ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী মাসের মধ্যে নিয়োগ পাচ্ছেন আরও ৮শ’ নারী গৃহকর্মী

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফের খুলছে হংকংয়ের শ্রমবাজার

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফের খুলছে হংকংয়ের শ্রমবাজার

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশ থেকে হংকং ৮শ’ নারী গৃহকর্মী নিয়োগ দেবে। এ কর্মীদের হংকংয়ের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান নিজেদের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কর্মীদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে হংকং নেবে। তিন বছর আগে বিএমইটি ও হংকং কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই স্মারকের ভিত্তিতে এ ৮শ’ গৃহকর্মীকে আগামী মাসের মধ্যে নিয়োগ দেবে বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এমওইউতে এক লাখ গৃহকর্মী নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ৩শ’ নারী কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে দীর্ঘদিন হংকং বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দেয়নি। তবে তারা প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালিয়ে গেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের থেকে এ দফায় ৮শ’ জন নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে হংকং কর্তৃপক্ষ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এক লাখ নারী গৃহকর্মী নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সঙ্গে হংকং কর্তৃপক্ষ একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছিল। এমওইউ স্বাক্ষরের পরপরই কয়েক শ’ গৃহকর্মীকে নিজ খরচে ‘হাউস কিপার’ পদে নিয়োগ দেয়। তাদের মাসিক বেতন ধরা হয় ৪৯০ মার্কিন ডলার। কর্মীরা একদিন সাপ্তাহিক ছুটিও ভোগ করতে পারবেন। থাকবে চিকিৎসা বীমা। নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের দুই মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে যায়। এখানে কোন কর্মীকে টাকা ব্যয় করতে হয় না। এক বছরের মধ্যে এক লাখ নারী কর্মী হংকং যেতে পারলে ভবিষ্যতে আরও কর্মী সেখানে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কর্মী নিয়োগের ধারাবাহিকতা হঠাৎ করেই হংকং কর্তৃপক্ষ বন্ধ রাখে। পরে দুই দেশের মধ্যে নানা দেন-দরবার হওয়ার পর আবার বাজারটিতে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, দেশের শ্রমবাজার বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। হংকং নতুন বাজারগুলোর মধ্যে একটি। তারা প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ খরচে কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে কেউ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না। দেশটিতে শ্রমের মূল্যও বেশি। হংকংয়ের মতো আরও কয়েকটি বাজার এ বছরের মধ্যে তৈরি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী কর্মীদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান দুই মাসের ‘ওরিয়েন্টেশন কোর্স’ করাচ্ছে। আর যারা একেবারে নতুন তাদের ছয় মাসের ট্রেনিং দেয়া হবে। তারা বিনা খরচে হংকংয়ে নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এখানে কোন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারবে না। কারণ পুরো খরচ দিয়েই নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান নারী কর্মীদের হংকং নিচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগী কেউ নেই। সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল হংকং সফর করেছে। উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল হংকং সফর করার পরই হংকং কর্তৃপক্ষ ৮শ’ নারী কর্মী নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশী নারী কর্মীরা সুনাম অর্জন করায় হংকং কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হংকং প্রায় ২৬০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। পৃথিবীর নানা জাতি, ভাষা ও বর্ণের মানুষের দেশ হংকং। বর্তমানে দেশটিতে কয়েক হাজার বাংলাদেশী বসবাস করেন। পাহাড় আর সাগরঘেরা এ অঞ্চলটিতে বর্তমানে নারী গৃহকর্মী কাজ করছেন প্রায় তিন লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে ফিলিপিন্সের এক লাখ ৯০ হাজার, ইন্দোনেশিয়ার এক লাখ ৬০ হাজার, থাইল্যান্ডের ৬ হাজার, বাংলাদেশের এক হাজার ৩শ’ জন। আগামী মাসেই বাংলাদেশের আরও প্রায় ৮শ’ কর্মী হংকংয়ে নিয়োগ পাবেন। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, হংকংয়ে বাংলাদেশী বিপুলসংখ্যক গৃহকর্মী নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। এ বাজারটির প্রতি নজর দেয়া হলে জনশক্তি রফতানির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। কারণ হংকংয়ে গৃহস্থালি কাজে কর্মী সঙ্কট রয়েছে। এ সংঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক গৃহকর্মী পাঠানো সম্ভব। হংকংয়ে গৃহকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া খুব একটা জটিল কিছু নয়। ফিলিপিন্সসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কর্মীরাই মূলত হংকংয়ের গৃহকর্মীর চাহিদা মিটিয়ে আসছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ফিলিপিন্স থেকে গৃহকর্মী যাওয়া কমে গেছে। ফলে দেশটিতে গৃহকর্মী সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে দেশটিতে বাংলাদেশী গৃহকর্মী নিয়োগ করা সহজ হবে। হংকংয়ে গৃহকর্মীরা একই মালিকের অধীনে টানা পাঁচ বছর কাজ করতে পারবেন। ফলে কর্মীরা ‘লং টাইম সার্ভিস বোনাস’ হিসেবে বেতনের অতিরিক্ত এককালীন পাঁচ লাখ টাকাও পাবেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ যুবশক্তি শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, যার অর্ধেক নারী। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য দেশে পর্যাপ্ত চাকরিক্ষেত্র সৃষ্টি সম্ভব হয় না। তাই বৈদেশিক কর্মসংস্থানে যথাযথ নিয়োগের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।
×