ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণাঞ্চলীয় হাম্বানটোটায় মাত্তালা বিমানবন্দর যৌথ উদ্যোগে উন্নয়নের প্রস্তাব

শ্রীলঙ্কায় বিমানবন্দর চায় ভারত

প্রকাশিত: ০৩:১৬, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

শ্রীলঙ্কায় বিমানবন্দর চায় ভারত

শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিমানবন্দর পরিচালনা করতে চায় ভারত। এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে কথাবার্তা হয়েছে বলে শ্রীলঙ্কার এক মন্ত্রী জানিয়েছেন। চীন বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলে যে সমুদ্র বন্দর তৈরি করছে তার কাছাকাছি এলাকায় হবে এ বিমানবন্দর। সিএনবিসি। শ্রীলঙ্কার বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী নিমাল সিরিপালা সোমবার বলেছেন, তার দেশ হাম্বানটোটা এলাকায় বিকল্প বিনিয়োগ আশা করে। ওই এলাকায় চীন একটি সমুদ্রবন্দর তৈরি করছে। এছাড়া একটি বিনিয়োগ এলাকা প্রতিষ্ঠা ও শোধনাগার তৈরির বিষয় নিয়েও কথাবার্তা চলছে। তিনি বলেন, এই প্রেক্ষাপটে ভারত এখন সেখানে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। এয়ারপোর্ট এ্যান্ড এভিয়েশন সার্ভিস লিমিটেডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিয়ে ভারতের কথাবার্তা হয়েছে। এয়ারপোর্ট এ্যান্ড এভিয়েশন সার্ভিস শ্রীলঙ্কার একটি রাষ্ট্র পরিচালিত কোম্পানি। রাজধানী কলম্বোসহ দেশের আরও কয়েকটি বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা এই কোম্পানি দেখাশোনা করে থাকে। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত নৌপথের ধারে হাম্বানটোটার অবস্থান এবং এটি চীনের বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ। এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের নতুন বাণিজ্য রুট তৈরি করতে চীন এই কর্মসূচীটি গ্রহণ করেছে। চীন হাম্বানটোটা বন্দর ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে। বন্দর এলাকায় ১৫ হাজার একর জায়গার ওপর চীন একটি শোধনাগার তৈরির পরিকল্পনা করছে। এটি হবে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় শোধানাগার। এছাড়াও সেখানে অনেক প্রকল্প করতে চায়। সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে স্থানীয় লোকজনকে উচ্ছেদ করতে হবে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা আটকা পড়বে চীনের দীর্ঘমেয়াদী ঋণের জালে। ভারত শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলীয় লোকসান জর্জরিত মাত্তালা বিমানবন্দরটি যৌথ উদ্যোগে উন্নয়নে কাজ করতে ইচ্ছুক। হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দরের পাশেই এর অবস্থান। এজন্য প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করতে হবে ২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ৪০ বছরের লিজের শর্তে ভারত এর ৭০ শতাংশের অংশীদার হতে আগ্রহী। ভারত আশা করছে, এলাকাটি ভারতীয় পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থান হবে। এই উদ্দেশে সেখানে একটি ফ্লাইং স্কুল এবং একটি রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায়। প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য দুদেশের মধ্যে পর্যটন বাড়ানো বলে ভারতের সরকারী সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে একজন মুখপাত্র বলেছেন, বেজিং বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নয়। তবে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সেখানে অন্য দেশের এগিয়ে আসাকে চীন স্বাগত জানায় বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। তামিল বিদ্রোহীদের সমর্থন জানান নিয়ে নয়াদিল্লী ও কলম্বোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় কয়েক দশকের তামিল বিদ্রোহের অবসান ঘটে। গৃহযুদ্ধ পরবর্তী শ্রীলঙ্কা পুনর্গঠনে চীনই প্রথম এগিয়ে আসে। দেশটির সড়ক উন্নয়ন, জ্বালানি খাত ও বন্দর নির্মাণে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে চীন। এমনকি চীনা নৌবাহিনীর সাবমেরিন পর্যন্ত কলম্বোতে ভিড়েছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার সরকার শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তবে হাম্বানটোটায় চীন ও ভারত যেভাবে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে তাতে দেশের জাতীয় স্বার্থ হানি হতে পারে বলে মনে করেন দেশটির অনেক বিরোধী রাজনীতিক। পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় সদস্য ডুল্লাস আলাহাপ্পেরুমা বলেন, হাম্বানটোটায় চীন ও ভারতকে একসঙ্গে কাজ করতে দেয়াটা দেশের জন্য ক্ষতিকর। ভারতের বিমানবন্দর প্রকল্পের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কয়েক বিরোধী সদস্য প্রতিবাদ মিছিল বের করলে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়।
×