেশ প্রভিডেন্সে। এবার সেটাকেও ছাড়িয়ে একটি লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ দল।
×