ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শান্তির বার্তা ও শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

শান্তির বার্তা ও শেখ হাসিনা

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নারকীয় তা-ব ও সীমাহীন নৃশংসতা এখনও থামেনি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস প্রদানের আড়ালে চলছে পরিকল্পিতভাবে ওদের বিতাড়নের ন্যক্কারজনক কাজটি। অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে স্বজন-প্রিয়জন হারিয়ে ইতোমধ্যে পাঁচ লক্ষাধিক দুর্ভাগা রোহিঙ্গা নিজেদের বাসভূমি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী আমাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর জা¡লাও-পোড়াও নীতিতে অবিচল থাকা উগ্র বার্মিজরা এবার ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ নামে নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা কখনও নিজ দেশে ফিরে যেতে পারলেও মাথা গোঁজার ঠাঁই না পায়। তাই বাংলাদেশ অভিমুখী রোহিঙ্গাদের ঢল থামছে না। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিদিনই আসছে বহু রোহিঙ্গা। গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমনের যে স্রোত শুরু হয়েছে তা থামার কোনই লক্ষণ নেই। আন্তর্জাতিক চাপ ও নিন্দার ফলে মাঝে মধ্যে অত্যাচারের মাত্রা একটু কমলেও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ চলছে অব্যাহত ধারায়। মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী একটি ঘৃণ্য কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে তাড়িয়ে দিয়েও তাদের মন তৃপ্ত হয়নি। বসতবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েও নতুন করে আবার রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছে। উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার যে, অভাগারা নিজেদের বসতবাটিতে কোনদিন ফিরতে পারলেও যাতে বসবাস করতে না পারে। পুকুরের পানি পর্যন্ত নষ্ট করে দিচ্ছে ওই বর্বরের দল। গত ২ অক্টোবর সোমবার বাংলাদেশে এসেছিলেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচির দফতরের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে। তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার রাজি হয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য এ মাসের মধ্যেই একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। বাংলাদেশের তরফ থেকে একটি নতুন চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাবও করা হয়েছে। চুক্তির খসড়াও হস্তান্তর করা হয়েছে। মিয়ানমারের এক মন্ত্রীর সফর এবং আমাদের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে চুক্তি সম্পাদনের কাজটি বেশ ইতিবাচক মনে হলেও বিশেষজ্ঞ মহল বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না। কারণ, কূটকৌশল ও মিথ্যাচারের বেসাতিতে মিয়ানমারের অতীত ইতিহাস খুব সুখকর নয়। মিয়ানমার চুক্তি করলেও তা যে তারা রক্ষা করবে সে বিষয়েও অনেকের সন্দেহ রয়েছে। বিরাজমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশটির শাসকদের ওপর আস্থা রাখা একেবারেই অসম্ভব বলে অনেকেই মনে করছেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালুর নামে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর একক কর্তৃত্বই ওখানে শেষ কথা। পার্লামেন্টের ২৫ ভাগ আসন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর হাতে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান তো দূরের কথা মিয়ানমারের প্রবল প্রতিপত্তিশালী সেনাবাহিনীই তাদের সহ্য করতে পারছে না। সমস্যাটা মূলত সেখানেই। মিয়ানমারের মন্ত্রী মহোদয় যখন ঢাকায় আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছিলেন তখনও রোহিঙ্গাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চলছিল। তাদের বাড়িঘর দাউ দাউ করে জ্বলছিল। তাই মিয়ানমার সরকারের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা দায়। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ নিঃশর্তে বন্ধ করে মানবিক এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সহিংসতার মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য এখনই তার ব্যবস্থা করতে হবে। জাতিসংঘের তত্ত্ব¡াবধানে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পুনর্বাসনের জন্য পাঁচটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা অর্থনৈতিক উন্নতি চাই, মানব ধ্বংস নয়, মানব কল্যাণ চাই।’ ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৭২তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার পাশাপাশি সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যার ভয়াবহতা তুলে ধরে এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সম্মিলিত পদক্ষেপ এবং ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর চালােেনা ওই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রত্যাশা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বিশ্ব সংস্থার ১৯৩টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের সামনে চতুর্দশবারের মতো বাংলায় দেয়া ভাষণের শুরুতেই রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার হৃদয় আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত। কেননা, আমার চোখে বার বার ভেসে উঠছে ক্ষুধার্ত, ভীতসন্ত্রস্ত ও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মুখচ্ছবি। আমি মাত্র কয়েকদিন আগেই আমার দেশে আশ্রয় নেয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে দেখা করে এসেছি, যারা ‘জাতিগত নিধন’- এর শিকার হয়ে আজ নিজ দেশ থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত। অথচ তারা হাজার বছরেরও অধিক সময় যাবৎ মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে।’ নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের দুঃখ-দুর্দশা আমি গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারি। কারণ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর আমি আমার ছোট বোনকে নিয়ে ছয় বছর উদাস্তু জীবন কাটিয়েছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে চলমান নৃশংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থার ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। এই নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার রেহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো ঠেকানোর জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দেশটির অভ্যন্তরে স্থলমাইনও পুঁতে রেখেছে।’ মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা বন্ধে এবং সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ও জাতিসংঘের মহাসচিবকে শেখ হাসিনা ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে নিজ ভূখ- হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত আট লাখেরও অধিক (এখন দশ লাখ) রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। এসব মানুষ যাতে নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, এখনই তার ব্যবস্থা করতে হবে।’ রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে জাতিসংঘের অধিবেশনে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। গভীর সঙ্কটটি নিরসনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত এবং নিখাঁদ মহানুভবতায় উদ্ভাসিত আন্তরিক বক্তব্য সারা বিশ্বে বেশ সাড়া ফেলে দেয়। অত্যন্ত আবেগপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের চরম দুঃখ-দুর্দশার কথা বিশ্ব সংস্থায় তুলে ধরে তিনি সারাবিশ্বের মানুষদেরও উদ্বেলিত করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণ দেশে-বিদেশে সাড়া জাগায়। রোহিঙ্গাদের মর্মস্পর্শী দুঃখ-দুর্দশার বিশদ বিবরণ সংবলিত তার হৃদয়গ্রাহী ভাষণ উপস্থিত বিভিন্ন দেশের সম্মানিত প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোড়ন তোলে। তাদের উদ্বেলিত করে, হৃদয় জয় করে, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা অর্জন করে। শেখ হসিনার বক্তব্যে মিয়ানমারের পশুর চেয়েও অধম সেনাবাহিনীর হিংস্র সেনাসদস্যদের হাতে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের একটি বাস্তব চিত্র বিশ্বসভার প্রতিনিধিদের সামনে ফুটে ওঠে। সুলিখিত ভাষণটি সাবলীল ও সুন্দরভাবে তুলে ধরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা উপস্থিত সবাইকে আবেগপ্রবণ করে ফেলেন। টেলিভিশনে সরাসরি প্রচারিত ভাষণটির মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার রোমহর্ষক কর্মকা- সম্পর্কে জানতে পেরে সারাবিশ্বের শ্রোতা-দর্শকরাও সমভাবে ব্যথিত হয়। বিস্মিত হয় এবং রোহিঙ্গাদের জন্য আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। জনদরদী, দৃঢ়চেতা, স্পষ্টবাদী এবং বিরল মানবিক গুণাবলীর অধিকারী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার অবদান রেখে চলেছেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয়দের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে ওই এলাকায় বিরাজমান সমস্যার সমাধান করেছিলেন। ২০০০ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশের দুই বড় প্রতিবেশী এবং পারমাণবিক শক্তির অধিকারী পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। নিউইয়র্ক টাইমসের ওয়ালটার লিপম্যান ও ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক মেরি ম্যাকগ্ররিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা পশ্চিমা বিশ্বে প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্মান করা হতো। বিষয়টি অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি যে, সেই মেরি ম্যাকগ্ররি ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসির ইন্টারন্যাশনাল এভিনিউতে নির্মিত বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। পরে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একটি সাক্ষাতকার নেন। ১৩ এপ্রিল ওয়াশিংটন পোস্টে তাঁর জনপ্রিয় কলামে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ ছাপা হয়। সমগ্র এশিয়ায় শেখ হাসিনাকে একজন দৃঢ়চেতা ও কঠোর মনোভাবসম্পন্ন ও কার্যকর নেতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি লিখেছিলেন, “পারমাণবিক মারণাস্ত্র সজ্জিত দক্ষিণ এশিয়ার দুই বড় প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাপে নেউলে সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে তিনি (শেখ হাসিনা) অপরিহার্য একজন কুশলী মধ্যস্থতাকারীর নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান যখন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে বিশ্ব অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিয়েছিল তখনই শেখ হাসিনা দুই দেশের রাজধানী সফর করে শান্তির স্বার্থে ভারতের অটল বিহারী বাজপেয়ী ও পাকিস্তানের নওয়াজ শরীফকে সংযম ও সাবধানতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রবন্ধের আরেক জায়গায় লিখেছিলেন, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে দেশের পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতীয়দের সঙ্গে বিরাজমান কঠিন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছিলেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের শান্তির প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই আমরা শান্তিকেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে চলেছি। এ উপলব্ধি থেকেই সাধারণ পরিষদে ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর ‘শান্তির সংস্কৃতি’ (কালচার অব পিস) শীর্ষক প্রস্তাব পেশ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরুর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, মধ্যপাচ্য শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করা এবং ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য এবং শত্রুতা নিরসনের জন্য আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করি, শান্তি বিনির্মাণে জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ সীমান্তের ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হওয়ার প্রথমদিকেই ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছুটে যান কক্সবাজার, কুতুপালং ও উখিয়ায় অবস্থিত বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে। দেশের কোন এলাকায় সফরে গেলে গরিব-দুঃখী মানুষদের যেভাবে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরেন ঠিক তেমনিভাবে নিজেদের দেশ থেকে বিতাড়িত অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা রোহিঙ্গা শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলাদেরও তিনি জড়িয়ে ধরেন অনাবিল আদর-স্নেহ-ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দিতে। ওই মুহূর্তে রোহিঙ্গারা কেঁদেছেন, কেঁদেছেন বাংলাদেশের জননেত্রী শেখ হাসিনাও। ওরাও মানুষ। ওদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। আমরা ১৬ কোটি মানুষ খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারলে ১০ লাখ রোহিঙ্গাও খাওয়াতে পারব। প্রয়োজনে খাবার ভাগ করে খাব। যতদিন তারা নিজ দেশে ফিরতে না পারবে ততদিন বাংলাদেশ তাদের পাশে থাকবে। সবশেষে তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই।’ কি মানবতাবাদী দরদী উচ্চারণ! হ্যাটস অফ টু ইউ শেখ হাসিনা। আর সেজন্য যথার্থভাবেই ব্রিটিশ মিডিয়া বাংলাদেশের এই মহীয়সী নারীকে মাদার অব হিউম্যানিটি বা মানবতার মাতা বলে অভিহিত করেছেন। শেখ হাসিনার সকল কাজ ও কর্মকা-ের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে শান্তি। সব মানুষের জন্য শান্তি অর্জনই তার জীবনের ব্রত। জনগণের জন্য ভালবাসা তার জীবনাদর্শ। শান্তিই তার প্রধান লক্ষ্য। প্রতিটি কাজ, কর্মসূচী, নির্দেশনার সাফল্য অর্জনের মধ্যেও শান্তির সুবাস নিশ্চিতকরণ তার মূলমন্ত্র। এটা তার অন্তরের অন্তস্তল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসারিত। মানব কল্যাণে নানা ক্ষেত্রে তার নানাবিধ কাজ শান্তির মোহনায়ই প্রবাহিত হয়। এটা তার আদর্শ। জীবনভর শান্তির অন্বেষা তাকে স্থান দিয়েছে এদেশের মানুষের হৃদয়ের গভীরে। শান্তির প্রতীক শেখ হাসিনার মন তাই ভাগ্যাহত রোহিঙ্গাদের জন্যও কেঁদেছে। আমাদের শত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বে¡ও তিনি তার মন উজাড় করে দিয়ে ওদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছেন। তাই শেখ হাসিনাকে শান্তিতে নোবেল প্রদানের ন্যায্য দাবিটি এবার বেশ জোরেশোরেই উঠেছে। বিষয়টি নোবেল কমিটির জন্য গভীরভাবে ভাবার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদেশের মানুষ আশা করছে, দৈন্যর খোলসে আটকা না থেকে তারা সব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে এবার খোলামনে এগিয়ে এসে শেখ হাসিনাকে নোবেল পুরস্কার প্রদানে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
×