ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু জাপানী গণমাধ্যমে পেশাগত ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু জাপানী গণমাধ্যমে পেশাগত ঝুঁকি

জাপানের এক নারী সাংবাদিক প্রায় চার বছর আগে তার কর্মস্থলে অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার ঘটনা সে দেশের গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে খুব একটা উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠার জন্ম দেয়নি। কারণ সেদেশের গণমাধ্যমে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টায় নিজেকে ব্যাপৃত রাখার সংস্কৃতি খুবই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাপানের অন্যতম প্রধান একটি সংবাদপত্রের নারী সাংবাদিক বলেন, আমরা যেভাবে পাগলের মতো কাজ করে যাই, তাতে মনে হয় এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে। মাঝে মাঝে নিজেকে মনে হয় যেন দাসত্ব করে যাচ্ছি। নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এই সাংবাদিক বলেন, কাজের চাপে আমি মাঝে মাঝে এমন হাঁপিয়ে উঠি যে মনে হয় আমি মারা যাব। খবর সংগ্রহের কাজে রাজধানী টোকিওর পার্লামেন্ট সদস্য থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ছুটতে ছুটতে এমন অবস্থা হয় যে রাত ১টার আগে কখনও বাসায় ফিরতে পারিনা, ঘুমও ঠিকমতো হয় না, কারণ চার ঘণ্টা পরই (ঠিক ৫টায়) আবার কর্মস্থলে যোগ দেয়ার জন্য ছুটতে হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কর্মীদের পেশাগতভাবেই প্রতিষ্ঠানকে অনেক বেশি সময় দিতে হয়, কিন্তু জাপানের পরিস্থিতি নজিরবিহীন। এখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৭ ঘণ্টাই খেটে যেতে হবে নিরলসভাবে। ৩০-এর কোঠায় নিবেদিত প্রাণ আরেক নারী সাংবাদিক যার কাজই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের দৈনন্দিন জীবন যাপন ও খুটিনাটি খবর সংগ্রহ করা, বিশেষ করে নৈশকালীন খবর সংগ্রহের জন্য তাকে রাজনীতিবিদদের বাড়ি বা কর্মস্থলের আশপাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে হয়। সুনির্দিষ্ট কোন সংবাদ বা তথ্য ছাড়াই তাদের খবরের অপেক্ষায় চাতকের মতো অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ কাজটির জাপানী পরিভাষা হচ্ছে ‘ইয়োমা ওয়ারি’ অর্থাৎ ‘নাইট রাউন্ড’। এমনও দেখা গেছে, প্রচ- তুষারপাতের মধ্যেও তারা কোন রাজনৈতিক নেতার বাড়ির বাইরে কোন শেডের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। চারদিকে হিমেল হাওয়া, কনকনে ঠা-ায় শরীর হাতপা জমে যাচ্ছে। আশপাশে বাথরুম নেই, অথচ প্রয়োজন, কিন্তু স্থান ত্যাগ করা যাচ্ছে না। এমন প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। টোকিও টেলিভিশনের এক প্রাক্তন সাংবাদিক জানান, জাপানী সংস্কৃতিতে কর্মক্ষেত্রকে যুদ্ধক্ষেত্রের চেতনা নিয়ে মোকাবেলা করা হয়। সেখানে তুমি বাঁচ কি মর, পরোয়া নেইÑ কিন্তু নির্দিষ্ট কাজটি উদ্ধার করে আনতেই হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে একবার তাকে তীব্র জ্বর নিয়ে কাজ করে আসতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও কর্তৃপক্ষের মুখে কোন সহানুভূতিসূচক বাক্য শোনা যায় না। কঠিন কোন কাজ করে আসার পরও কেউ বিশ্রাম নেয়ার কথা ভুলেও মুখে আনেনা, বরং বলে এটাই কাজের সময়। এ বয়সে তোমাদের অলসতা মানায় না। এ ধরনের এক পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে করতে এন এইচকে সাংবাদিক মিওয়া সাদো ২০১৩ সালে ৩১ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বিষয়টি দীর্ঘ চার বছর ধামাচাপা ছিল। কারণ এনএইচকে একটি খ্যাতনামা সরকারী প্রতিষ্ঠান। অতিরিক্ত কাজের চাপ বা ‘কারোশি’ জনিত মৃত্যুর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি এতদিন বহু ধরনের প্রচার চালিয়ে আসছে। এখন সেই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মীর এ ধরনের মৃত্যু এনএইচকের সুনাম ক্ষুণ্ন করবে বলে তারা বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। পরিশেষে নানা ধরনের চাপে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান রায়োচি উয়েদা এজন্য সাদোর পিতামাতার কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চান এবং প্রতিষ্ঠানটিতে সংস্কারের আশ্বাস দেন। গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক সরকারী পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জাপানে কারোশিজনিত কারণে গত বছর ১৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সরকার দারুণ ক্ষোভ প্রকাশ করে গণমাধ্যমসহ সর্বক্ষেত্রে এর প্রতিকারের নির্দেশ জারি করে। -এএফপি
×