ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোগবালাই প্রতিরোধে জনপ্রিয়তা বাড়ছে

গ্যানো মাশরুম

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

গ্যানো মাশরুম

আজগার আলী পেশায় নলকূপ বোরিং মিস্ত্রি। তিনি সৈয়দপুর উপজেলা শহরের বাঙালীপুর দারুল উলুম এলাকর বাসিন্দা। গত ১২ বছর থেকে এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন। এলার্জি জনিত কারণেই তার সারাশরীরে ঘা হয়ে যায়। দুর্গন্ধে পরিবারের লোকজন ছাড়া তার কাছে কেউ যেত না। বিভিন্ন জনের পরামর্শে প্রচুর টাকা খরচ করে চিকিৎসক, কবিরাজ, হেকিমি, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করেও রোগমুক্তি মেলেনি। রোগটিকে অভিশপ্ত মনে করে চিকিৎসা বন্ধ করে মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকেন আজগার আলী। তিনি গত বছরে প্রতিবেশীর কাছে জানতে পারেন গ্যানো মাশরুমের কথা, ওই প্রতিবেশী নিয়ে যান সৈয়দপুর শহরেই গ্যানো মাশরুম উৎপাদনকারী আজিজুল হকের কাছে। তার পরামর্শে প্রক্রিয়াজাতকৃত গ্যানো মাশরুম সেবনে আজগার এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। অন্যদিকে শফিকুর রহমান অডিটর সৈয়দপুর সেনানিবাসে সিভিলে কর্মরত ছিলেন। বাসা সৈয়দপুরের বাঙালীপুর নিজপাড়া। তিনি ঘাড় বাঁকা ও শক্ত হয়ে যাওয়া রোগে আক্রান্ত হন। দেশে এবং ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেন। কিন্তু চিকিৎসায় সুফল না পাওয়ায় তিনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি গ্যানো মাশরুম খেয়ে ও শারীরিক ব্যায়ামের মাধমে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন। ফলে এখন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের কাছে গ্যানো মাশরুম সেবন জনপ্রিয়তা পেয়ে বসেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন ঋষি গ্যানো ডার্মা মাশরুম আধুনিক প্রযুক্তিতে সৈয়দপুরে উৎপাদন করে বাজারজাত করা হচ্ছে সারাদেশে। যুগোপযোগী এ মাশরুƒম উৎপাদন কেন্দ্রটি ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) ফজলে ওয়াহেদ খন্দকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান, হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক কুদরত-এ-গণি, হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সাইফুল হুদার নেতৃত্বে কৃষি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও সারাদেশ থেকে এ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এসেছেন ও আসছেন। সৈয়দপুর শহরের টেকনিক্যাল কলেজপাড়ায় ২৪ শতক জমির ওপর ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মাশরুম সেন্টারটি। বর্তমানে ১ একর জমির ওপর এ কেন্দ্রটিতে রয়েছে ল্যাব, কালচার হাউস ও ওয়ার্কশপ। প্রতিদিন এখানে কাজ করছে ৫০ জন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ১৫০ শ্রমিক। এখানে গ্যানো মাশরুƒমের টিস্যু কালচার, মাদার কালচার, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। এই সব ঔষধি মাশরুম বিক্ষিপ্ত আকারে সারাদেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। উৎপাদিত গ্যানো মাশরুম নিজস্ব ল্যাবে প্রক্রিয়াজাত করে ক্যাপসুল ও বিভিন্নভাবে প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করা হয়। যা এফ গ্যানো জেনারেল, এফ গ্যানো এম, গ্যানো চা, এফ মাশরুম, এফ গ্যনো তেল, ফেসিয়াল ফেস প্যাক নামে পরিচিত। অনেক প্রবাসীরা দেশে এসে ব্যক্তিগত এবং পরিবারের অন্য আত্মীয় স্বজনের প্রয়োজনে এটি সংগ্রহ করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজস্ব ল্যাবটারিতে উৎপাদিত বিভিন্ন গুণসম্পন্ন এ গ্যানো মাশরুমের জন্য ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক সনদ পেয়েছে। বাংলাদেশে ঋষি ও ওয়েস্টার মাশরুম উৎপাদনে সফলতা, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ, সম্প্রসারণ, আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পুষ্টিপূরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪১৮ বঙ্গাব্দ অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও সারাদেশে মাশরুম উৎপাদনে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচার এ্যাওয়ার্ড, সিটি এ্যাওয়ার্ড, স্টার এ্যাওয়ার্ড, তানজিন কালচারাল ফাউন্ডেশন সম্মাননাসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বহু পুরস্কার ও সুনাম অর্জন করেছে। মাশরুম চাষে আজিজুলের সফলতা দেখে তার পরামর্শ মতো কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, ঠাঁকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও সৈয়দপুরে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক যুবক ও যুবতী। বাংলাদেশের প্রথম গ্যানো মাশরুম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণে মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ব¡াধিকারী আজিজুল হক জানান, সরকারীভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে অবকাঠামো ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজিত করে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিকমানের করা সম্ভব। পৃথিবীতে ৩ লাখ প্রজাতি মাশরুম রয়েছে। তার মধ্যে খাওয়ার উপযোগী ২ হাজার মাশরুম। ঔষধি গুণসম্পন্ন মাশরুম মাত্র দু’শ’টি। এর মধ্যে গ্যানো ডার্মা/মাশরুম হলো প্রথম। মাশরুমের সম্পর্কে মাশরুম ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ড. নিরোদ চন্দ্র সরকার বলেন, গ্যানো মাশরুম মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি নিয়মিত সেবনে টিউমার, ডায়েবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডেঙ্গু, এইচআইভি, ক্যান্সার, কিডনি, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, আমাশয়সহ বহু রোগ প্রতিরোধ, নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণ করে। তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে
×