ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে ৩শ’ বছরের শিব দুর্গা মন্দির

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

মাদারীপুরে ৩শ’ বছরের শিব দুর্গা মন্দির

মাদারীপুরে দীঘির-পাড়ের ৩শ’ বছরের পুরনো দয়াময়ী সর্বজনীন শিব-দুর্গা মন্দির সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। যে কোন মুহূর্তে শিব মন্দিরটি ধসে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি অংশ। জানা গেছে, আঠারো শ’ শতকে রাজৈর উপজেলার দীঘিরপাড় গ্রামের জমিদার তারকেশ্বর রায় চৌধুরীর পূর্ব পুরুষেরা পূজা-অর্চনা ও প্রজাদের মঙ্গলার্থে ১০ শতাংশ দেবোত্তর সম্পত্তির ওপর শিব মন্দির ও দুর্গা মন্দির স্থাপন করেন। মন্দির দুটি স্থাপনের পর থেকে মন্দির প্রাঙ্গণে পূজা অর্চনাসহ নানাবিধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলে আসছে। এক সময় মন্দিরে পূজা এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হাজারো ভক্তের উপস্থিতিতে মন্দির এলাকা মুখোরিত হয়ে উঠত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত সংস্কার না হওয়ায় মন্দির দুটি তার অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা শিব মন্দিরটি যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। এ আশঙ্কায় পূজারীরা থাকেন চরম আতঙ্কে। এখনও প্রতি বছর শিব পূজা, নীল পূজা, দুর্গা পূজা, রথযাত্রাসহ নানাবিধ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে মেলাও বসছে কয়েক শ’ বছর পূর্ব থেকে। মন্দির দুটি সংস্কার না হওয়ায় শিব মন্দিরটির ইট, সুড়কি ও পলিস্তারা খসে খসে পড়ছে। মন্দিরের আশপাশের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে মন্দিরের সামনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শিব মন্দিরের গায়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ-পালা গজিয়ে ওঠায় মন্দিরে ফাঁল ধরেছে। ফাঁল দিয়ে পানি পড়ায় মন্দিরটির অবস্থা দিন দিন আরও নাজুক হয়ে পড়ছে। মন্দিরের সামনে শেড না থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোদ-বৃষ্টি হলে পূজারী এবং দর্শনার্থীদের পূজা অর্চণা করতে সমস্যা হয়। দয়াময়ী দীঘিরপাড় সর্বজনীন শিব ও দুর্গা মন্দির দুটি প্রতœতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের দাবিদার হিসাবে মন্দিরের সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা। রাজৈর পৌর এলাকার শম্ভুনাথ ঘোষ বলেন, ‘ছোঁ বেলায় দেখেছি দয়াময়ী রাজৈর সর্বজনীন শিব ও দুর্গা মন্দিরে হাজারও ভক্তের উপস্থিতিতে পূজা অর্চনা হতো। মন্দির দুটির ভগ্ন দশা এবং আঁচালা না থাকার কারণে অনুষ্ঠানাদিতে ভক্তবৃন্দের উপস্থিতি তেমন একটা হচ্ছে না। মন্দির দুটির সংস্কার করার জন্য বর্তমান সরকারের শুভদৃষ্টি কামনা করছি।’ রাজৈর ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক দ্বিজপদ ম-ল জানান, মন্দির দুটি সংস্কার করে মন্দির এলাকায় প্রাচীর দেওয়া হলে মন্দিরের পবিত্রতা ও পূজারী এবং দর্শনার্থীরা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করতে কোন সমস্যা হতো না। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ঘোষ জানান, ঐতিহ্যবাহী মন্দির দুটির সংস্কার ও মন্দিরের জায়গার চারিপার্শ্বে প্রাচীর নির্মাণের জন্য নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপির আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×