ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁসা পিতল শিল্প

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

কাঁসা পিতল শিল্প

টাঙ্গাইলকে প্রসিদ্ধ করেছে কাঁসা ও পিতল শিল্প। এক সময় টাঙ্গাইলের সমৃদ্ধশালী ব্যবসা ছিল এটি। শুধু টাঙ্গাইল নয় বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই শিল্পের সুনাম ছিল। টাঙ্গাইলের কাঁসা ও পিতলের তৈরি তৈজসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল সারাদেশে। দেশের চাহিদা মিটিয়েও কাঁসা ও পিতলের তৈজসপত্র বিদেশেও রফতানি হতো। বিশেষ করে এগুলো ছিল ভারত বিখ্যাত। অবিভক্ত বাংলায় একদিন প্রসিদ্ধ ছিল টাঙ্গাইলের তামা, কাঁসা ও পিতল শিল্প। এটি বিগলন ঢালাই প্রযুক্তির অন্তর্গত। আর সুদৃশ্য কারুকার্য ও অনুপম গুণগতমানের জন্যই টাঙ্গাইলের কাঁসা ও পিতলের তৈরি তৈজসপত্র এতটা প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছিল। কাঁসা ও পিতলের অপূর্ব শিল্প কর্মের জন্য ব্রিটিশ সরকার কাঁসা শিল্পীদের মধ্যে নাম করা অনেকেই প্রশংসা ও পদকে ভূষিত করেছেন। এদের মধ্যে প্রয়াত মধুসূদন কর্মকার, গণেশ কর্মকার, বসন্ত কর্মকার, যোগেশ কর্মকার, হারান কর্মকার উল্লেখযোগ্য। টাঙ্গাইলের প্রধান কাগমারীর কাঁসা, পিতল ও তামার ধাতুশিল্প আজো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। এখনো টাঙ্গাইলের কাগমারীসহ জেলার নানা গ্রামাঞ্চলে এই কাঁসা ও পিতল শিল্পীরা তৈরি করছে নানা দ্রব্যাদি। ব্যাপক প্রসিদ্ধ ও চাহিদার ভিত্তিতে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে কাঁসা ও পিতলের শিল্প গড়ে উঠলেও কাগমারী, মগড়া ও সাকরাইল গ্রাম ছিল বেশি প্রসিদ্ধ। এক সময় এ সকল গ্রামে শত শত পরিবার কাঁসা ও পিতল শিল্পী ছিল। দিন রাতে তাদের কাঁসা পেটানোর শব্দে গ্রামগুলো মুখর থাকত। হিন্দুদের মধ্যে কর্মকার সম্প্রদায়েরাই এ শিল্পের সঙ্গে বংশানুক্রমে জড়িত। টাঙ্গাইলের কর্মকারগণ অত্যন্ত সুনিপুণ কৌশলে নিরলস শ্রম দিয়ে আজো তৈরি করছে তামা, কাঁসা ও পিতলের থালা, বাটি, কলসি, গ্লাস, জগ, ঝারি, বদনা, ঘটি, পঞ্চ প্রদীপদান, মোমবাতিদান আগর বাতিদান, কুপি, চামচ, কাজলদানী, ডেকচি, ডেগ, বোল, খুন্তি, সড়তা, বাটি, পুতুল, ঝুনঝুনি, করতাল, মেডেলসহ প্রভৃতি জিনিসপত্র। এককালে টাঙ্গাইল অঞ্চলের জমিদার ও ভূ-স্বামীগণের বড় তৈজসপত্র ছিল এগুলো। এদেরই সহায়তায় এসব কারিগর সমাজ নিত্য নতুন জিনিস তৈরি করেছে। প্রভুর মনোরঞ্জনের জন্য। জমিদারগণ ও ছিলেন বৈচিত্র্য প্রয়াসী তারাও চাইতেন নানা কারুকার্য খচিত কাঁসার বাসনপত্র উপযুক্ত সহায়তা এবং সমাদরের অভাবে এই শিল্প অন্ধকারে ধুঁকছে। আজ বিয়ে-শাদী, অন্নপ্রাশন ও সুন্নতে খতনা কিংবা সে ধরনের কোন অনুষ্ঠানে কেউ পিতলের কলসি, কাঁসার জগ, গ্লাস ও চামচ উপহার দেয় না। এক সময় কাঁসা ও পিতলের তৈরি জিনিসপত্র বিয়ে, মুসলমানিসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সেরা উপহার হিসেবে বিবেচিত হতো। হাজার বছরের পুরনো এ শিল্প ইতিহাসে প্রমাণ আছে। গ্রাম সমবায়ে কাংস্যকার, কাংস্যবণিক ইত্যাদি বৃত্তিধারী শ্রেণী ছিল। পাঠান, মোগল ও ব্রিটিশ শাসনামলে কাংস্যকার যখন যে রূপ পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল। সেরূপ বিকাশ লাভ করতে পেরেছিল। টাঙ্গাইল শহরের কাগমারীতে যারা তামা, পিতল, কাঁসা শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের বংশগত উপাধি কর্মকার। কাংস্যকার বা কাংস্যবণিক বলে কাউকে কাঁসা শিল্পের সঙ্গে জড়িত দেখা যায় না। তবে কাগমারী কাংস্য শিল্পের সুনাম ছিল এবং এখনো আছে। টাঙ্গাইলের বরাইল ও কাগমারীতে পিতলের কাজের প্রধান্য রয়েছে। টাঙ্গাইলের কাগমারী ও মগরা দুটি গ্রামে উপরে উল্লাখিত জিনিস ছাড়া আরো তৈরি হয় কাঁসার ঘণ্টা, জয়ঢাক, তামার কুশা-কুশি, টাঁ পুষ্পাধার ইত্যাদি। -ইফতেখারুল অনুপম টাঙ্গাইল থেকে
×