ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ১-৩ জাপান

জাপানের কাছে আক্ষেপের হার বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

জাপানের কাছে আক্ষেপের হার বাংলাদেশের

রুমেল খান ॥ আগের রাতে প্রবলবর্ষণ হয়েছে দীর্ঘসময় ধরে। সেই সঙ্গে পিলে চমকানো ভয়াবহ সব বজ্রপাত। সকালে একটু রোদ ও ভ্যাপসা গরম। কিন্তু খেলা শুরু হতেই সেটা উধাও। বিস্ময়করভাবে রোদ নেই, হাল্কা কুয়াশা, কিঞ্চিৎ শীতল আবহাওয়া। রাতারাতি আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তন। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপ হকিতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে বিকেল ৩টার পর খেলতে নেমে বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশের খেলারও বিপুল পরিবর্র্তন। যেন বার্তা ছড়িয়ে পড়লোÑ দিনটা আজ বাংলাদেশেরই হতে যাচ্ছে। কিন্তু হায়, আবহাওয়ার সঙ্গে খেলার ধরনে একটুর জন্য মিল ঘটাতে পারলো না বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল। প্রতিপক্ষ জাপানের বিরুদ্ধে পুরো ম্যাচে ভাল খেলেও একেবারে অন্তিম মুহূর্তে গিয়ে দুটি ভুলের খেসারত দিতে হলো। পরিণামে অপ্রত্যাশিতভাবে ১-৩ গোলে আক্ষেপের পরাজয়। ৩২ বছর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ হকির আসরে জাপানের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ (তখন খেলা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে)। এবার আসর শুরুর আগে জাপানের সঙ্গে একটি ৪০ মিনিটের (৬০ মিনিটের পরিবর্তে) প্রস্তুতি ম্যাচে অংশ নিয়ে তাদের ২-১ গোলে হারায় মাহবুব হারুনের শিষ্যরা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সপ্তদশ র‌্যাঙ্কিংধারী জাপানের সঙ্গে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল ৩৪ নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ। ৪০ মিনিটের এই ম্যাচে দূরপ্রাচ্যের সূর্যোদয়ের দেশ জাপানকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও প্রস্তুতি ম্যাচের সঙ্গে টুর্নামেন্টের ম্যাচের অনেক ফারাক থাকে, তারপরও ওই ম্যাচের ফল থেকে জয়ের অনুপ্রেরণা খুঁজছিল লাল-সবুজবাহিনী। কিন্তু জয়ের সেই আশার সলিল সমাধি ঘটে একেবারে শেষ সময়ে গিয়ে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল দুই ম্যাচ এবং দীর্ঘ ১৪৮ মিনিট প্রথম কোন পেনাল্টি কর্নার (পিসি) পাওয়া এবং তা থেকেই চলতি আসরে প্রথম গোল আদায় করা। মজার ব্যাপারÑ পুরো ম্যাচে তারা ওই একটিই পিসি পেয়েছিল। অথচ এর বিপরীতে জাপান পেয়েছে ১০টি পিসি এবং সেগুলোর একটি থেকেও গোল করতে পারেনি তারা। এ প্রসঙ্গে অতুল ওয়াহিদ হেমন্ত নামের এক হকিপ্রেমী সরস মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ যদি এই ম্যাচে আরও কটি পিসি পেত তাহলে সেগুলোর সবগুলো থেকেই গোল আদায় করতে পারতো। ম্যাচের শুরু থেকেই বল নিয়ন্ত্রণ, আক্রমণ ও প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে জাপান। তারপরও বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় প্রথম কোয়ার্টারে কোন গোল করতে পারেনি তারা। এটাই আশার সঞ্চার করে বাংলাদেশী হকিপ্রেমীদের মনে। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে সমানতালে খেলে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো জাপানের গোল সীমানায় একাধিক আক্রমণ করে ত্রাসের সঞ্চার করে। একটি গোল আদায় করে নেয়ার পাশাপাশি আরেকটি গোলের সুযোগও নষ্ট করে। এই অর্ধে বাংলাদেশ দল একটি গোল হজমও করে। তৃতীয় কোয়ার্টারেও পাল্লা দিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তবে এই অর্ধে কোন গোল করতে না পারলেও গোল হজমও করেনি। তবে হজম করতে পারতো। কেননা গোলরক্ষক অসীম গোপের ফাউলের কারণে পেনাল্টি স্ট্রোক পায় জাপান। ... এর স্ট্রোক ডনদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে পা দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়ে ‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত’ করেন অসীম বিপুলভাবেই। চতুর্থ কোয়ার্টারে জাপানের একটি পিসির জোরালো হিট খোরশেদের হঁাঁটুতে লাগলে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। এই অর্ধে বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সেই সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগাতে সচেষ্ট হয় সুযোগ সন্ধানী জাপানীরা। তারা দ্রুতগতির আক্রমণে দিশেহারা করে ফেলে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। তারা জাপানী ফরোয়ার্ডদের ঠিকমতো ‘মার্কিং’ করে খেলতে না পারার চরম খেসারত দেয় শেষ দুই মিনিটে দু’দুটি গোল খেয়ে। এর আগে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তান ও ভারতের কাছে যথাক্রমে ০-৭ গোলে পরাভূত হয়ে জিমিবাহিনীর সুপার ফোরে যাবার আশা বিলীন হয়ে গিয়েছিল। এখন তাদের খেলতে হবে পঞ্চম থেকে অষ্টম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে। যদি তারা বিশ্বকাপ হকির বাছাইপর্বের খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে চায় সেক্ষেত্রে তাদের এই আসরে কমপক্ষে দুটি ম্যাচে জিততেই হবে। বাংলাদেশ দলের ভাগ্যটাও খারাপ। ১৬ মিনিটে বৃত্তের বাইরে থেকে মামুনুর রহমান চয়নের হিট জাপানের পোস্টে লাগলে গোলবঞ্চিত হয় তারা। ২২ মিনিটে কিতাজাতো কেনজি এককভাবে কাটিয়ে বাংলাদেশের গোলরক্ষক অসীম গোপের পায়ের ফাঁক দিয়ে গোল করলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় জাপান। ২৮ মিনিটে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। প্রথম পিসি পায় তারা। মিমো-রানা-চয়ন কম্বিনেশন। ড্রাগ এ্যান্ড পুশে চয়নের গোলে উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ শিবির (১-১)। ৫৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় তানাকা কেন্টা হিটে গোল করলে আবারও এগিয়ে যায় জাপান (২-১)। পরের মিনিটেই বাবুর ভুলে ফাঁকায় বল পান কেন্টা। হাল্কা টোকায় গোল করে বাংলাদেশের হারের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন তানাকা কেন্টা (৩-১)। খেলা শেষ হলে লড়াকু অথচ আক্ষেপের হার নিয়ে টার্ফ ছাড়ে বাংলাদেশ দল।
×