ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার বিভাগ সম্পর্কে বিএনপির বক্তব্য সঠিক ছিল ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

বিচার বিভাগ সম্পর্কে বিএনপির বক্তব্য সঠিক ছিল ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপির বক্তব্য সঠিক ছিল বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি বিদেশে যাওয়ার আগে সত্য কথাগুলো বলে দিয়েছেন। আর তার বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে সরকার বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। এতে সরকারের ইনটেশনটা কি তাও প্রমাণিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ সাম্প্রতিক ঘটনা প্রমাণ করে খালেদা জিয়ার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে সরকার তার বিরুদ্ধে সাজা দিতে চায়। কিন্তু এতে কোন লাভ হবে না, বরং সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রবিবার বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহেই খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে পারেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতি বলে দিয়েছেন, এখন সর্বোচ্চ আদালতের ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এখানে আমাদের নতুন করে কিছু বলার নেই। যে কোন বুদ্ধিমান লোক, যারা প্রধান বিচারপতির বিবৃতি পড়বেন, তারা খুব পরিষ্কার করে বুঝে যাবেন যে ‘হোয়াট সারকামসটেন্সেস চীফ জাস্টিস হ্যাভ টু লিভ? এ্যান্ড হোয়াট ইজ গোয়িং টু হ্যাপেন। দিস স্টেটমেন্ট হ্যাজ স্টেটেড দ্য ফ্যাক্ট।’ তিনি সত্য কথাগুলো বলে দিয়েছেন। ফখরুল বলেন, আমাদের তরফ থেকে এ দাবি থাকবে যে যার যা কাজ, সেটা যেন তিনি স্বাধীনভাবে করতে পারেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, আমরাও একই আশঙ্কা করছি ষোড়শ সংশোধনীর রায় পরিবর্তন বা এক্সপাঞ্জ করা হতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন ওই জায়গায় নয়। আমাদের প্রশ্ন, আপনি বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখতে চান কি না। এটা আমাদের মৌলিক প্রশ্ন। রায় কী হলো, না হলো এটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। ফখরুল বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে কথাটা সিগনিফিকেন্ট। এ জিনিসটাকে আমরা সিরিয়াসলি দেখছি যে সরকাকে কে ভুল বোঝাচ্ছে? কারা সেদিন প্রধান বিচারপতিকে অফিস ছেড়ে যেতে বাধ্য করল? যেদিন তার যোগদান করার কথা। কারা ফলস ডকুমেন্ট তৈরি করল? তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাওয়ার পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রী কয়েক ঘণ্টা কথা বলার পর বেরিয়ে এসে বলেছেন, বিচার বিভাগ কিভাবে চলবে, কর্মকর্তাদের নিয়োগ কিভাবে হবে এ সব বিষয়ে আলাপ করেছি। মির্জা ফখরুল বলেন, এটা সরাসরি বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ। প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে আর কারও এখতিয়ার নেই, সেখানে হাত দেয়ার। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আগেই যেটা আশঙ্কা করেছিলাম বিচার বিভাগ আর একেবারেই স্বাধীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন, আইন মন্ত্রণালয় যা বলবে, সেটাই করবে। তার প্রমাণ হচ্ছে, কোন রকমের আইন-কানুনের বাছ-বিচার না করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি। ফখরুল বলেন, আইন বলছে, উচ্চ আদালতে একটা মামলা বিচারাধীন থাকলে সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত সেই মামলা নি¤œ আদালতে স্থগিত থাকবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চলছে, তার মধ্যে দুইটি মামলা হাইকোর্টেও সিদ্ধান্তের বিষয়ে পেন্ডিং আছে। কোন শুনানি হয়নি, অথচ ওয়ারেন্ট জারি করে দেয়া হয়েছে। এর পেছনে একটা জিনিস পরিষ্কার যে, তারা খুব দ্রুত এ মামলাটা নিষ্পত্তি করতে চায়। তারা প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রীকে সাজা দিতে চায়। এটা দেশের মানুষ বোঝে। এসব করে কখনও কোন লাভ হয় না, বরং ক্ষতি হয়। ফখরুল বলেন, আমরা আগেই বলেছি যে এই নির্বাচন কমিশনের ওপর আমাদের আস্থা নেই। জিজ্ঞেস করবেন, আপনারা সংলাপে যাচ্ছেন কেন? এ ছাড়া তো এই মুহূর্তে আমাদের কাছে বিকল্প কিছু নেই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, রীতিনীতি-নিয়ম যা আছে, আমরা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে চাই। আমরা কমিশনকে বলতে চাই, সঠিকভাবে চলেন। সংবিধান আপনাকে যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিয়েছে, তাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, যারা এ দায়িত্বে আসেন, তারা সব সময় এটা করতে পারে না। আমরা সর্বোচ্চ নীতি নির্র্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাচ্ছি। সেখানে আমাদের বক্তব্য লিখিত আকারে উপস্থাপন করব।
×