ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেহেরপুরে কলাচাষীদের সুদিন

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

মেহেরপুরে কলাচাষীদের সুদিন

সংবাদদাতা, মেহেরপুর, ১৪ অক্টোবর ॥ একবার চারা রোপণ করে ২৪ মাসে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। চলতি বছরে মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলার কলাচাষীদের সুদিন বইছে বলে অনেকে মনে করছেন। মাটি ও আবহাওয়া কলা চাষের উপযুক্ত, তাই দিন দিন মেহেরপুরে কলার আবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুরের এই কলা চাষের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও পরিবহনের কয়েক হাজার মানুষ জড়িত রয়েছেন। জেলার মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী, দারিয়াপুর, গৌরীনগর, পুরন্দরপুর, গোপালনগর, বাগোয়ান, আনন্দবাস, মহাজনপুর, গোপালপুর, কোমরপুর ও যতারপুর এবং মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর, আমদহ, চকশ্যামনগর, আশরাফপুর, নূরপুর, পিরোজপুর, টুঙ্গী, কাঁঠালপোতা, সোনাপুর, বলিয়ারপুর, গহরপুর, কলাইডাঙ্গা, যুগিন্দা, রাজনগর, আমঝুপি ও চাঁদবিল গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমাণ কলার চাষ হয়েছে। অন্যদিকে গাংনী উপজেলার কিছু মাঠেও কলার চাষ শুরু হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের হিসাবমতে, গেল মৌসুমে জেলায় কলা চাষ হয়েছে এক হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে। এ মৌসুমে এক হাজার ৫শ’ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। আগামী মৌসুমে দুই হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে বলে জেলা কৃষি বিভাগের ধারণা। মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের চাষী আতাউর রহমান জানান, প্রথমদিকে গ্রামের মাঠের এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছিলেন। ভাল লাভ হওয়ায় পরে আবারও দুই বিঘা জমিতে কলার চাষ শুরু করেন বলে জানান। এরপর থেকে তিনি প্রতি বছর কলার আবাদ করে থাকেন। তিনি আরও জানান, প্রতি বছরের পৌষ মাসে কলার চারা রোপণ করার উপযুক্ত সময়। মাঘ মাসে কলার চারা জমিতে লেগে গেলে একটি সেচ দিতে হয়। মাটি ঝরঝরে হলে জমি কুপিয়ে দিতে হবে। এরপর গাছের গোড়া থেকে বের হওয়া চারা কেটে দিতে হবে। এভাবে একটু যতœ আর গবাদিপশুর আক্রমণ ও কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চাষীর মুখে হাসি ফুটবে। তিনি আরও জানালেন, এক বিঘা জমিতে কলার চাষ করতে প্রথম বছরে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে প্রতি বছর ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ কাদি কলা পাওয়া যায়, যা থেকে পাইকারি মূল্যে বিক্রি করলে এবং দাম ভাল পেলে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়। এভাবে দুই বছরে মোট তিনবার কলা পাওয়া যাবে। মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের সুুমন হোসেন জানান, কলা চাষে কম প্ররিশ্রমে ও কম খরচেই অধিক লাভ হওয়া ও জমি থেকে ব্যবসায়ীরা কলা ক্রয় করায় দিন দিন কলা চাষে ঝুঁকছে আমাদের এলাকার চাষীরা। তাছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মেহেরপুরের এ কলার চাহিদা থাকায় বর্তমানে এ জেলা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক ও আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে কলা দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম কামরুজ্জামান জানান, কলা চাষ লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুরের চাষীরা কলা চাষ করছেন। তিনি আরও জানান, মেহেরপুরে মেহেরসাগর, দুধসর, সবরে, চাঁপা, চিনিচাঁপা, বাইসছড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পাকা কলার চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি কৃষি বিভাগ রান্না করে খাওয়ার জন্য উন্নতজাতের কাঁচকলার চারা সরবরাহ ও চাষ করার জন্য চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছে। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কলা চাষে আমরা সব ধরনের সহযোগিতার পাশাপাশি একই জমিতে দুই অথবা তিন বছরের বেশি সময়ে কলার চাষ না করতে চাষীদের পরামর্শ দিচ্ছি। এতে জমির উর্বরতা শক্তি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। দুই বছর কলার চাষ ও পরের বছর আবার অন্য যে কোন সবজি আবাদের পর আবারও কলার চাষ করলে জমির ক্ষতি হবে না বলে চাষীদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
×