ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বহরমপুর উৎসবে আমন্ত্রিত বটতলার ‘ক্রাচের কর্নেল’

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

বহরমপুর উৎসবে আমন্ত্রিত বটতলার ‘ক্রাচের কর্নেল’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বটতলার আলোচিত প্রয়োজনা ‘ক্রাচের কর্নেল’ নাটকটি এবার দেশের বাইরে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। দল সূত্রে জানা গেছে আগামী ২৯ নবেম্বর পশ্চিম বঙ্গের বহরমপুরের রবীন্দ্রসদনে আয়োজিত উৎসবে নাটকটি মঞ্চস্থ হবে। স্থানীয় রঙ্গাশ্রম আয়োজিত ওই উৎসব শুরু হবে ২৪ নবেম্বর শেষ হবে ৩০ নবেম্বর। ২৪ নবেম্বর ওই উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও নির্দেশক উষা গাঙ্গুলী। উৎসবে ২৯ নবেম্বর সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে বটতলার ‘ক্রাচের কর্নেল’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। শাহাদুজ্জামানের উপন্যাস থেকে নাটকটির যৌথভাবে নাট্যরূপ দিয়েছেন সৌম্য সরকার ও সামিনা লুৎফা নিত্রা। নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ইমরান খান মুন্না, কাজী রোকসানা রুমা, সামিনা লুৎফা নিত্রা, তৌফিক হাসান ভূঁইয়া, বাকীরুল ইসলাম, পংকজ মজুমদার, ইভান রিয়াজ, ম. সাঈদ, নাফিজ বিন্দু, মনজুরুল ইসলাম রনি, গোলাম মাহবুব মাসুম, নাফিউল ইসলাম। নাটকের সহকারী নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনা ইমরান খান মুন্না, পোশাক পরিকল্পনা : হুমায়রা আক্তার, কোরিওগ্রাফি সামিনা লুৎফা নিত্রা, আলোক পরিকল্পনা খালিদ মাহমুদ সেজান, আলোক প্রক্ষেপণ এটিএম মহিবুল্লাহ, দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনা ম. সাঈদ, আবহ সঙ্গীত পিন্টু ঘোষ, আবহ সঙ্গীত নিয়ন্ত্রণ নীলাঞ্জনা সেঁজুতি, পোস্টার ডিজাইন জাহেদুল হক রনি, প্রযোজনা তত্ত্বাবধান তৌফিক হাসান ভূঁইয়া, মঞ্চ ব্যবস্থাপক মনজুরুল ইসলাম রনি, রূপসজ্জা আবদুল কাদের। বটতলার ‘ক্রাচের কর্নেল’ নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় একটি নাটকের দল এত-এত দুঃখ, কান্না, সাহসের গল্প থেকে বলতে শুরু করে এক কর্নেলের গল্প। এক বা একাধিক স্বপ্নবাজ, পাগল, মৃত্যুর নেশায় পাওয়া মানুষদের গল্প। একটি সময় ও দুঃসময়ের গল্প। একটি স্থানের ও কালের গল্প হয়েও যেটি কেবল একটি স্থানের ও কালের গল্পমাত্র নয়। লোকে বলবে ‘ঐতিহাসিক গল্প’ কিন্তু যারা জানে ইতিহাস মানুষের হাতে রচিত হয়Ñ অনেক সময় কিছু মানুষের প্রয়োজনে, যে মানুষগুলো ক্ষমতাধরÑ তাদের কাছে ইতিহাস একটি জটিল বিষয়Ñ আর যেহেতু সময়ের বদলে ইতিহাসের ব্যাখ্যা বদল হয়! নাটকের দলটি তাই তাদের গল্প তাদের মতো করে বেছে নেয় আর তাদের মতো করে বুঝবার ও বোঝাবার চেষ্টা করে। কিন্তু, এই দলটি যেহেতু সমকালের অংশ তাই সেও সঙ্কটমুক্ত নয়Ñ তাদের সঙ্কট তারা এখনও নায়ক খুঁজে পায়নি, নায়ক বুঝেও পায়নিÑ তারা আবার এমন এক দেশের গল্প বলে যে দেশটিও নায়ক খুঁজে পায়নি, বুঝে পায়নি। কিন্তু নায়ক কেন লাগবে? বোকার প্রশ্ন! নায়ক ছাড়া চলবে কেন? গ্যালিলিও নাটকের চরম সঙ্কটকালে শিষ্য আন্দ্রেয়া বলে বসে ‘সেই দেশই দুর্ভাগা যে দেশ কোন নায়কের জন্ম দেয় না’। গ্যালিলিও মৃত্যুর ভয়ে এইমাত্র তার সত্য বিক্রি করে এসেছে চার্চের কাছে আন্দ্রেয়া তাই গভীর মর্মবেদনায় উচ্চারণ করে এই বাক্য গ্যালিলিও যে তার নায়ক ছিল! গুরু গ্যালিলিও জবাব দেয় মর্মপীড়ায় : ‘না আন্দ্রেয়া, সেই দেশই দুর্ভাগা যে দেশের একজন নায়কের প্রয়োজন হয়’। কিন্তু এ তো আর রবীন্দ্রনাথের আইডিয়াল রাজ্য নয় যেখানে আমরা সবাই রাজা! নাটকের দলটি সেই অর্থে দুর্ভাগা, বাংলাদেশ সেই অর্থে দুর্ভাগা! কর্নেল তাহেরের জীবনের প্রস্তুতি, প্রেম, সংগ্রাম ও মৃত্যুর গল্প বলতে গিয়ে নাটকের দলটিকে যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ও পরবর্তী বিস্তৃত ঘটনারাশির কথা বলতে হয় তখনই সঙ্কট! মিডিয়ার দখলে থাকা সংস্কৃতির ভাগিদার হয়ে, পরস্পরবিরোধী ইতিহাসÑ ব্যাখ্যার অংশ হয়ে দলটির সদস্যদের কাছে ইতিহাস জটিল হয়ে ওঠে, কেউ না কেউ ইতিহাস খেলে বলে মনে হয় কিন্তু এত বড় জাল ছিঁড়ে কে নায়ক বনবে?
×