ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা ॥ এককভাবে বাতিল করার অধিকার নেই- মোগেরিনি

পরমাণু চুক্তির পক্ষে বিশ্ব নেতারা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

পরমাণু চুক্তির পক্ষে বিশ্ব নেতারা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান মিত্রসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরোধিতা সত্ত্বেও তারা ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির পক্ষে রয়েছে। খবর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও বিবিসির। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুক্রবার ঘোষণা করেন যে, কংগ্রেসে য়াওয়ার আগে ৯০ দিন পর পর চুক্তি প্রত্যয়নের জন্য প্রেসিডেন্টের যে স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় তিনি আর তাতে সই করবেন না। রবিবার এই ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার শেষদিন। ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত এতে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে কংগ্রেসকে ৬০ দিনের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি বাতিল করবে কিনা? ২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসনের সময় ইসরাইলের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ইরানের সঙ্গে ছয়টি প্রভাবশালী দেশ এই পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং এটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাভ করে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইরান পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশ হচ্ছে ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও চীন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইরানের পরমাণু কর্মসূচী সীমিত করার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। চুক্তি প্রত্যয়নে অনীহা প্রকাশ করার পাশাপাশি ট্রাম্প ইরানের প্রতি নানা ধরনের বিদ্বেষমূলক কথা ও হুমকি দেন। এতে বিশ্বের রাজনৈতিক পরবেশ নিমিষেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ও জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল এক যৌথ বিবৃতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেনÑ আমাদের অভিন্ন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছিল, তাই এককভাবে কোন দেশ তা রদ করতে পারে না। ট্রাম্পের ইরান চুক্তি বিরোধী বক্তব্যের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে দুঃখিত; তবে সেই সঙ্গে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছে যে শেষ পর্যন্ত চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোঘেরিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, সম্মিলিত প্রয়াসে সম্পাদিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তি যখন সুষ্ঠুভাবে অনুসৃত হচ্ছিল তখন এককভাবে কোন দেশ তা বাতিল করার অধিকার সংরক্ষণ করে না; কেননা, এটি কোন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নয়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত এই চুক্তি এখন যেমন আছে তেমনি ভবিষ্যতেও তা কার্যকর থাকবে। চুক্তিতে অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ চীন ট্রাম্পের বক্তব্যের পর তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য না করলেও ইতোপূর্বে দেশটি ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিকে মেনে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচীর ওপর নজরদারির জন্য নিয়োজিত আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান ইয়ুকিয়া আমানো বলেছেন, ইরান অক্ষরে অক্ষরে চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলছে এবং দেশটির সব ধরনের পারমাণবিক কার্যক্রমের ওপর সর্বক্ষণিক তদারকি অব্যাহত আছে। এত কিছুর পরও ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে নতুন নতুন শর্ত আরোপ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। যে চুক্তি হয়েছিল শুধু পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য সেখানে ট্রাম্প সেদেশের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণসহ নানাবিধ শর্ত আরোপের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। এ জন্য ইসরাইল ও ইরানের বৈরী দেশ সৌদি আরব তাকে সমর্থন ও অভিনন্দন জনালেও বিশ্বের প্রভাবশালী অনেক দেশই ট্রাম্পকে সমর্থন করছে না। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প তার একরোখা নীতিতে অটল আছেন। রিপাবলিকান স্পীকার পল রায়ানও ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ট্রাম্পের গৃহীত এসব পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানী তার ভাষণে ইরানের গণতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদের জন্য পঞ্চাশের দশক থেকে মার্কিনী বৈরী তৎপরতার কথা ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ কাজে তারা সৌদি একনায়ক ও উপসাগরীয় দেশগুলোকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। রুহানী তার বক্তব্যে বলেন, কীভাবে একটি বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক চুক্তি একটি দেশের প্রেসিডেন্ট তার খেয়াল খুশিমতো বাতিল করে দিতে পারে? রুহানী বলেন, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্ব মানচিত্রে নিঃসঙ্গ বা একঘরে হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে যে, ইরান পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, চুক্তি প্রত্যয় না করায় ট্রাম্পের বিপজ্জনক সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ট্রাম্প একটি আন্তর্জাতিক সঙ্কটের জন্ম দিলেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে এর মিত্রদেশগুলোকেও বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া হলো।
×