ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জীবনের রঙে উচ্চকিত অলোকেশের ক্যানভাস

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

জীবনের রঙে উচ্চকিত অলোকেশের ক্যানভাস

মনোয়ার হোসেন ॥ চিত্রপটে নেই রঙের বাহুল্য, আছে পরিমিতি বোধ। নয়নে স্নিগ্ধতা ছড়ানো ক্যানভাসে দেখা মেলে গতিময়তা। রঙের ওপর রঙ চাপিয়ে প্রকাশিত হয়েছে নানা বিষয়। সহজিয়া চিত্রণে উদ্ভাসিত হয়েছে চারপাশের চেনা জগত। সেখানে সকালের নরম আলোয় ধরা দিয়েছে গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে ছুটে চলা ফসলবোঝাই গরুর গাড়ি। নজরে পড়ে নদীর ঘাটসংলগ্ন গ্রামীণ বাজারের কর্মচাঞ্চল্যময় ক্যানভাস। ঘাটে ভিড়ে আছে সারিবাঁধা নৌকা। বটবৃক্ষতলে বসেছে হাট। তুমুল গতিতে চলছে বিকিকিনি। দীর্ঘ পথ ধরে হাটের পানে আসছে মানুষ। বানভাসি মানুষের বেদনাকে আলিঙ্গন করে সেজেছে কোন এক চিত্রপট। ডুবে যাওয়া সড়কে ভ্যানে চেপে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে এগুচ্ছে বন্যাকবলিত গ্রামবাসী। গ্রাম বাংলার দৃশ্যকল্পে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে দলবেঁধে ঘোরাঘুরি করে মহিষের পাল। নীল আকাশের নিচে সমুদ্রসৈকতে উঁকি দেয় নুড়ি খোঁজা শ্রমজীবী নর-নারী। ক্ষয়ে যাওয়া ভবনের আঁকা ছবি বলে যায় প্রাচীন নগর পানাম সিটির পুরনো ঐতিহ্যের কথা। কোন ফ্রেমে শিল্পীর মন ছুটে গিয়েছে পাহাড়ী জনপদে। রঙ-তুলির আঁচড়ে বিবৃত হয়েছে পবর্তের মাঝ দিয়ে বহমান নদী। বৈচিত্র্যময় বিষয়ের সূত্র ধরে হাজির হয়েছেন বাঙালীর মননের দিশারী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। শান্তির প্রতীক পায়রা হাতে দেখা যায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। শিল্পীর আঁকাআঁকিতে উঠে এসেছে পাখির ওড়াউড়ি, আদিবাসী নারীর হাসিমাখা প্রতিকৃতি কিংবা নাইটকুইন ফুলের সৌন্দর্য। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যেন জীবনের রঙে উচ্চকিত হয়েছে চিত্রশিল্পী অলোকেশ ঘোষের অনেক ক্যানভাস। সেখানে নিসর্গকে সঙ্গী করে মুখ্য হয়ে উঠেছে যাপিত জীবন। সেসব ছবি নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালরিতে শুরু হলো এই শিল্পীর চতুর্থতম প্রদর্শনী। রবিবার বিকেলে এ প্রদর্শনীর সূচনা হয়। সেই সঙ্গে প্রকাশিত হয় অলোকেশ ঘোষের জীবন ও কর্মের ওপর গ্রন্থ ‘লাইফ এ্যান্ড ওয়ার্কসÑঅলোকেশ ঘোষ’। যৌথভাবে প্রদর্শনী ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও গ্যালারি কসমস। জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা ও গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ও ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এ এইচ এন সেওং-দু এবং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্যালারি কসমসের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন অলোকেশ ঘোষ। সমরজিৎ রায় চৌধুরীর বক্তব্যে উঠে আসে শিল্পীর অতীতসহ কাজের মূল্যায়ন । বলেন, আমাদের দুজনের সম্পর্কটা ৪০ বছরের পুরনো। একসময় অলোকেশ আমার ছাত্র ছিল। ছাত্রাবস্থায়ই জলরঙের প্রতি তার আসক্তি আমাদের নজর কেড়েছে। শিক্ষকরাও সেটা দেখে মুগ্ধ হয়েছে। সেই তালিকায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনও ছিলেন। শিল্পের ভুবনে সে এক দীর্ঘ পথের পথিক। তার প্রতিটি কাজই দেখার মতো। সব মাধ্যমেই সিদ্ধহস্ত এই শিল্পী। বিশেষ করে ল্যান্ডস্কেপের ক্ষেত্রে সে একজন মাস্টার পেন্টার। পোর্ট্রেটেও সুনিপুণ। এসব কারণেই দীর্ঘদিন সমাদৃত হবে তার কাজ এবং শিল্পরসিকদের আনন্দ দেবে। শিল্পীর কাজের প্রশংসা করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিল্পী অলোকেশ ঘোষের মধ্যে রয়েছে সূক্ষ্ম অনুভূতি। সেই অনুভূতিতাড়িত ভাবনার নির্যাসে তার শিল্পকর্ম হয়ে ওঠে আবহমান বাংলার রূপক। তাই বাংলাদেশকে ছুঁয়ে দেখতে হলে দেখতে হবে এই শিল্পীর ক্যানভাস। চিত্রপটে এমন নরম রং অন্য কারো ক্যানভাসে দেখা যায় না। সে কারণেই তার সৃজিত শিল্পকে খুব আপন মনে হয়। স্বল্পভাষী অলোকেশ ঘোষ বলেন, ইচ্ছা ছিল রোহিঙ্গাদের জীবনে ঘটে যাওয়া অমানবিকতার চিত্র মেলে ধরব ক্যানভাসে। তবে সময়ের অভাবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ছবি আঁকা হলো না। এ এইচ এন সেওং-দু বলেন, অলোকেশ ঘোষের ছবি প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশকে। তার জলরঙে আঁকা ছবি গ্রাম বাংলা এবং সেখান মানুষের কর্মচাঞ্চল্যের ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছি। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা ও শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তাঁত কাপড়ের ফ্যাশন শো তাঁত কাপড় চমৎকার এক আয়োজন। উচ্চারিত হলো তাঁত শিল্পীদের সৃজনের সংগ্রাম। উঠে এলো তাঁতশিল্পের সঙ্কট ও সম্ভাবনার চিত্র। বাড়তি আকর্ষণ ছিল তাঁত কাপড়ের পরিহিত মডেলদের ফ্যাশন শো। তাঁতিদের তৈরি পণ্য প্রদর্শনী ও ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হলো রবিবার। ‘এসো সুতোর কাব্য গাঁথি ধ্রুপদী ফোঁড়ে’ শিরোনামের এ আয়োজন করে তাঁত শিল্প নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘গামছা’। সংগঠনটির পথচলা শুরুকে কেন্দ্র করে ধানম-ির ছায়ানট মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী পর্বে অতিথি ছিলেন ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাট্য পরিচালক কায়েস চৌধুরী, উত্তরা ইউনিভার্সিটির ফ্যাশন ডিজাইন এ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ফারুক এম মাসুদ, শাহেদা কামাল প্রমুখ। গামছার পক্ষে শুভেচ্ছা জানান ডিজাইনার নুসরাত জাহান নিপা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের গৌরবময় ঐতিহ্য এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি কোরিওগ্রাফি উপস্থাপন করা হয়। এবং নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। আলোচনার পর দেশীয় পোশাকের আধুনিক ডিজাইনের উপস্থাপন করা হয় ফ্যাশন শোয়ের মধ্য দিয়ে। ছিল লোকজ ও আদিবাসী নৃত্য। আদিবাসীদের পোশাকের ওপরও বিশেষ ফ্যাশন কিউ উপস্থাপন করা হয় অনুষ্ঠানে। গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপ্তি গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব পর্ষদ আয়োজিত দশ দিনব্যাপী ৭ম গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব শেষ হলো রবিবার। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার তিন মিলনায়তন ও মুক্তমঞ্চে একযোগে চলে এ উৎসব। সমাপনী দিনের বিকেলে মুক্তমঞ্চের আয়োজনে গতি থিয়েটার আশিক সুমনের রচনা ও নির্দেশনায় পরিবেশন করে পথনাটক ‘বাজিকর’। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে শ্রুতিঘর এবং স্বরচিত আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সুরতাল ও সুরসাগর। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নান্দনিক নৃত্য সংগঠন ও ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন আশরাফুল আলম ও আহসান উল্লাহ তমাল। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্রাবণী গুহ রায় ও টুম্পা সমাদ্দার। সন্ধ্যায় শুরু হয় নাট্য মঞ্চায়ন।
×