ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিম নিয়ে হৈচৈ

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

ডিম নিয়ে হৈচৈ

প্লাস্টিক কিংবা টিনের বালতি নিয়ে ডিম কিনতে যাওয়ার বিষয়টি কিছুটা কৌতুককর বটে। প্রলোভিত একাধিক ক্রেতা তাই করেছেন ফার্মগেটের খামারবাড়িতে সস্তায় ডিম কেনার জন্য। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ক্রেতাকে ফিরতে হয়েছে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে খালি হাতে। যে বা যারা খাঁচি বা কার্টন নিয়ে গিয়েছিলেন তারাও সফল হননি। বরং কয়েক হাজার ভঙ্গুর ডিম ভেঙ্গেছে ক্রেতা-বিক্রেতার হুলস্থুল, তুমুল বিশৃঙ্খলা ও পুলিশের লাঠিচার্জে। শুক্রবার ছিল বিশ্ব ডিম দিবস। প্রতিটি ডিম মাত্র তিন টাকায় বিক্রির আগাম ঘোষণা দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের পক্ষ থেকে। সহায়তায় ছিল সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। সস্তায় ডিম কেনার উদ্দেশ্যে সকাল থেকেই হাজির হতে থাকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, এমনকি দূর-দূরান্ত থেকেও। তবে শেষ পর্যন্ত হিসেব-নিকেশ করে দেখা গেছে, মাত্র তিনজন সৌভাগ্যবান ক্রেতা সেই ডিম কিনতে সক্ষম হয়েছেন। কেউ কেউ অতি ভিড়ের চাপে লুকোচুরি করে হাতে পেয়েছেন তিন-চারটি ডিম। ডিম নিয়ে হুলস্থুল বা লঙ্কাকা- যাই বলি না কেন, এ থেকে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা হলো তীব্র প্রোটিন ঘাটতির বিষয়টি। দেশে মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্যতা খুবই কম। বছরে বড়জোর দেড় শতাধিক। ডিম নিয়ে মানুষের মনে যে অহেতুক ভীতি আছে তাও অমূলক। বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের মতে, ছেলে-বুড়ো-নর-নারী নির্বিশেষে প্রায় সবাই প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে পারেন, যা হতে পারে মানবদেহের দৈনন্দিন প্রোটিনের অন্যতম প্রধান উৎস। কেননা, ডিমের তুলনায় হাঁস-মুরগি-ছাগল-ভেড়া-গরু-মহিষের মাংসের দাম অনেক বেশি। মাথাপিছু প্রাপ্যতাও কম। দুধও তাই। ভারত অথবা বিদেশ থেকে আমদানি অথবা চোরাই পথে এসব না এলে দাম হতো আরও চড়া। প্রাপ্যতা তো আরও কম। দেশ খাদ্য, প্রধানত ধান উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও প্রোটিনের ঘাটতির বিষয়টি সুবিদিত। এমনকি ডাল-গম উৎপাদনেও ঘাটতি রয়েছে। সে অবস্থায় এসব কৃষি ও খামারজাত পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হলে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যে ভরপুর। সাড়ে ১২ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে জনসাধারণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মিটিয়েও। জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে এই তথ্য প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনে এই সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও। এসবই ডিজিটাল কৃষির অবদান। বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ফল উৎপাদনে সপ্তম। আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি, বীজ, জৈব সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে এ উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়। এখন নজর দেয়া উচিত বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। গমের ঘাটতি এখনও আছে। এর পাশাপাশি ডাল, তেলবীজ, ডিম, মাংস, দুধ, মাছ, মসলা উৎপাদনেও ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, শুধু ভাতে পেট ভরে বটে, তবে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। গত কয়েক বছরে শাক-সবজি, ফলমূল উৎপাদন বাড়লেও মাছ, দুধ-মাংস জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ প্রোটিনে বিপুল ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। এদিকে সবিশেষ ও সমন্বিত দৃষ্টি দিতে হবে কৃষি, খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে। সরকারের ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পটি অত্যন্ত বাস্তবধর্মী ও গণমুখী। জৈব সার উৎপাদনে সহায়ক। হাঁস-মুরগি-গবাদিপশু উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক। মূলত এর মাধ্যমেই সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা ও সুষম খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হতে পারে। এজন্য ব্যয়ও খুব বেশি হবে না। বরং চাই সুষ্ঠু, সমন্বিত ও বহুমুখী পরিকল্পনা। প্রয়োজনে আধুনিক সমবায় প্রথাও সংযুক্ত হতে পারে। সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক চাহিদা এবং যোগাননির্ভর ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থাপনা ও বাজার ব্যবস্থা অপরিহার্য।
×