ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীদের সুইসাইড স্কোয়াডের ধাঁচে জামায়াত নেতাদের যোগাযোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

জঙ্গীদের সুইসাইড স্কোয়াডের ধাঁচে জামায়াত নেতাদের যোগাযোগ

শংকর কুমার দে ॥ অস্ত্র-বিস্ফোরক ও জিহাদী বই নিয়ে গ্রেফতার হওয়া জামায়াত নেতারা জঙ্গী গোষ্ঠীর সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যদের মতোই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কৌশল অবলম্বন করছেন। জঙ্গী গোষ্ঠীর সুইসাইড স্কোয়াডের জঙ্গীদের মতোই মোবাইল ফোন ব্যবহার করার পরিবর্তে নির্দিষ্ট ওয়াইফাই জোনে এ্যাপসের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন তারা। এ ধরনের যোগাযোগ রক্ষার কৌশল নিয়েছে বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগ নিয়ে যারা পলাতক, বিভিন্ন সহিংস মামলার আসামি জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী ও ক্যাডাররা। রাজধানীর উত্তরায় গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার সময়ে গ্রেফতার হওয়া জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করার পর তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় তাদের মোবাইল আছে, কিন্তু মোবাইল ফোনে কোন সিমকার্ড নেই। অস্ত্র-বিস্ফোরক ও জিহাদী বই নিয়ে গ্রেফতার হওয়া জামায়াতের ৮ জনকে দুইটি পৃথক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীর তকমায় অভিযুক্ত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার আগে ও পরে জ্বালাও-পোড়াও সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালায়। দলটি সহিংসতার পথ ধরে এগোনোর ফলে বেশিরভাগ নেতাকর্মী ও ক্যাডারদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হলে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। জামায়াত-শিবিরকে সংগঠিত করার জন্য পলাতক নেতাকর্মী ও ক্যাডররা বিভিন্নস্থানে গোপন বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। গত ৯ অক্টোবর রাজধানীর উত্তরায় গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার সময়ে জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করার পর তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় তাদের মোবাইল ফোনে কোন সিম নেই। সিম ছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কৌশল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রিমান্ডে নেয়া গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতাদের। জামায়াত নেতারা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, নির্দিষ্ট ওয়াইফাই জোন ব্যবহার করে তারা এ্যাপসের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এই ধরনের কৌশলে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে জঙ্গী গোষ্ঠীর সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যরা। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন শিবিরকে আবারো শক্তিশালী করে তুলতে কৌশলে ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকও হচ্ছিল, তবে গ্রেফতার এড়াতে এসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত একে অপরকে জানানো হতো মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহারের পরিবর্তে এ্যাপসের মাধ্যমে। রাজধানীর কদমতলী থানার পুলিশ পৃথক দুই মামলায় রিমান্ডে নেয়ার পর এখন জিজ্ঞাসাবাদ করছে জামায়াতের নেতাদের। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গত ৯ অক্টোবর জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করার পর তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় তাদের মোবাইল ফোনে কোন সিমকার্ড নেই। এরপরই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, গ্রেফতার এড়াতে তারা মোবাইল ফোনে সিমকার্ড ব্যবহার করেন না। নির্দিষ্ট ওয়াইফাই জোন ব্যবহার করে তারা এ্যাপসের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত নেতারা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ছক কষছিল। রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ও আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতেই গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন দলটির শীর্ষ নেতারা। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকা-ের অভিযোগ পুরনো। দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী মানেই ‘জ্বালাও-পোড়াও’ কর্মকা-। একাত্তরে বাংলাদেশ ভূমিকার পর বিতর্কিত এই দলটি সাবেক সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানের সময়ে রাজনৈতিক বৈধতা পায়। এরপর নতুন উদ্যমে রাজনীতি শুরুর পর আশি ও নব্বইয়ের দশকে রাজশাহী, চট্টগ্রামে জামায়াত ও দলটির অনুজ সংগঠন ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে রগকাটা ও ছাত্রনেতাদের হত্যাসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এমনকি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার কার্যক্রম শুরুর পর ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশব্যাপী জামায়াত-শিবির তা-ব চালিয়েছিল। এছাড়া চাঁদে সাঈদীকে দেখার গুজব ছড়িয়ে সারা পুলিশের ফাঁড়িতে, পুলিশের ওপর আক্রমণ, অস্ত্র লুট, জ্বালাও-পোড়াও করে সহিংস সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয় জামায়াত-শিবির। সেই জামায়াত-শিবির ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এখন আবার জঙ্গী গোষ্ঠীর মতোই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার কৌশল অবলম্বনের ঘটনা রহস্যের জন্ম দিয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×