ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাতক্ষীরায় গৃহবধূকে অর্ধনগ্ন করে মাথার চুল কেটে নির্যাতন, ধর্ষণের চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

সাতক্ষীরায় গৃহবধূকে অর্ধনগ্ন করে মাথার চুল কেটে নির্যাতন, ধর্ষণের চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ জমি বিক্রি করে ভারতে চলে যেতে রাজি না হওয়ায় এক গৃহবধূকে অর্ধনগ্ন করে দু’ পা ও দু’ হাত পিঠমোড়া দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের পর ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ সময় তার মাথার চুল কেটে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামের একটি মাঠে এ ঘটনা ঘটে। ওই গৃহবধূকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দেলোয়ার হোসেন নামের এক যুবককে আটক করেছে। গ্রেফতার দেলোয়ার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চুপড়িয়া গ্রামের মাহাবুবর রহমানের ছেলে। নির্যাতিত গৃহবধূর আত্মীয়রা জানান, যখন তাকে উদ্ধার করা হয়, তখনও সে গাছে বাঁধা ছিল। তার শাড়ি খুলে ওই শাড়ি দিয়েই মুখ, দুই হাত ও দুই পা বাঁধা ছিল। গলায়ও শাড়ি পেঁচানো ছিল। তার চুল কেটে নেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা সদরের চুপড়িয়া গ্রামের নির্যাতিত গৃহবধূর স্বামী জানান, তার কাকা গৌরহরি দাস ১৯৮৮ সালে একই গ্রামের মাহাবুবর রহমানের কাছে বাড়ি ও জমি বিক্রি করে চলে যান। এরপর থেকেই তাদের পাঁচ ভাইকে জমি তাদের কাছে বিক্রি করে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য মাহাবুবর রহমান ও তার ছেলেরা বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছিল। গত ১ অক্টোবর মাহাবুবর রহমানের জমিতে একটি শিয়াল মারা যায়। ওই মরা শিয়ালটি মাহাবুবর রহমানের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৪) তাদের বাড়ির পাশের জমির সীমানায় ফেলে যায়। পচা শিয়ালের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ও তার স্ত্রী প্রতিবাদ করায় জামায়াতের সক্রিয় কর্মী দেলোয়ার ও তার ভাই গোলাম সরোয়ার তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। একপর্যায়ে তাদের জমি বিক্রি করে ভারতে চলে যাওয়ার কথা বলে। নইলে ফল ভাল হবে না বলে জানায়। গত ৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার রাতে দেলোয়ার তাদের বসতঘরের পেছনের জানালার পাল্লা ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে একটি ইলেক্ট্রিক বাল্ব খুলে নেয়। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চুপড়িয়া গ্রামের ওই ভ্যানচালকের স্ত্রী জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তিনি বাড়ির পাশের মাঠে ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে যান। বিলে নামার আগেই সেখানে দেলোয়ার ও তার ভাই গোলাম সরোয়ার সেখানে অবস্থান করছিল। ঘাস কাটার একপর্যায়ে পেছন দিক থেকে দেলোয়ার কাপড় দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। ওই কাপড়ে লাগানো চেতনানাশক তার মুখের মধ্যে যায়। কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার অবস্থা হলে তাকে দেলোয়ার ও সরোয়ার চিত করে ফেলে কোমরের নিচের পরিহিত কাপড় ছিঁড়ে ফেলে দু’ পা ও দু’ হাত একটি মেহগনি গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। এ সময় তার মাথার চুলের কিছু অংশ কেটে নেয়া হয়। পরে দেলোয়ার তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এরপর সে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। তার গোঙানিতে পার্শ্ববর্তী বাড়ির তিনটি শিশু ছুটে এলে দেলোয়ার চলে যায়। যাওয়ার আগে এক সপ্তাহের মধ্যে জমি বিক্রি করে ভারতে চলে না গেলে তাকে ও তার স্বামীকে হত্যা করে লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। পরে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য এরশাদ আলী ও পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি থানায় জানান। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মেদ শুক্রবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি হাসপাতালে গিয়ে ওই গৃহবধূ ও তার স্বজনদের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেলোয়ার হোসেন নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল বলে ওসি জানান।
×