ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোলটেবিল বৈঠক

রোহিঙ্গা ইস্যুতে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা ইস্যুতে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটা বেশ পুরনো সমস্যা হলেও এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিকভাবে কাজ করেনি গণমাধ্যম। মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সঙ্কট। এ ইস্যুতে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু গণমাধ্যমে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার ব্যত্যয় হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের উস্কানিও এসেছে। তাই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মূলধারার গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরী।’ রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘বুদ্ধিস্ট জার্নাল এ্যান্ড অনলাইন মিডিয়া ফোরাম’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিকরা এসব কথা বলেন। ‘সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা : প্রেক্ষিত, রোহিঙ্গা সঙ্কট’ শীর্ষক এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সৌগতের সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়। ভারত, রাশিয়া এবং চীন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়গুলো নিয়ে পক্ষে দাঁড়িয়েছে। যখন এ রোহিঙ্গারা ওইসব দেশসহ বিশ্বের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে তখন তারাও বুঝবে, অর্থনৈতিক দিক নয়, জাতীয় নিরাপত্তাই সবচেয়ে বেশি জরুরী। বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জামায়াত-বিএনপি লাভবান হচ্ছে। জামায়াত তাদের পেছনে অর্থলগ্নি করছে। ফান্ড তৈরি করছে। রোহিঙ্গাদের দিয়ে জঙ্গী-সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাবে। সাংবাদিক নেতারা বলেন, ‘যদি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে পর্যায়ক্রমে কাজ করা হতো তাহলে বিষয়টি সবার নজরে থাকত। এমনকি মিয়ানমার পুনরায় এ ধরনের কাজ করার সাহস দেখাতে পারত না। কিন্তু এখনও এ ঘটনার গভীরে গণমাধ্যমে কোন কাজ হচ্ছে না। শুধু ইভেন্ট আকারে ভাল নিউজ করা হচ্ছে। এর আলোকে করা হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।’ বিভিন্ন প্রতিবেদন ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি কোন ধর্মীয় ইস্যু নয়। এটি একটি অঞ্চলকেন্দ্রিক ইস্যু। স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সে দেশের সরকার ক্রমাগত ওই অঞ্চলের মানুষদের অন্যত্র বিতাড়িত করছে। তাদের বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। মূলত এ কারণেই সমস্যার সৃষ্টি। এটা কোন ধর্মীয় সংঘাতের ফল নয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, মিয়ানমারে ৫০ বছর ধরে সেনা শাসিত সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সেনারা বর্বর কর্মকা-গুলো করছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায় এ দাঙ্গার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। বাংলাদেশে কোন কোন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে দোষী করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায় শঙ্কায় রয়েছেন। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ গভীর সঙ্কটে রয়েছে। এ সঙ্কটকে পুঁজি করে সংঘবদ্ধ দুষ্ট চক্র কাজ করছে। মিডিয়ার মাধ্যমে কেউ কেউ উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যমকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, এ ইস্যুটি তুলে ধরার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সম্পাদক থেকে শুরু করে মাঠের রিপোর্টার, টকশোর উপস্থাপক, সম্পাদনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে পর্যাপ্ত জ্ঞান, শব্দচয়ন, অতিশয় বর্ণনা ইত্যাদির ব্যাপারে যতœবান হতে হবে। স¤প্রীতির সবচেয়ে বড় দুশমন হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বলে মন্তব্য করে শাহরিয়ার কবির বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে বর্বর অত্যাচার-নির্যাতন চলছে- তা কখনও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, এটি জাতিগত দাঙ্গা। মুসলমানদের বিরুদ্ধে এ দাঙ্গা নয়। ফেসবুকের মাধ্যমে দায়িত্বহীন অনলাইনগুলো সা¤প্রদায়িকতাকে উসকে দিচ্ছে। তিনি বলেন, জামায়াত-বিএনপি রোহিঙ্গাদের নিয়ে জঙ্গী-সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি করতে চাচ্ছে। তাদের নিয়ে তারা রাজনৈতিক খেলায় নেমেছে। জামায়াত নেতারা মিয়ানমারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসতে গাইড হিসেবে কাজ করছে। ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, রামু এবং নাসিরনগরের হামলা ঘটেছে ফেসবুকের মাধ্যমে। রামুতে এখন বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী ৩৭ হাজার থেকে ১৪ হাজারে নেমে এসেছে। ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়র সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, জুলফিকার আলী মানিক, রাহুল রাহা, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, নির্মল রোজারিও, ডাঃ অসীম রঞ্জন বড়ুয়া, চারু উত্তম বড়ুয়া, প্রকৌশলী পুলক কান্তি বড়ুয়া, রাহুল বড়ুয়া, সৌমেন বড়ুয়া, ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন চিš§য় মুৎসুদ্দি।
×