ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হয়রানি থেকে বাঁচতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আমরণ অনশন

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

হয়রানি থেকে বাঁচতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আমরণ অনশন

সংবাদদাতা, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল, ১৪ অক্টোবর ॥ ভূঞাপুরে পুলিশের নির্যাতন ও মামলা থেকে রেহাই পেতে আমরণ অনশন করেছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। শনিবার বেলা ১১টায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম তার ছেলে বেলাল, ছেলের বউ ও দুই শিশু নাততিকে নিয়ে ভূঞাপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে আমরণ অনশনে বসেন। পরে বিকেল ৩টায় কালিহাতী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মাসুদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী ও ভূঞাপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক হারুনুর রশিদ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতিতে অনশন ভঙ্গ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম ও তার ছেলে বেলাল জানান, ২০১০ সালে সন্দেহজনকভাবে পুলিশ তাদের বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় পুলিশ তার কাছ থেকে কোন মাদকদ্রব্য না পেয়ে চলে যায়। পরে তৎকালীন ভূঞাপুর থানার এক এএসআই মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে পুলিশের সোর্স হতে বাধ্য করে। এরপর সে পুলিশের দেখানো পথে শুধু এলাকার মাদকসেবী ও ধনাঢ্য পরিবারের লোকজন ধরিয়ে দিতে বলে। মাদক বিক্রি করে ধরিয়ে দেয়া মাদকসেবীদের কাছ থেকে পুলিশ অবৈধভাবে আদায় করতে থাকে লাখ লাখ টাকা। আর সোর্স হিসেবে কাজ করার পুরস্কারস্বরূপ বেলাল পেত সামান্য কিছু নগদ টাকা ও মাদক। পুলিশের দেয়া মাদক বিক্রি করতে করতে একসময় সে নিজেই মাদক ব্যবসায়ী কারবারি হয়। এ ছাড়া উদ্ধারকৃত মাদক বিক্রির দায়িত্বও দেয়া হয় তাকে। এক সময় বিষয়টি তার পরিবারের দৃষ্টিগোচর হলে পুলিশের পাতা এই ফাঁদ থেকে তাকে বের করে আনার চেষ্টা করে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম। বেলাল নিজেও এ অসহনীয় জীবন থেকে বের হয়ে আসতে চায়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ। বেলাল স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে তাকে ফাঁসানো হয় মিথ্যা মামলায়। মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য টাকা দিলেও চূড়ান্ত তালিকায় নাম যায়নি বেলালের। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম আরও জানান, গত শুক্রবার রাতে তার বাড়ি পুলিশ হানা দিয়ে ধরে নিয়ে আসে ভূঞাপুর থানায়। তার মুক্তির জন্য লাখ টাকা দাবি করে। পরে উর্ধতন এক কর্মকর্তার ফোনে শেষ রাতে তাকে ছেড়ে দেয়। এদিকে পুলিশের কথামতো নিরীহ মানুষদের মাদক দিয়ে হয়রানি করায় এলাকাবাসীও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বেলাল ও তার পরিবারের ওপর। একদিকে পুলিশের সোর্সের কাজ থেকে বিরত থাকার কারণে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, মামলা ও ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। অন্যদিকে যে সকল মাদকসেবীকে ধরিয়ে দিয়ে আর্থিক ক্ষতি করেছে তাদের চাপে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি। বেলালের স্ত্রী আলেয়া বেগম বলেন, আমি না খেয়ে থাকতে রাজি আছি এই ফাঁদ থেকে আমার স্বামীর মুক্তি চাই। আমার দুটি শিশু সন্তানের বাঁচানের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুস্থ জীবন ভিক্ষা চাই। পুলিশের এমন ভূমিকায় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাম্মদ আসলাম খান বলেন, কোন পুলিশ সদস্য যদি সামারি করার জন্য বা অন্য কোন কারণে নিরহ মানুষদের মাদক দিয়ে হয়রানি করে এবং তা প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের আইনের আওতায় এনে বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
×