ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেশি শিবির ক্যাডার যোগ দিচ্ছে বিএনপিতে, কিছু যাচ্ছে আওয়ামী লীগে

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

বেশি শিবির ক্যাডার যোগ দিচ্ছে বিএনপিতে, কিছু যাচ্ছে আওয়ামী লীগে

শংকর কুমার দে ॥ গর্ত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে জামায়াত-শিবির। জামায়াতের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এখন তুঙ্গে। পরিচয় গোপন করে বিএনপি-আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে তারা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন কৌশল নিচ্ছে জামায়াত-শিবির। জামায়াত-শিবিরের কর্মী, ক্যাডারদের বেশিরভাগই যোগ দিচ্ছে বিএনপিতে। আনুপাতিক হারে নগণ্যসংখ্যক হলেও তাদের কর্মী-ক্যাডাররা আওয়ামী লীগেও যোগ দিচ্ছে। গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর উত্তরা থেকে গ্রেফতার হওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ আটজনকে পৃথক দুই মামলায় পাঁচদিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ অব্যাহত থাকলেও হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে জামায়াতের। ফলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের সংলাপের বসার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধও করা হতে পারে। জামায়াতের আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীর বিচারে ফাঁসি হওয়া এবং বর্তমান আমিরসহ অনেকের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগ তদন্তাধীন ও বিচারাধীন। যুদ্ধাপরাধীর দল হিসেবে জামায়াতের গায়ে তকমা লাগানো থাকার সুবাদে এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন করতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এতে জামায়াত-শিবিরের অনেকে নেতাকর্মী ও ক্যাডার পরিচয় গোপন করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর উত্তরা থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ নয়জনকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেয়ার প্রতিবাদে দলটি বিক্ষোভ ও হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করে। কিন্তু বিক্ষোভ ও হরতালের কর্মসূচীতে দলটির নেতাকর্মী, ক্যাডারদের রাজপথে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। কারণ দলের নেতাকর্মী, ক্যাডাররা পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছে। আবার দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানার অনেক নেতাকর্মী ও ক্যাডারের বিরুদ্ধে জ্বালাও-পোড়াও ঘটনায় মামলা ঝুলে আছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে জামায়াত-শিবির যেভাবে রাজপথে প্রকাশ্যে সক্রিয় হয়ে দৃশ্যমান ছিল তা এবারের হরতালে বিন্দুবিসর্গও দেখা যায়নি। জামায়াত-শিবির মূলত নাশকতা ও সহিংস রাজনীতির মাধ্যমে এতদিনের যে ধর্মীয় রাজনীতি করে আসছে তা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। এমনকি জামায়াতের হরতালে বিএনপি প্রকাশ্যে সমর্থন দিলেও তা সফল করা সম্ভবপর হয়নি। কিন্তু হরতালের আগে ও পরে হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা কোথায় গেল তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ আটজনই এ ধরনের তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় প্রথমদিকে দু’-একজন নেতার ফাঁসি কার্যকর হলে হরতালে নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে দেখা যায়। তবে পরবর্তী সময়ে হরতালগুলোতেও নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ কমে আসে, যা এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়। হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন নাশকতার মামলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে এ সরকারের দুই মেয়াদে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও ক্যাডাররা বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে যোগ দিয়েছে। আবার একটি বিরাট অংশ জঙ্গীবাদ বা উগ্রপন্থায় জড়িয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। মাঠপর্যায়ের বিরাট অংশ জামায়াতের ধর্মীয় রাজনীতির ধোঁকাবাজি থেকে দূরে সরে গিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি হওয়ার পর এবং জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যাবজ্জীবন কারাদ- হওয়ার পর দলটির মেরুদ- ভেঙ্গে গিয়ে এখন দলীয় কোন্দলে রূপ নিয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর উত্তরায় গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর উত্তরা থেকে গ্রেফতার হওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ নয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, জামায়াতের নতুন কৌশল হচ্ছে, কেন্দ্রীয় নেতারা তো আর বিএনপি বা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারবেন না। আবার দলীয় পরিচয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশও নিতে পারছেন না। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে জামায়াত গোপনে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেয়ারও চিন্তাভাবনা করছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কদমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজু মিয়া আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে বলেছেন, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে অস্ত্র-বিস্ফোরক ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়। কদমতলী থানার পুলিশ পৃথক দুই মামলায় রিমান্ডে নেয়ার পর এখন জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
×