ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্যানেল সভা আজ পদ্মা সেতুর ১৪ খুঁটির নক্সায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

প্যানেল সভা আজ পদ্মা সেতুর ১৪ খুঁটির নক্সায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর বাকি ১৪টি খুঁটির (পিয়ার) নক্সায় পরিবর্তন আসছে। তাই এ বিষয়ে আজ শনিবার সেতু ভবনে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভা বসছে। এদিকে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ‘কাউই’ বৃহস্পতিবার এ ১৪ খুঁটির নক্সা সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে। তবে এ ১৪টি খুঁটির নক্সার মধ্যে চারটি খুঁটির বিষয়ে এখনও কিছুটা সমস্যা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। শনিবারের গুরুত্বপূর্ণ সভায় এসব বিষয়ে সমাধান আসবে। পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে সভায় বিশেষজ্ঞ দলটির বাংলাদেশী পাঁচ সদস্যের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তলদেশে নরম মাটি থাকার কারণে কাজ শুরুর প্রায় তিন বছর পর এ ১৪ খুঁটির নক্সায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে এ ১৪টির নক্সাই পরিবর্তন করতে হচ্ছে। মাওয়া প্রান্তে নদীর তলদেশের মাটির গঠনের কারণেই এ পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে সেতু বিশেষজ্ঞরা কাজ এগিয়ে এনেছেন। এরই মধ্যদিয়ে বাঙালীর বীরত্বের এই পদ্মা সেতুর বড় একটি চ্যালেঞ্জ সফল হতে যাচ্ছে। এ নক্সা অনুমোদনের মধ্য দিয়ে মাওয়া প্রান্তের কাজের গতি বেড়ে যাবে। শুরুতে এই মাওয়া প্রান্তের ছয় ও সাত নম্বর পিলারে পদ্মা সেতুর প্রথম ¯প্যানটি বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা থেকে সরে আসতে হয়েছিল। পিয়ারের নিচের মাটির নরম থাকায় অর্থাৎ নদীর তলদেশের মাটির কারণে এখানে পিলার বসানো যাচ্ছিল না। তাই এই দু’টি খুঁটিতে তিনটি করে বটম পাইল করে রেখেই জাজিরা প্রান্তে সরিয়ে নেয়া হয় মূল সেতুর কাজ। তাই আগে জাজিরায় ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানো হয়। পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, বাকি ১৪টি খুঁটির বিলম্বের কারণ হচ্ছে মাটির ভিন্নতা, যেরকম মাটি আশা করা হয়েছিল এ ১৪টি স্থানে তেমন মাটি পাওয়া যায়নি। তাই আগের ডিজাইনটি এখানে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে এই ১৪টি পিলারের ৮৪টি পাইলের জন্যই প্রয়োজন পড়ে নতুন নক্সার। সমস্যা সমাধানে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেনডেলকে এই ডিজাইনের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বলেন, পাইলের লেন্থ ও নাম্বার দুটিই বাড়তে পারে। সবাই মিলে আলোচনা পর্যালোচনা করে কাজটি করা হবে।’ নদীতে মূল সেতুর ২৪০টি পাইলের মধ্যে ৭৫টি পাইল ড্রাইভ হয়েছে। নদীর দুই পাড়ে সেতুতে ওঠার ট্রানজিশন পিলারে ৩২টি পাইলের মধ্যে ১৬টির কাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৭২টি পাইল পদ্মা সেতুতে। মাওয়ার দিকে ১৫ নম্বর পিলার থেকে নদীর মাঝখানে ৩৩ নম্বর পিলার পর্যন্ত এখনও কোন পাইল ড্রাইভ হয়নি। ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারে ৩টি করে ড্রাইভ হয়েছে। আবার ৮ থেকে ১২ নম্বর পিলার পর্যন্ত কোন পাইল ড্রাইভ হয়নি। ৬ এবং ৭ নম্বর পিলারে ৩টি পাইল করে ড্রাইভ করা হয়েছে। মাওয়ার দিকে ৩ থেকে ৫ নম্বর পিলারে প্রতিটিতে ৬টি করে পাইল পুরোপুরি ড্রাইভ হয়ে গেছে। বাকি আছে মাওয়া অংশে নদীর মধ্যে প্রথম পিলারটি পাইল ড্রাইভের কাজ। পদ্মা সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ২৬টি পিয়ারের ১৫৬টি পাইলের নক্সা (গভীরতা) চূড়ান্ত করা আছে। পুনরায় নক্সা প্রক্রিয়াধীন আছে ১৪টি পিলারের ৮৪টি পাইলের। মূল অবকাঠামো বা সুপারস্ট্রাকচার ( স্প্যান বা ট্রাস) কাজ পুরোটাই হয় মাওয়া পাড়ে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ও চীনে। ৪১টি স্প্যানের প্রথমটি বসানো হওয়ার পর এখনও স্প্যান বসানো বাকি ৪০টি। দ্বিতীয় স্প্যান ৩৮ এবং ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর বসবে শীঘ্রই। জাজিরা পাড়ের ৭টি স্প্যানর সবগুলো প্রস্তুত। ৩৫ নম্বর পিলার থেকে ৪১ নম্বর পিলারে এগুলো বসবে। একটি বসেছে বাকি ৯টি স্প্যান চীন থেকে এনে মাওয়া ট্রার্স ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে জোড়া লাগিয়ে রাখা। এছাড়া চীন থেকে আরও ১২টি স্প্যান শীঘ্রই বাংলাদেশের পথে রওয়ানা দেবে। ১৫০ মিটার লম্বা একেটি স্প্যানের ওজন ৩২০০ টন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্প্যানটি স্থাপনের পর এখন এখানে কাজে নতুন গতি এসেছে। এদিকে স্প্যানের ওপর যান চলাচলের জন্য কংক্রিটের ডেক স্থাপন করা হবে। নদী পাড়ের ইয়ার্ডে এগুলো দুই মিটার করে ঢালাই করে পরে তুলে নিয়ে বসিয়ে দেয়া হবে।
×