ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শরীয়তপুরে থামছে না মা ইলিশ শিকার

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

শরীয়তপুরে থামছে না মা ইলিশ শিকার

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ১৪ অক্টোবর ॥ জেল-জরিমানার পরও থামছে না শরীয়তপুরে জেলেদের পদ্মায় ইলিশ ধরা। জেলেরা অভিযোগ করেছেন, জেলেদের জন্য সরকারী বরাদ্দের চাল তারা সঠিকভাবে পাচ্ছে না। জেলা মৎস্য বিভাগ সরকারী বরাদ্দের চাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করায় তা প্রকৃত জেলেদের মধ্যে সঠিকভাবে বিতরণ করা হয় না। এদিকে জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, তারা নদীতে জেলেদের ইলিশ ধরা বন্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে, মৎস্য বিভাগ পদ্মায় ইলিশ মাছ ধরা বন্ধে যে অভিযান চালাচ্ছে তা তামাশা ছাড়া কিছুই না। দিন-রাত শত শত জেলে নদীতে ইলিশ মাছ শিকার করছে। সফল হচ্ছে না প্রশাসনের অভিযান। শনিবার সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ছুরিরচর এলাকায় প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কয়েক লাখ টাকার মা ইলিশ। সেখানকার স্থানীয় আড়ৎদার লাল মিয়া বেপারি, মোশাররফ সরকার ও হোসেন হাওলাদারসহ পদ্মাপারের বিভিন্ন বাজারের আড়ৎদার, পাইকার ও দাদন ব্যবসায়ীরা ঐ সব এলাকায় দিনরাত লাখ লাখ টাকার মা ইলিশ বিক্রি করছে। উত্তর তারাবুনিয়ার চেয়ারম্যান বাজার ঘাটের পূর্বপাশের এলাকা, চরভাগা ইউনিয়নের গৌরাঙ্গবাজার ও মোনাই হাওলাদার বাজার, কাঁচিকাটা ইউনিয়নের দুলারচর বাজারসহ পদ্মাপারে যেন ইলিশের হাট বসে। বিশেষ করে গভীর রাতে বা ভোর ৪টা থেকে শুরু করে সকাল ১০টা পর্যন্ত ও দুপুর ১টা থেকে শুরু করে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ইলিশ বিক্রির ধুম পড়ে যায় এসব বাজার ও হাটে। তাছাড়া ঐসব এলাকার কিছু খুচরা পাইকার মা ইলিশ নিয়ে প্রতিনিয়ত হাজির হচ্ছে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। তারা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে ইলিশ মাছ বিক্রি করছে। আড়ৎদার বিভিন্ন স্থানে খাতাপত্র নিয়ে বসে রয়েছে। মাছ ধরা জেলেদের ট্রলার তীরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো নিলাম ডাকের মাধ্যমে জনগণের কাছে বিক্রি করছে তারা। এক একটি জেলে ট্রলারে প্রতিবার নিলামে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা এমনকি তার চেয়েও বেশি টাকার মাছ বিক্রি করছে। আর পুলিশ, কোস্টগার্ড কিংবা মৎস্য অফিসের লোকজন আসার আগেই আবার কৌশলে বেচাকেনা বন্ধ করে দিচ্ছে। চরভাগা ইউনিয়নের বাসিন্দা খালেকুজ্জামান ও হাসান সরকার অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের যোগসাজশে আড়ৎগুলোতে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। অভিযানের নামে মৎস্য বিভাগসহ পুলিশ প্রশাসনের লোকজন তামাশা করছে। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সকলের সামনেই তারা টাকার বিনিময়ে লোকজনকে ছেড়ে দিচ্ছে। উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের মাছ ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া বলেন, সখিপুর থানা পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন যদি ঠিকমতো ডিউটি করত তাহলে আমরা মাছ বেচাকেনা করতে পারতাম না। তাছাড়া নদী থেকে নৌকা ও জেলেদের ধরে টাকার বিনিময়ে নদীতেই ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশের লোকজন। আমরা তাদের কি বলব। মাছ ধরা এবং বিক্রির কথা স্বীকার করে ভেদরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুস সামাদ বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। অসাধুু জেলেরা আমাদের অজান্তে মাছ ধরে বিক্রি করতে পারে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহতভাবে চলছে।পুলিশের উপস্থিতির কথা অস্বীকার করে সহকারী পুলিশ সুপার (ভেদরগঞ্জ সার্কেল) থান্ডার খায়রুল হাসান বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা মাছ ধরে বিক্রি করতে পারে। তবে আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি । ভোলায় ১৩ দিনে ১৫৫ জেলের দন্ড নিজস্ব সংবাদদাতা ভোলা থেকে জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ শিকারের দায়ে গত ১৩ দিনে ১৫৫ জেলেকে কারাদন্ড ও ৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ মিটার জাল জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১৩দিনে মা ইলিশ সংরক্ষণে ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় ৩০৩টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে ১৩৪টি। এ সময় ২৬টি নৌকা ও ট্রলার জব্দসহ ২ হাজার ১৮৬ কেজি মাছ উদ্ধার করা হয়।
×