ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মির্জা ফখরুলের মেসি তত্ত্ব ও শেখ হাসিনার হ্যাটট্রিক

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

মির্জা ফখরুলের মেসি তত্ত্ব ও শেখ হাসিনার হ্যাটট্রিক

এক সময় রাজনীতিতে রসবোধ ছিল প্রবল। আমাদের যৌবনে মিডিয়ার এত জৌলুস ছিল না। আমাদের চাটগাঁয় খবরের কাগজ আসত দেরিতে। কৈশোরে দেখেছি একদিন দু’দিন পর এসে পৌঁছাত ঢাকার কাগজ। ফলে জানার জন্য রেডিও আর একমাত্র টিভির বাইরে আমরা ছুটতাম জনসভায়। তেমনি এক জনসভায় তুখোড় সাংসদ প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যাদু মিয়াকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আপনি আমাদের গুরু। তবে আপনি ফ্রি সাইজ। যে যখন গদিতে আপনি তার সাইজমতো ফিট হয়ে যান। পোলার বয়সী জিয়ার সঙ্গেও ফিট করলেন নিজেকে। পরের হপ্তায় যাদু মিয়াদের জনসভা। বর্ষীয়ান নেতা ভাষণের শেষ দিকে বললেন, আমি শুনেছি সুরঞ্জিত নাকি তার ভাষণে আমার কথা কি জানি বলছে। আপনারা এতে একটুও মন খারাপ করবেন না। সে আমার স্ত্রীর ছোট ভাইয়েরও বেশি কিছু। সে অধিকারে সে আমাকে ঠাট্টা করতেই পারে। সে দিন আজ বিগত। কমরেড মণি সিংহের পায়ের তলায় বসে রাজনীতি করার কথা বলে যাদু মিয়া তাকে সম্মান জানাতেন। ফের এও মনে করিয়ে দিতেন, আপনাদের বুদ্ধির কোটা আসে ভলগার পানি বেয়ে। যা এদেশে চলবে না মণি দা। আহা সে দিন আজ বিগত। এখন রাজনীতিবিদদের রসবোধ বলে কিছু আছে বলে মনে হয় না। সবার চাই পাওয়ার আর অর্থ। কোন এক বিশেষ কারণে বিএনপি এখনও অদৃশ্যের বড় শক্তি। আজ যখন এ লেখা লিখছি জামায়াত হরতাল ডেকেছে দেশে। শীর্ষ নেতারা যদি মাথা বা মু- হয় তো মু-হীন ধড় নিয়েও জামায়াত তা পেরেছে। মু-হীন ধড় যদিও জিন-ভূতের মতো এবং ভয়ের তারপরও তারা সাহস করে ডাকতে পেরেছে। বিএনপি আছে মাঠে? কোন জায়গায় নেই। কোন ইস্যুতে গঠনমূলক কোন ভূমিকাও রাখতে পারছে না তারা। তারপরও মিডিয়া বলেন, সমাজ বলেন, এমনকি প্রধান বিচারপতির ঘটনা বলেন সবকিছুতেই আমরা বিএনপির গন্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছি। যার মানে তাদের ভিত্তি বা জনমনে একটা নীরব জায়গা আছে। যেটা আওয়ামী লীগের নেতাদের কারণে ক্রমশ বাড়ছে বৈ কমছে না। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আওয়ামী লীগের জন্য দুর্বল হওয়ার জায়গা আসলেই খুব কম। এই ছুপা বিএনপির কাজকাম এখন মিডিয়ার মাইক্রোফোনের সামনে কিছু পাঠ করা কিংবা সংবাদ সম্মেলনের নামে তড়িঘড়ি কিছু বলে বিদায় হয়ে যাওয়া। একদা তাদের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া আবিষ্কৃত ঘরোয়া রাজনীতির পথে আছে এই দল। এদের মুখপাত্র রিজভীকে দেখলেই মনে হয় এখনই আবোল-তাবোল কিছু বলবেন। মূলত যে বিষয়ে তার কোন ধারণা নেই সে বিষয়ে মুখ খোলার জন্যই যেন রাখা হয়েছে তাকে। এদিক থেকে মির্জা ফখরুল বেশ গোছানো। সুবেশী মির্জা সাহেব ভাল বাংলা বলেন। তিনি বলেছেন আওয়ামী লীগ বা সরকারী দল খেলছে মেসির মতো। কোন্ মেসি? যিনি মাত্র গতকাল মানে বুধবার তার পিছিয়ে পড়া দল আর্জেন্টিনাকে এক লাফে রাশিয়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। একাধারে তিন গোল বা হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে এই অসাধ্য সাধনের আগেই এমন আগামবাণী মির্জা ফখরুল করলেন কি করে? কীভাবে তিনি জানেন যে, আওয়ামী লীগ আসলেই দেশ শাসনে হ্যাটট্রিক করতে চলেছে? আর তাদের সেরা স্ট্রাইকার দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তার নেতা। বিরোধী দলে না থেকেও বিরোধী দলের নেতা মির্জা ফখরুলের এ মন্তব্য কেন কি কারণে কীভাবে বেরিয়ে এলো জানি না। তবে এর ভেতর তাদের মনোবলহীনতা আর সত্যের ছাপ আছে। আওয়ামী লীগ ও এখনকার আর্জেন্টিনার ভেতর বেশ মিল আছে বৈকি! এরা শেখ হাসিনাকে ছাড়া খেললে হয় সমতা নয়ত পরাজয়। আর যখনই তিনি থাকেন তাদের বিজয় নিশ্চিত। এই সত্য অনুধাবনের জন্য ফখরুল সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই। তবে তার কাজ কি এসব বলা? আপনারা কি ব্রাজিলের ভূমিকা পালন করছেন জনাব? খালি সরকারী দল ভারত হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের ওপর দোষ চাপিয়ে রাজনীতি হয়? কোন্ ইস্যুতে আপনারা গঠনমূলক ভূমিকা রাখছেন? উল্টো প্রায় রোজ নানা মুখরোচক খবরে আমাদের বুকের পানি হিম হয়ে আসে। একবার শুনি লন্ডনে মা-ছেলের বাদ-বিসংবাদ নাকি হাতাহাতির পর্যায়ে। বিশ্বাস না করলেও বলি, এগুলোর সব কি আসলেই ভুয়া? আবার দেখছি সম্পদের পাহাড় নিয়েও খবর বেরুচ্ছে। কি বলবেন আপনারা? এগুলো সরকারী দলের কাজ। গুজব বা অপপ্রচার। এত সাধারণ আর স্বাভাবিক বলা। আপনাদের সেই ভূমিকা কোথায় যাতে মানুষ বুঝতে পারে কোন্টা সত্য, কোন্টা মিথ্যা? তাছাড়া আওয়ামী লীগ ভাল খেলে মেসির মতো পাশ কাটিয়ে গোল দিতে জানে এটাত তার ক্রেডিট। তার অর্জন। আপনারা কি করেননি আপনাদের শাসনামলে? সে কাহিনী বেমালুম ভুলে গেছেন? মির্জা ফখরুল আপনি বুদ্ধিমান মানুষ। রাজনীতি এভাবে হয়? আপনি মাঝে মাঝে সিডনি এয়ারপোর্ট ঘুরে দেশে যান। এদেশে আপনার কন্যার বাড়িতে আসেন। বলেন তো আপনি কি পালিয়ে আসেন? আপনি আসেন আপনার মতো করে, যাতে আপনার দলের লোকজন দেখা করতে পারে। তবে আরেকজন মানুষ যিনি কলহ আর বিতর্কের কারণে এ দেশে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, তার প্রতি আপনাদের এত অন্ধ সমর্থনের কারণ কি? প্রশ্ন করতে পারি কারা সংবিধানে অমুসলিমদের উচ্চপদে যাবার বাধা ও প্রতিবন্ধকতা জুড়ে দিয়েছিল? কাদের আমলে দেশের বিচারপতির চাপরাশি ও সংখ্যালঘু রাখার নিয়ম ছিল না? আপনারা আজ খোল নলচে পাল্টে কান্নাকাটি করছেন। আমি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বলছি না। সে যোগ্যতাও আমার নেই। আমি বলতে চাচ্ছি আপনাদের মানদ- আসলে কি? আপনারা সারাজীবন এখনও সংখ্যালঘু নামে পরিচিতদের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে যাদের ঠেকালেন, যাদের বিরুদ্ধে কথা বললেন আজ তারাই খুব কাছের হয়ে গেল? এই আপনারা আপনাদের মিত্র জামায়াতের নেতাদের ফাঁসির সময় মুখ খুলেছিলেন? এর নাম বন্ধুত্ব? যখন সুসময় আসবে তখন বন্ধুর জন্য কাঁদবেন বা হাসবেন আর দুর্দিনে গা বাঁচাবেন, তাহলে মেসির মতো খেলবেন কি করে? বিদেশে তার ভূমিকার দিকটা এখন গৌরবের। আমেরিকার পাগলা রাজাও তাকে আর সমীহ না করে পারে না। এশিয়া, ইউরোপ সব জায়গায় শেখ হাসিনা আলোচিত। বিষয়টা এমন না, এর কারণ দেশের রাজনীতি বা গণতন্ত্র। আসলে তিনি যেভাবে দুশমন দমন করে দেশ ও জনগণকে সামনে নিয়ে যাচ্ছেন সেটা অনুকরণীয়। বাংলাদেশের ইতিহাসও অতীতের পাপগুলো সাফ করার পাশাপাশি তিনি যে কোন বিষয়ে এখন অনেক দৃঢ়। অতিসম্প্রতি আমাদের ওপর এক অমানবিক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা নামের এই শরণার্থীর ঢল আমাদের অনেক কিছুকেই পেছনে নিয়ে যাবে। সমাজ ও দেশে শান্তি বা প্রগতিরও ক্ষতি হবে বৈকি! তারপরও তিনি এদের বুকে টেনে নিয়ে ভরসা দিয়েছেন। এমনও বলেছেন ষোলো কোটি মানুষ খেলে তারাও খাবে। আপনাদের নেত্রী কোথায়? কোথায় তার অবস্থান, উপস্থিতি? কই তিনি তো এমন কথা বলেননি। তার আসলে কোন বক্তব্য আছে কি নেই সেটাও জানা মুশকিল। বুঝলাম দেশে পারছেন না। আপনাদের কথামতো তিনি তো সারা দুনিয়ায় নন্দিত। তো বিদেশী মিডিয়ায় তার কোন কথা নেই কেন? এভাবে কি এগুতে পারবেন আসলে? যে কোন বিপদে শেখ হাসিনাকে দেখুন। তিনি যত বিপদ তত সাহসী হয়ে ওঠেন। আপনারা সবাই মিলে পায়ে ধরে টেনে নামাতে চাইলেও তিনি তার কাজে অটল-অচল। তাই ঈশ্বরও তাকে তুলছেন ওপরে। এই টানাটানি বন্ধ করে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে না ফিরলে বিএনপি যে একটি দল এবং তার অতীত-বর্তমান সবই একদিন ফসিল হয়ে যেতে পারে। আপনাদের রাজনীতির ভ্রান্তিবিলাস মানুষ বুঝে ফেলেছে। তাই ভেতরে যাই থাক আপনাদের কথায় তারা মাঠে নামে না। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ ব্যর্থতা আর কিছু হতে পারে না। আপনি কথা ভাল বলেন। মুখ ফসকে তাই আসল সত্যটা বলে ফেলেছেন। আসলেই শেখ হাসিনা মেসির মতো খেলেন। প্রয়োজনে তিনি ঝলসে উঠতে জানেন বলেই দুর্দিনে তার দল পথ হারায় না। আপনাদের নেতারা বাচ্চা বাচ্চা ছেলেকে লেলিয়ে দিয়ে মতিঝিলে যে কা- ঘটাতে চেয়েছিলেন সেটাও সফল হয়নি। তবু আপনারা শিখলেন না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের পারা না পারার একটাই কারণ এখন। সেটি এ দেশের জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে বিপদে ফেলার চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র বাদ দিয়ে রাজনীতি করতে পারলে দেখবেন আপনাদের হিল্লে হলেও হতে পারে। আপনার কথাটি আমাদের সবার মনে ধরেছে। মেসির মতো খেলায় আপনাদের তৃতীয়বারের হার আর শেখ হাসিনার হ্যাটট্রিক দেখার আশায় আছে জাতি। আপনি কি বলেন?
×