ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাবধান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুলেও অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক করা যাবে না, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সহজে ডার্কওয়েবে ঢুকতে পারে না

দেশের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে অস্তিত্ব নেই ॥ ব্লু হোয়েল গেম আগেই ডার্কওয়েবে, তবু সতর্ক থাকার পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

দেশের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে অস্তিত্ব নেই ॥ ব্লু হোয়েল গেম আগেই ডার্কওয়েবে, তবু সতর্ক থাকার পরামর্শ

এমদাদুল হক তুহিন ॥ দেশের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে ব্লু হোয়েল গেমের আদৌ কোন অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে থাকলেও সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন গেম নির্মাতা ও তথ্য প্রযুক্তিবিদরা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ব্লু হোয়েল গেমের কোন অস্তিত্ব নেই। তবে কেউ যেন এ ব্যাপারে অত্যুৎসাহী না হয়ে ওঠে। কারণ ব্লু হোয়েলের প্রকৃত সফটওয়্যার বা লিঙ্ক বহু আগেই ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হলেও তা একেবারেই বিলুপ্ত হয়নি। আর গেমটি ডার্ক ওয়েবে চলে যাওয়ায় সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের আক্রান্ত হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। গেম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্লু হোয়েল কোন মোবাইলভিত্তিক গেম নয়। পিসিতে ডার্ক ওয়েব ব্যবহারে সক্ষম এমন ব্যক্তিরাই গেমটি খেলে থাকতে পারে। তাদের মতে, গেমটিতে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকেই টার্গেট করা হয়। এক্ষেত্রে হতাশাগ্রস্ত ও কেবলমাত্র আত্মহত্যাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকেই খুঁজে বের করা হয়। ছুড়ে দেয়া হয় চ্যালেঞ্জ। তবে টার্গেটকৃত ব্যক্তিটি সম্মতি না জানালে তিনি পরিত্রাণ পাবেন। আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে দেশে ব্লু হোয়েল আত্মহত্যার মতো কোন মড়ক তৈরি করবে না বলে মনে করেন বেসিস সভাপতি ও বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জাব্বার। তবে গেমটি সম্পর্কে অভিভাবক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও অধিকতর সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে, অত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত ব্লু হোয়েল গেম বাংলাদেশে বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন তিন আইনজীবী। জানতে চাইলে গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাইজ আপ ল্যাবস’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এরশাদুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, গেম ইন্ডাস্ট্রি থেকে ব্লু হোয়েল গেম সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করেছি। তবে দেশের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে আমরা এর কোন অস্তিত্ব পাইনি। দেশের পরিস্থিতিতে ব্লু হোয়েল গেম সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে এগুলো আসলে পুরোপুরি ফেক। আসলে গেমটা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে না। মানসিকভাবে কেউ বিপর্যস্ত হলে তাকেই আক্রান্ত করতে পারে। তাই আপাত দৃষ্টিতে বাংলাদেশে এর কোন প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, এ গেমের প্রভাবটা ছিল রাশিয়ায়। এডিমনরা গেমটা নিয়ন্ত্রণ করত। তবে তাদেরকে পুলিশ ধরে ফেলেছে। গুগল প্লে স্টোর বা এ্যাপেল প্লে স্টোরে এই গেম পাওয়া যায় না। ডার্ক ওয়েবে থাকতে পারে। এ্যাপসের মতো ডাউনলোড করা যাবে না। কোন লিঙ্ক দিয়ে একজন প্রবেশ করলে সেই লিঙ্ক আর কোথাও কাজ করবে না। অর্থাৎ টার্গেটকৃত ব্যক্তির জন্যই একটা লিঙ্ক তৈরি করা হয়। এছাড়াও ডার্ক ওয়েব আলাদা একটা এরিয়া। সাধারণ ব্রাউজার দিয়ে সেখানে প্রবেশ করা যায় না। একমাত্র হ্যাকারদের দ্বারাই ডার্ক ওয়েবে যাওয়া সম্ভব। তাই বলা যায়, ইন্টারনেটের সাধারণ ব্যবহারকারীদের ব্লু হোয়েল দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। গেম ও মোবাইল এ্যাপস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ড্রিমার্জ ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, ব্লু হোয়েল গেমের ইস্যুটি বৈশ্বিক। বিশ্বের যে কোন স্থান থেকেই গেমটি ডাউনলোড করা যাবে। কিন্তু ইন জেনারেল ব্রাউজার অর্থাৎ গুগল ক্রম বা মজিলা ফায়ার ফক্স থেকে ডাউনলোড করা যাবে না। এটা পিসি ভিত্তিক গেম। মোবাইলভিত্তিক নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে গেমটি পাওয়া সহজ নয়। তিনি বলেন, যেহেতু গেমটি নেটে আপলোড হয়েছিল, এখনও এর পুরো সোর্স নেট থেকে সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশে এটা সহজে পাওয়া যাবে না। গেমটি সম্পর্কে দেশে যে তথ্য ছড়িয়েছে তার অধিকাংশই রিউমার। আর গেম ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশাদ কবির জনকণ্ঠকে বলেন, প্রচারের ক্ষেত্রে আমাদের নজর রাখা উচিত যে কোন কারণে কিশোর-কিশোরীরা যেন এর প্রতি উদ্বুদ্ধ না হয়ে ওঠে। ব্লু হোয়েল নিয়ে মানুষ এখন নানা ধরনের কথা বলছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। তবে দেশের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে এখন পর্যন্ত এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে অন্য নামে একই ধরনের বেশ কিছু গেম রয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গুগল প্লে স্টোরে ব্লু হোয়েল নামে যে গেমগুলো রয়েছে এগুলো প্রকৃত ব্লু হোয়েল নয়। এগুলো ফেক গেম। তবে দেশেই ব্লু হোয়েল গেম খেলা হচ্ছে এমন তথ্য জানিয়ে ৮ পেয়ারস সলুউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজালাল জনকণ্ঠকে বলেন, কেউ একজন রেফার না করলে এ গেম নামানো সম্ভব নয়। খেলার একটা পর্যায়ে কোন বন্ধু যদি তার অন্য বন্ধুকে টার্গেট করে তবেই সে খেলতে পারে। দেশেও এ গেম খেলা হচ্ছে গ্রুপভিত্তিক। কিশোর-কিশোরীদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, গেমটি সম্পর্কে কোনভাবেই উৎসাহী হওয়া যাবে না। গেমটি যেহেতু মনস্তাত্ত্বিক তাই কেউ উৎসাহী হয়ে উঠলে গেমে প্রবেশ মাত্রই সে মটিভেটেড হতে থাকবে। তাই সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলায় ব্লু হোয়েল লিখে সার্চ করলে এখন শতশত এ্যাকাউন্ট পাওয়া যাচ্ছে। এসব এ্যাকাউন্টের কোন কোনটিতে ব্লু হোয়েল গেম সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য শেয়ার দেয়া হচ্ছে। কোন কোন ব্যক্তির আচরণও সন্দেহজনক মনে হয়েছে। ব্লু হোয়েল লিখে সার্চ করে খুঁজে পাওয়া গেছে একাধিক ফেসবুক গ্রুপও। গ্রুপগুলোও মারাত্মক সাংঘাতিক। শেয়ার দেয়া হচ্ছে নানা ধরনের লিঙ্কও। দেখা গেছে কেউ কেউ লিঙ্ক চাইছে। গুগলেও রয়েছে বেশকিছু লিঙ্ক। এমন পরিস্থিতিতে, গ্রুপগুলোর প্রতি নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছেন প্রযুক্তিবিদরা। আর সাধারণ ব্যবহারকারীর প্রতি তাদের পরামর্শ, কোন ক্রমেই অপরিচিত কোন লিঙ্কে ক্লিক করা যাবে না। অবশ্যই তার ইউআরএল চেক করতে হবে। এদিকে গুগল প্লে স্টোরে দেখা গেছে, ব্লু হোয়েল নামে বিভিন্ন ভার্সনের একাধিক এ্যাপস রয়েছে। সার্চ করে দেখা গেছে, ব্লু হোয়েল সিমুলেটর ৩ডি, ব্লু হোয়েল ২০১৭, ব্লু হোয়েল গেম, ব্লু হোয়েল ভিআর, ব্লু হোয়েল, ব্লু হোয়েল সার্ভিভাল চ্যালেঞ্জ, ব্লু হোয়েল শূটার চ্যালেঞ্জ, ব্লু হোয়েল ক্র্যাজি মনস্টার ও এন্টি ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জসহ অনুরূপ গেমের ছড়াছড়ি। তবে এর কোনটি প্রকৃত ব্লু হোয়েল গেমস কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তথ্যমতে, গুগল প্লে স্টোর থেকে প্রকৃত ব্লু হোয়েল গেম বহু আগেই সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ধারণ করা হচ্ছে, প্লে স্টোরে বিদ্যমান থাকা গেমের অধিকাংশই কপি পেস্টের মাধ্যমে তৈরিকৃত। কোন কোনটিতে প্রকৃত ব্লু হোয়েলের গান ও সুর বসানো হয়েছে। গেম সংশ্লিষ্টদের মতেও এগুলো প্রকৃত ব্লু হোয়েল গেমের কোন এ্যাপস নয়। ব্লু হোয়েল সিমুলেটর নামের গেমসটি এই প্রতিবেদকের মোবাইলে ইনস্টল করে দেখা গেছে, শুরুতেই ভেসে আসছে করুন সুর। ইনস্টলের সঙ্গে সঙ্গেই লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো মুহূর্ত। অনেকটা ভয় ভয় ভাব। কৌতূহলী মন। ভেসে উঠছে তিমির ছবি। এক তিমির প্রতিপক্ষ আরেক তিমি। তবে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া হয়নি। বুকের ভেতরে খেলে যাচ্ছিল অন্য রকমের ভয়। মূলত প্লে স্টোরে থাকা গেমগুলো যাচাই করতে এর একটিতে প্রবেশ। তবে টেকা যায়নি। সঙ্গত কারণেই অল্প সময়ে বের হয়ে আসতে হয়। মূলত গেমটিতে প্রবেশ করার আগে এ্যাপটি আনইনস্টল করা যাবে এমন তথ্য জানার কারণেই ভেতরে ঢুকে দেখা। কারণ তথ্যমতে প্রকৃত ব্লু হোয়েল কখনই আনইনস্টল করা যায় না। তবে এসব গেমের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও যে কারো মনোজগতে গেমগুলো প্রভাব ফেলবে। করুণ সুরের ভয়ার্ত গ্রাফিক্স আর এনিমেশনের কারণে শিশু-কিশোররা ভেঙ্গে পড়বে মানসিকভাবে। তাই প্লে স্টোরে থাকা এসব গেম থেকেও সব বয়সী মানুষকে দূরে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা। তাদের মতে, প্লে স্টোরে থাকা এসব গেম সরিয়ে নিতে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। প্রচলিত আছে, গেমের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এসব ধাপ অতিক্রম করতে নিজের শরীরে আঘাত করা থেকে শুরু করে গায়ে আঁচড় কেটে রক্তাক্ত করা, ছাদের কার্নিশে ঘুরে বেড়ানো, রেললাইনে সময় কাটানো, হঠাৎ রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে ভূতের ছবি দেখা ও হাতে ব্লেড দিয়ে নীল তিমির ছবি আঁকার নির্দেশনাও দেয়া হয়ে থাকে। চ্যালেঞ্জ গ্রহণের পর প্রমাণ হিসেবে এসব কর্মকা-ের ছবি পাঠাতে হয় কিউরেটরকে। ২৭ তম দিনে হাত কেটে ব্লু হোয়েলের ছবি আঁকতে হয়। গেম খেলা শুরু করলে সব নির্দেশনা মানা বাধ্যতামূলক। গেমের শেষের দিকে থাকে আত্মনির্যাতনমূলক বিভিন্ন টাস্ক। বলা হয় মাদক বা ড্রাগ গ্রহণের কথা। নির্দেশনা আসে নিজের ন্যুড ছবি পাঠানোর। কিউরেটররা হাতিয়ে নেয় গেমে অংশ গ্রহণকারীর সব তথ্য। শেষদিকে করা হয় ব্ল্যাকমেল। তখন মুক্তি চায় চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী। শেষ, অর্থাৎ ৫০ তম ধাপে নির্দেশনা থাকে আত্মহত্যার। তখন কিউরেটররা বলে থাকে, ছাদের কার্নিশে দাঁড়াও। নিচের দিকে তাকাও। কিংবা ঝুলে পড়ো ফ্যানে। আর এভাবেই অকালমৃত্যুর মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে গেমের। প্রসঙ্গত হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অপূর্বা বর্ধনের আত্মহননের মধ্য দিয়ে দেশে আলোচনায় আসে ব্লু হোয়েল গেম। তার পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়ে গেম খেলেছে বলে সন্দেহ করা হয়। তবে তার হাতে ব্লু হোয়েলের আঁকা কোন ছবি ছিল না। ছিল না কোথাও মেজর ইনজুরিও। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অপূর্বা ব্লু হোয়েল গেম খেলেই আত্মহত্যা করেছে তা প্রমাণিত নয়। ২১ বছর বয়সী রুশ ছাত্র ফিলিপ বুদেইকিন ২০১৩ সালে প্রথম ব্লু হোয়েল গেমটি তৈরি করেন। তার পড়াশোনার বিষয় ছিল মনোবিজ্ঞান। এই গেম ২০১৬ সাল থেকে ছড়াতে থাকে। গেমটির মূল লক্ষ্য দুর্বলচিত্তের মানুষ, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা। চলতি বছর পর্যন্ত রাশিয়া, ভারতসহ ব্লু হোয়েল গেম খেলে বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর এসেছে। এদিকে, তথাকথিত ভয়ঙ্কর ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে বাংলাদেশীদের আগ্রহ সব সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে। গুগল ট্রেন্ডিং রিপোর্ট অনুসারে, গত ৩০ দিনের মধ্যে ব্লু হোয়েল লিখে সার্চের শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এরপরেই রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তান। তবে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপি এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, এই গেম কোন ওয়েবসাইট বা এ্যাপ স্টোরে থাকে না। কারও কাছ থেকে পাওয়া ওয়েবসাইটের ঠিকানা (লিঙ্ক) থেকে গেমটি নামিয়ে (ডাউনলোড) নিয়ে খেলতে হয়। সংগঠনটির মতে, বাংলাদেশের কোন নেটওয়ার্কে এখনও ব্লু হোয়েলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে দেশের কিশোর-কিশোরীরা যাতে গেমটির দ্বারা আত্মঘাতী না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে সরকার। দেয়া হয়েছে একাধিক নির্দেশনা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সচেতনতার ওপরই জোর দিচ্ছে বেশি। এদিকে ইন্টারনেটে ব্লু হোয়েল কিংবা এর মতো জীবননাশী কোন গেমের বিষয়ে কোন তথ্য পেলে ২৮৭২ নম্বরে ফোন করে তা জানাতে বলেছে বিটিআরসি। দেশেও এ ধরনের গেম খেলা হয়ে থাকতে পারে এমনটি ধারণা করে সন্তানদের বিরত রাখতে অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোর ওপরও জোর দিয়েছে দেশের ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ব্লু হোয়েলে আক্রান্ত হয়ে দেশের কেউ আত্মঘাতী হয়েছে এমন তথ্যের সত্যতা নেই। এদিকে, রাজধানীর সদরঘাটে রাকিব নামের এক যুবকের মৃত্যুর পেছনে ব্লু হোয়েলকে দায়ী করেছে এলাকাবাসী। জানা গেছে, সদরঘাটের শরিফ মার্কেট এলাকায় একটি ভবন থেকে পড়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ব্লু হোয়েলের কারণে ওই যুবকের এই পরিণতি। তবে পুলিশ বলছে, এটি আত্মহত্যা, ব্লু হোয়েলের কোন আলামত নেই। অন্যদিকে, টাঙ্গাইলে হৃদয় নামের যে তরুণ হাত কেটেছে, সেই হাত কাটার ছবিটিও তিমির নয়। বিশ্লেষকদের মতে, ব্লেড দিয়ে সে নিজের হাত কেটেছে। আঁকে নি তিমির ছবি। পূর্বাপর সময় প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বহু কিশোর-কিশোরী এমনভাবে হাত কাটত। ওই ঘটনার সঙ্গে ব্লু হোয়েল জড়িত নয় বলেই মনে করছেন তারা। জানা গেছে, ব্লু হোয়েলে আসক্ত চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করে তাকে কাউন্সিলিংয়ে পাঠানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ। ওই শিক্ষার্থী পুলিশকে জানিয়েছে, গত ৫ অক্টোবর ফেসবুকের মেসেঞ্জারে আসা একটি লিঙ্কে ক্লিক করার পর ব্লু হোয়েল গেমটি তার মোবাইলে ডাউনলোড হয়ে যায়। তারপর তিনি খেলতে শুরু করেন। পুলিশের ভাষ্যমতে, প্রথম ধাপে ওই শিক্ষার্থী সারারাত ক্যাম্পাসে হেঁটেছে, দ্বিতীয় ধাপে হলের ছাদের রেলিংয়ে এবং তৃতীয় ধাপে হাত কেটে তিমি মাছের ছবি আঁকে। চতুর্থ ধাপে সে সারাদিন চুপ করে বসে ছিল। কাউন্সিলিংয়ের পর ওই শিক্ষার্থী নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। তবে প্রকৃত ব্লু হোয়েল গেমসের তথ্যমতে, তৃতীয় ধাপে নয়, ২৭ তম ধাপে হাত কেটে তিমি মাছের ছবি আঁকতে হয়। দেশে ব্লু হোয়েল হানা দিয়েছে এমন তথ্য গণমাধ্যমে আসার পর থেকে গেমটি নিয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ চলছে। প্রথম দিকে, অপূর্বার ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, এর ব্যবহারকারীদের প্রায় অধিকাংশ ব্লু হোয়েলে আসক্ত। যখন জানা গেল, আত্মহত্যার আগে অবশ্যই তিমি মাছের ছবি আঁকতে হয় এবং অপূর্বার হাতে আঁকা কোন ছবি ছিল না, তখন প্রায় সবাই হাস্যরস করে স্ট্যাটাস দিতে থাকেÑ ‘২০ তম ধাপে আছি’, ‘কিউরেটর টাস্ক দিয়েছে মাহফুজুর রহমানের গান শুনতে’, ‘৪৯ তম ধাপে আছি’, ও ‘ব্লু হোয়েলের ৫২ তম ধাপ অতিক্রম করছি’! আদতে এগুলো ছিল ট্রল এবং ব্লু হোয়েলে ৫২ তম কোন ধাপ নেই। তবে অনেকে এগুলো বিশ্বাসও করে নেন। এবং একই সঙ্গে অনেকের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, ওগুলো হাস্যরস। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে এখন এমন কোন ঘটনা ঘটলেই সবাই বিশ্বাস করে বসে থাকবে যেন ও ব্লু হোয়েল গেম খেলছে। আদতে ব্লু হোয়েল কোন গেম নয়, এটি তথাকথিত গেম নামের আত্মহত্যার পথ। এখানে কিউরেটর যা বলবে তাই করতে হবে। মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব মতে, কোন সুস্থ মানুষ অন্যের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে সব করতে পারে না। তথাকথিত গেম নামের মনস্তাত্ত্বিক এ খেলায় তাই করতে হয়! সামগ্রিক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি ও বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জাব্বার জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের মতো আর্থ-সামাজিক অবস্থার দেশে ব্লু হোয়েল আত্মহত্যার মতো মড়ক তৈরি করবে বলে আমি মনে করি না। তবে এ গেমটিতে তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার মতো বহু উপাদান আছে। বিশেষত এর চ্যালেঞ্জগুলো। তাই ব্লু হোয়েল গেম সম্পর্কে অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। কিন্তু রোগ হয়েছে বলে গেম খেলা বা ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে হবে এমন নয়। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য হচ্ছে দেশে এখন পর্যাপ্ত এই পরিমাণ দক্ষ সফটওয়্যার প্রযুক্তিবিদ গড়ে ওঠেনি। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ডার্ক ওয়েবে হস্তক্ষেপ করার মতো দক্ষতা রাখে না। ফলে ইন্টারনেটে যেসব অপরাধ ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
×