ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ দিনে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৫ গুণ;###;১৫৪ ডিলারের যোগসাজশে সঙ্কট সৃষ্টি

এ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

এ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র সঙ্কট

এম শাহজাহান ॥ তালিকাভুক্ত ১৫৪ জন ডিলারের মনোপলি ব্যবসার কারণে গত পনেরো দিনে এ্যামোনিয়া গ্যাসের দাম বেড়েছে পাঁচগুণ। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বাজারে সিলিন্ডার সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমান প্রতিটি ৫০ কেজি ওজনের এ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত পনেরো দিন আগেও সমপরিমাণ গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে মাত্র সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায়। এ্যামোনিয়া গ্যাসের উৎপাদন পর্যায় অর্থাৎ যমুনা ফার্টিলাইজার কারখানা থেকে প্রতিটি সিলিন্ডার মাত্র এক হাজার ৬৩২ টাকায় সংগ্রহ করেন নিয়োগকৃত ডিলাররা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনিটরিং না থাকায় উৎপাদন থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি সিলিন্ডার প্রায় ১৫ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ বাস্তবতায় দেশের অন্যতম হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রফতানিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, এ শিল্পের পাশাপাশি এ্যামোনিয়া গ্যাস সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে কোল্ডস্টোরেজ এবং বরফকল শিল্পেও। এত দাম দিয়ে গ্যাস কিনতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে অনেক কোল্ডস্টোরেজ এবং বরফকল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ দেশের কাঁচা ও পচনশীল পণ্য সংগ্রহ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। দ্রুত এ্যামোনিয়া গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি, ডিলার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া এবং দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে। রফতানি খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার বাৎসরিক চাহিদা অনুযায়ী বাণিজ্য সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন’-এর নামে যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড হতে বছরে পাঁচ হাজারটি এ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়া এবং বর্তমান সঙ্কট নিরসনে জরুরীভিত্তিতে ৫০০টি এ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার প্রাপ্তি জরুরী হয়ে পড়ছে। অন্যথায় হিমায়িত মাছ রফতানি খাতে চরম বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সঙ্কট উত্তরণে শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বরাবর আবেদন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এ্যামোনিয়া গ্যাসের অভাবে দেশের ৭০টি হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। হিমায়িত কারখানা চালাতে এ্যামোনিয়া গ্যাসের বিকল্প এখনও কিছু আবিষ্কার হয়নি। আবার এ গ্যাস দেশের একমাত্র যমুনা সারখানায় উপজাত বা ‘বাই প্রোডাক্ট’ এ্যামোনিয়া গ্যাস ৫০ কেজি সিলিন্ডারে ভর্তি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যমুনা সার কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত আছে এবং এ্যামোনিয়া গ্যাসের কোন সঙ্কট নেই। হিমায়িত খাতের ৫৭টি কারখানা খুলনা অঞ্চলে থাকার পরও সেখানে কোন ডিলার দেয়া হয়নি। ৬-৭ জন ডিলারের কাছ থেকে এ্যামোনিয়া গ্যাস কিনে খুলনা অঞ্চলের শিল্পোদ্যোক্তারা তাদের কারখানাগুলো চালু রাখছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমানে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে এ্যামোনিয়া গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। হিমায়িত মৎস্য রফতানি খাত টিকিয়ে রাখতে হলে এ শিল্প খাতের এ্যাসোসিয়েশকে ডিলার মর্যাদা দিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ এ্যামোনিয়া গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। জানা গেছে, বর্তমানে হিমায়িত শিল্প খাতে উদ্যোক্তাদের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। বিপরীতে প্রতি বছর রফতানি হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা। এছাড়া রফতানির বিপরীতে উৎসে কর, ভ্যাট এবং অন্যান্য ট্যাক্সসহ সরকারী কোষাগারে দুই শ’ থেকে ২৫০ কোটি টাকার রাজস্ব জমা হয়ে থাকে। কর্মসংস্থান হয়েছে এক থেকে সোয়া লাখ মানুষের। রফতানি প্রবৃদ্ধিতে হিমায়িত মাছ রফতানি দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কেন এ গ্যাস সঙ্কট- জানতে চাইলে যমুনা ফার্টিলাইজারের এক কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তিনি ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে এ্যামোনিয়া গ্যাসের একজন খুচরা বিক্রেতা জনকণ্ঠকে বলেন, মূলত জামালপুরের যমুনা ফার্টিলাইজার কারখানা থেকে এ্যামোনিয়া গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ১৫৪ জন ডিলারের মাধ্যমে সারাদেশে এজেন্টদের মাধ্যমে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সরবরাহ কম থাকায় এখন দাম বেড়ে গেছে। জানা গেছে, এ্যামোনিয়া গ্যাসের অধিকাংশ ডিলার জামালপুরের। অথচ ওই জেলায় এ্যামোনিয়া গ্যাস ব্যবহার হয় এমন কারখানা নেই বললেই চলে। জেলাটির ৬-৭ জন ডিলারদের কাছে এ্যামোনিয়া গ্যাসের বাজার জিম্মি হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিলারদের সিন্ডিকেশনের জন্য বর্তমান বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যমুনা ফার্টিলাইজারের গত কয়েক দিনের এ্যামোনিয়া গ্যাসের উৎপাদন ও বিক্রির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকার ডিলারদের ৫০ কেজির ১০ সিলিন্ডার দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, ওই একই সময়ে জামালপুরের ডিলারদের ৯৫টি সিলিন্ডার দেয়া হয়। এতে সারাদেশে তীব্র এ্যামোনিয়া গ্যাসের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
×