ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে

সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্বাচন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অর্থাৎ বর্তমান সরকারের অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই হবেন নির্বাচনের সময় সরকার প্রধান। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপে জোটগতভাবে এমন অবস্থান তুলে ধরছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ১৪ দল। শুধু নির্বাচনকালীন সরকারই নয়, সংলাপে সীমানা পুনর্নির্ধারণে আপত্তি, বিদেশী পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, নির্বাচনে ‘স্টাইকিং ফোর্স’ হিসেবে বিশেষ প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি ইস্যুতে অভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরছে শরিক দলের নেতারা। ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে আগামী ১৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলের পক্ষ থেকে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় দলীয় প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের প্রস্তাবেও শরিক দলগুলোর মতো ওই পাঁচটি বিষয় প্রাধান্য পাবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি ১৪ দলের বৈঠকে ইসির সঙ্গে সংলাপে গিয়ে অন্তত পাঁচটি বিষয়ে অভিন্ন মত দিতে জোটের শরিক নেতাদের অনুরোধ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বৈঠকে এ অনুরোধ জানান। বৈঠক সূত্র জানায়, সংবিধান অনুযায়ীই হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শরিক দলের নেতারা যেন এ বিষয়েই ইসির সঙ্গে সংলাপে এ বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। এছাড়া নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যাবে না, তবে স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে সেনাবাহিনী। যদি প্রয়োজন হয় তাহলেই ডাকা হবে। এসব বিষয়ে সংলাপে ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে অভিন্ন প্রস্তাব দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে ইসির সঙ্গে সংলাপে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) অভিন্ন এসব প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। আওয়ামী লীগসহ বাকি জোটের শরিক দলগুলোও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব প্রস্তাব তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। আগামী ১৮ অক্টোবর ইসির সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওই পাঁচটি প্রস্তাব ছাড়াও আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম (ই-ভোটিং) চালু করার ব্যাপারেও প্রস্তাব দিতে পারে। শুধু ১৪ দলীয় জোটই নয়, বর্তমানে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সংলাপে বসে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়েই নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। দলটির প্রধান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ইসির কাছে প্রস্তাবটি তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দল থেকে আনুপাতিক হারে সদস্য নিয়ে নির্বাচনে এ সরকার গঠন হবে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকায় এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিএনপির থাকার কোন সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলের প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করতে দায়িত্বশীল নেতারা ইতোমধ্যে কয়েকদফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দলের প্রস্তাবের একটি খসড়াও তৈরি করেছেন তারা। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ইসির নির্ধারিত এজেন্ডার মধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২, বিদ্যমান ইংরেজী আইনটি বাংলায় রূপান্তর ও এর প্রয়োজনীয় ধারা সংশোধনের ব্যাপারে বর্তমান আরপিও’র ৯৪ ধারা অনুযায়ী বাংলায় রূপান্তর করার কথাই তুলে ধরবে দলটি। আগামী নির্বাচনের আগে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ নয়, পুরনো সীমানা অনুযায়ী নির্বাচন চাইবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে দলটির যুক্তি হলো- বর্তমান আইনানুযায়ী আদমশুমারির পর সীমানা নির্ধারণ হয়। যেহেতু ২০১৩ সালে আদমশুমারির ফল ঘোষণা করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে পুরনো সীমানায়ই নির্বাচন চায় ক্ষমতাসীনরা। এ ছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মতো আওয়ামী লীগও নির্বাচনকালে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নামানোর পক্ষে নয়। দলটির প্রস্তাবে আসতে পারে, নির্বাচনে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে বিশেষ প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনই পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে নদীভাঙ্গন ও বিশেষ কোন কারণ ছাড়া ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরের ব্যাপারে দলের আপত্তি তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অভিন্ন পোস্টার, প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা, নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট একটি ‘টোকেন মানি’ সরবরাহ, নির্বাচন কমিশনের নিয়োগবিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচন কমিশনের বাজেট স্বাধীনভাবে খরচ করতে দেয়ার প্রস্তাব থাকতে পারে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে। তবে ইসির সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে স্পষ্ট যুক্তি তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। বলা হবে- বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সরকারপ্রধান থাকবেন। নির্বাচনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান থাকলেও তিনি শুধু রুটিনমাফিক কাজ করবেন। তফসিল ঘোষণা করলেই সব ক্ষমতা ইসির কাছে থাকবে। সকল পর্যায়ের রদবদলের দায়িত্বেও থাকবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেই আজ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় দলীয় প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করে আগামী ২৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসবে আওয়ামী লীগ।
×