ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কূটনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন ট্রাম্প

একাকী হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

একাকী হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি তিনি বাতিলের উদ্যোগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন মিত্ররা এ চুক্তিকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক বিবেচনা করে। এএফপি। ‘আমেরিকা প্রথম’ নামে যে পররাষ্ট্র নীতি ট্রাম্প অনুসরণ করছেন তা অনেক বিশ্লেষকের মতে ‘আমেরিকা একাকী’ হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য ভবিষ্যত সঙ্কটের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ট্রাম্পের নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে কি কি দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছে তা বিশ্লেষকরা এখন বের করার চেষ্টা করছেন। তিনি বিভিন্ন সময় জাতীয়তাবাদী চেতনাপুষ্ট বক্তৃতা দিয়েছেন, সংরক্ষণবাদী চিন্তাভাবনার পরিচয় দিয়েছেন এবং কড়া ভাষায় প্রচুর বার্তা টুইট করেছেন। কেবল এসব কারণে তিনি পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করছেন তা সেটি সম্ভবত বলা যাবে না। কারণ এর মধ্য দিয়ে তিনি ব্যাপক কূটনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছেন। তিনি হয়তো এটি দেখাতে চাইছেন যে কোন আন্তর্জাতিক বন্ধন তাকে নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে প্রভাবশালী সুপার পাওয়ার হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। দেশটির এমন শক্তিশালী অবস্থান তৈরির পেছনে অবদান রেখেছেন দেশটির নেতৃবৃন্দ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নিজের মিত্রদের সঙ্গে একটি অটুট বন্ধন তৈরি করে রেখেছে। কিন্তু গত মাসে জাতিসংঘ সদর দফতরে দেয়া ভাষণে ট্রাম্প এটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তিনি কেবল তার দেশকেই অগ্রাধিকার দিতে চান। গবেষণা সংস্থা কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেশন্সের প্রধান রিচার্ড হাসের মতে, ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতির ভিত্তি উইথড্রল ডকট্রিন বা প্রত্যাহার তত্ত্বের ওপর। তিনি এখনও ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেননি। কিন্তু এটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তার কংগ্রেস এবং মিত্র দেশগুলো ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলে তিনি ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রস্তুত রয়েছেন। গত সপ্তাহে তার প্রশাসন জাতিসংঘের সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশীপ বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে গেছেন এবং বৃহৎ আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি নাফটা থেকেও নিজেদের প্রত্যাহারের কথা এখন স্পষ্ট করেই বলছেন। ট্রাম্প যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোচ্ছেন তাতে উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা ন্যাটোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নতুন করে প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার সময় এসেছে। কারণ নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় থেকেই ট্রাম্প এর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাওয়ার কথা বলে এসেছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তার দেশে এখনও ন্যাটো থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেনি ঠিকই তবে ট্রাম্পের চিন্তাভাবনা তার ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে স্পষ্ট নয়। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না তা পর্যালোচনার জন্য তিনি ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। ১৯৬টি দেশের অংশগ্রহণের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে এক এক করে বিভিন্ন চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে তাতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ। সাবেক শীর্ষ স্টাফ বেন রোডস মন্তব্য করেছেন, আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ থাকার সামর্থ্য যুক্তরাষ্ট্রের আছে কি না ট্রাম্প সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, এখন থেকে অন্য কোন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে উৎসাহ বোধ করবে না। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভস লে দ্রিয়ান বলেছেন, ‘আজকের দিনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহুপাক্ষিকতার অর্থ ও ভূমিকা বদলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য রয়েছে।’
×