ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরাসরি নিউইয়র্ক ফ্লাইটের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে

বিশ্ব সিভিল এভিয়েশন মানে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

বিশ্ব সিভিল এভিয়েশন মানে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতি

আজাদ সুলায়মান ॥ নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক সূচকে সিভিল এভিয়েশন অনেকটাই এগিয়েছে। একের পর এক সব ঘাটতি পূরণ করে বাংলাদেশের র‌্যাংকিং এখন অনেক দেশের চেয়েই উপরে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) মানদ- অনুযায়ী বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনে এই উন্নতি অভাবনীয়; যা নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্ব¡ল করবে। সম্প্রতি আইকাওর এক অডিট প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেøখ করা হয়। আইকাও মানদ- অনুযায়ী, কোন দেশের সূচক ৬০-এর ওপর হলে সে দেশের এভিয়েশন খাতকে সন্তোষজনক মানের বিবেচনা করা হয়। এ হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন ৭৭ দশমিক ৪৬-এ উন্নীত। অথচ ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৫০ দশমিক ২। এটা নিঃসন্দেহে বড় ধরনের অর্জন। সম্প্রতি আইকাওর টেকনিক্যাল কমিটির অডিট টিম এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সিভিল এভিয়েশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ সম্পর্কে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, রিপোর্টটি অবশ্যই দেশের জন্য একটা অর্জন। এটি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী এফএএ টিমের প্রতিবেদনও ভাল করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক উইং কমান্ডার চৌধুরী জিয়াউল কবীর জানান, অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ সূচক এসেছে। সার্বিক নিরাপত্তা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা, কারিগরি সুবিধা ও প্রতিটি বিভাগে পেশাদারিত্বের বিষয়টি বিবেচনায় আইকাও প্রতিটি দেশেরই এভিয়েশন খাতের মান নির্ধারণ করে থাকে। আইকাও মানদ- অনুযায়ী কোন দেশের সূচক মান ৬০-এর ওপর থাকলে সে দেশের এভিয়েশন খাতকে সন্তোষজনক বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেবেই এবার বাংলাদেশের মান এতটা এগিয়েছে, যা ছিল অভাবনীয়। উল্লেখ্য, আইকাওর প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ফ্লাইট নিরাপত্তায় দুর্বলতার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশনকে ২০০৯ দ্বিতীয় ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি (এফএএ)। এতে দেশ-বিদেশে তোলপাড় দেখা দেয়। সে সময় ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত হতে কিছু শর্ত দেয়া হয়, যার অধিকাংশই ছিল বেশ কঠিন। এর মধ্যে গুরত্বপূর্ণ দুটি শর্ত হলো বেবিচকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও নিজস্ব অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) অনুযায়ী জনবল নিয়োগ। আর নিজস্ব অর্গানোগ্রামের বিষয়টি ২০১২ সাল থেকে প্রক্রিয়ায় থাকলেও এখনও অনুমোদন পায়নি। এদিকে ক্যাটাগরি-২-এ থাকায় বেবিচক থেকে অনুমোদন নেয়া সংস্থার উড়োজাহাজ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশকিছু দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাচ্ছে না। একই কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া কোন উড়োজাহাজেরও সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি নেই। এ কারণেই বহুল প্রতীক্ষিত বিমানের নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ধরনের পাহাড়সমান সমস্যা সামনে রেখে একের পর এক সব শর্ত পূরণে সক্রিয় হয় সিভিল এভিয়েশন। তৎকালীন চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মাহমুদ হাসান, পরিচালক ্গ্রুপ ক্যাপ্টেন নাজমুল আনাম আইকাও আরোপিত শর্ত পূরণের কাজ শুরু করেন। পরবর্তী চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী, মেম্বার (অপস) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান ও এফএসআর উইং কমান্ডার চৌধুরী জিয়াউল কবীবের নেতৃত্বে সিভিল এভিয়েশনে চলে বিরামহীন কর্মপ্রচেষ্টা। কয়েক বছর ধরে এ নিয়ে কাজ করছেন তারা। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি আইকাও অডিট দলকে পরিদর্শনের আহ্বান জানানো হয়। গত মাসে আইকাও টেকনিক্যাল কমিটির অডিট টিম আসে বাংলাদেশে। তারা ঢাকার সর্বশেষ অবস্থান পর্যবেক্ষণ করার পর যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে এই র‌্যাংকিং উল্লেখ করা হয । আইকাও অডিট টিমের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের র‌্যাংকিং ৭৭ দশমিক ৪৪ এ উন্নীত হয়েছে। এ র‌্যাংকিং প্রতিবেশী দেশ ভারতে সূচক ৭১, নেপালে ৬২ ও ভুটানে ৫৭। শুধু প্রতিবেশী দেশগুলো নয়, এভিয়েশন কান্ট্রি মানের সূচকে এখন বাংলাদেশের নিচে রয়েছে কাতার (সূচক ৬৭), রাশিয়া (সূচক ৭০), মালয়েশিয়া (সূচক ৭২), ইন্দোনেশিয়া (সূচক ৬৮) এবং কুয়েতের (সূচক ৬৯) মতো এভিয়েশন খাতে অগ্রগামী দেশও। আইকাওর অন্তর্ভুক্ত ১৯২ দেশের মধ্যে মাত্র ৩৫টির এভিয়েশন কান্ট্রি মানের সূচক ৭৫-এর বেশি। আর সূচক ৭৭ অতিক্রম করেছে, এমন দেশের সংখ্যা ৩০টির বেশি নয়। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনে সদ্য যোগদানকারী চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান বলেন, এ র‌্যাংকিং আমাদের পরবর্তী অডিটগুলোতে আরও ভাল করার সহায়ক হবে। আগামীতে আসছে এফএএ টিম। তাদের রিপোর্টও যদি এই মানের সন্তোষজনক হয় তাহলে নিউ্ইয়র্ক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে অনেক অগ্রগতি ঘটবে। এটাই এই মুহূর্তে সবার প্রত্যাশা। এ বিষয়ে উইং কমান্ডার জিয়াউল কবীর বলেন, আইকাওর অডিট প্রতিবেদন সন্তোষজনক হওয়ায় ক্যাটাগরি উন্নয়নের পথ সুগম হলো। আগামীতে এফএএ টিম পরিদর্শনে আসবে। ওই টিম ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন সেফটি এ্যাসেসমেন্ট (আইএএসএ) পর্যবেক্ষণ করে যদি সন্তুষ্ট হয়ে ভাল প্রতিবেদন দেয়, তাহলে নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। সে জন্যই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আগামী ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যেই এসব কাক্সিক্ষত ইস্যুর নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। এতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহুল প্রতীক্ষিত নিউইয়র্ক রুটের ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হবে। জানতে চাইলে এয়ার কমোডর এ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিভিন্ন অনুষঙ্গ যেমন ইডিএস ইডিটি স্থাপনের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ইইউ এ্যাম্বাসেডর শাহজালাল বিমানবন্দরে কার্গো কমপ্লেক্স সরেজমিন পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি লুফহানসা সিকিউরিটি টিম বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছে। তারাও সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একইভাবে ইতিহাদ কার্গোর একটি নিরাপত্তা দলের পরিদর্শনেও শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের অপারেশন সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিবেদন এসেছে। ফলে আশা করা যায়, অচিরেই পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাও উঠে যাবে। একইভাবে যদি সামনের এফএএ টিমের অডিট রিপোর্ট ভাল হয়, তাহলেই কেবল পূরণ হবে স্বপ্নের নিউইয়র্ক ফ্লাইট।
×