কবিতা বলতে আমার কাছে ভাবের প্রগাঢ়তাটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। কবিতা আর গল্পের পার্থক্য করি এই ভাবের প্রগাঢ়তায়। গল্প হলো শব্দের বুনন যা ধীরে ধীরে ভাব খুঁজে নেবে। আর কবিতা হলো ভাব যা শব্দের জোগান দেবে। সেই শব্দের প্রভাবে কবি খুঁজে পাবে নিজের অচেনা জগত ও কবিতার আত্মকথা।
শব্দের জাগরণে বিশ্বাসী আমি। শব্দের জাগরণ এক ধরনের সংগ্রাম। কবিকে এই সংগ্রামে ক্লান্ত হতে নেই বরং সংগ্রামের মোহনায় দাঁড় করাতে হয়। সংগ্রাম শুধু নিজের সঙ্গে নিজের করে নতুন নিজেকে জন্ম দিয়ে থেমে থাকা নয়। সংগ্রামের এ পথ ধরে হাঁটতে চাই সমাজ ও রাষ্ট্র ভাবনার পথে। তাইত ভালবাসাকে কখনো দ্রোহের হাতিয়ার আবার দ্রোহকে ভালবাসার হাতিয়ার করে বিপরীতমুখীকে করতে চাই একমুখী। প্রত্যাশা করি, আমার কবিতা বৈষম্য ভেদ করে সাম্যের প্রতীক হয়ে উঠুক।
*প্রশ্ন
বিকেলে কলকলিয়ে ওঠা নদীর কাছে
প্রশ্ন ছিল
মাঝরাতে তুমি এতো নিস্তব্ধ কেন?
উত্তরে নদী বলে, ‘ভাঙ্গনের সুর দিতে দিতে আমি শ্রান্ত’।
ফুল না হয়ে ওঠা কলির কাছে
প্রশ্ন ছিল
ফুল হয়ে উঠতে তোমার বাধা কিসে?
সে বলে, ‘ যদি কীট হৃৎপিণ্ডে বাস করে’!
নীড় খোঁজা পাখির কাছে সন্ধেবেলা
প্রশ্ন ছিল
তোমার ডানা ঝাঁপটানোর মাঝে পার্থক্য আছে কি?
উত্তরে পাই, ‘সুখের উল্লাস আর আর্তনাদের ফারাক যা আছে বৈকি’।
সকালের শান্ত প্রকৃতির কাছে গোধূলি লগ্নে
প্রশ্ন ছিল
তুমি এতো বৈরী কেন?
সে জানায়, ‘মানুষ মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখেনি তাই’।
*হন্তারক ভালবাসা
তোমার ভালবাসা হৃদয়ে যখন
বলবো তাহলে বুলেটও আমাকে ভালবাসে
কারণ দুটোতেই ক্ষত হয় একখানে।
তোমার কথা যখন বুলেট হয়
গোলাপের পাপড়ি হয় হন্তারকের ছুরি
মিথ্যের বেসাতি ছাড়া প্রেম হয় কি?
অনুরোধ, প্রেমিককে মিথ্যুক বলো না,
অপ্রেমিকরা যখন প্রেমিক হয়ে যায়
তখন প্রেমিক আত্মোৎসর্গ করে।
*তোমার শেখানো বিদ্যে
তোমার শেখানো বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেছি
দিনে দিনে রপ্ত করেছি অনেক
গুরুদক্ষিণা দাবি করো না
পায়ের তলার মাটি সরে তবে
শূন্যে ভাসবো
মধ্যাকর্ষণ টান বল কাজ করবে না
জাগতিক ফ্রেমে বন্দী জীবন ছেড়ে
কল্পনার সাথে বসবাস সে মানায় না,
তাই তোমার কাছে আবেদন-
পৃথিবীতেই হোক আমার শেষ নিঃশ্বাস।
* পুনর্জন্মের প্রথমবার
কয়লার রঙের রাত্রিকে বিতাড়িত করে
জ্বলন্ত লোহার রঙের সূর্যোদয় নিয়ে
সাদা আলোর প্রতিটি দিনের মতো
বার বার তোমার মুখোমুখি হতে
ভাল লাগে না।
কালো রাত্রি আমাকে গ্রাস করেছিল
কিন্তু অপবিত্রতা স্পর্শ করতে পারেনি।
সকালের সাদা আলোতে যে দাগ স্পষ্ট ছিল,
যার পরিণামে ছিল তোমার ভর্তসনা
সে আমার প্রথম জন্মের পবিত্র দাগ।
এ জন্মটা মায়ের জঠরে নয়,
এ জন্মটা তোমাতে-
যেটা বার বার মরে বেঁচে থাকার প্রমাণক।
* রাজনীতির রঙ
সময়ের ট্রেন্ড আলাপনি
রাজনীতিটা পছন্দ না,
নীতির সাথে করতে আপোস
অর্থের বাইরে বুঝি না।
আমরা সবাই অরাজনৈতিক
সাহেব যখন বলেন কেশে,
নীতির রাজা খোঁয়াড়ে বন্দী
নেতারা তখন মুচকি হাসে।
রাজনীতিটা খেলা এখন
সবাই তাতে লাগায় রঙ,
অভিনেতারা মঞ্চ ছেড়ে
নেতারা তখন সাজে সঙ।
রাজনীতিতে পার্টি যেতে
হেরে যায় জনগণ,
সবাই সেই পার্টি লেবাসে
বদলে আদর্শের রং।
আত্মাহীন আদর্শের দেহ
রং বদলের রাজনীতি, —-
জনগণের হিসাব নাই তো
আদর্শ দেয় লুটোপুটি।
শ্রমিক ঐক্যের গানেও
সুবিধাবাদ দীর্ঘজীবী,
দিনশেষে আমরা সবাই
রাজনীতির কুসীদজীবী।
* ভালোবাসা ও জীবন
ভালোবাসা নাকি বাঁচতে শেখায়!
কেউ কেউ বলে-
“ভালোবাসা মানেই জীবন”।
কিন্তু আমার বেলায় হয়নি সেটা
বিপরীতমুখী তোমার ভালোবাসা আর আমার জীবন
বাঁচাতে গিয়ে জীবন, ভালোবাসা বিসর্জন।
জীবননগরে মরণ ফাঁদ পাতে যে প্রেমিকা-
প্রেম যেখানে কারাগার তুল্য,
প্রেমিক সেখানে পালায়নপর হতে বাধ্য।
* মৃতের জীবন
আমার হৃদয় গোরস্তান বানিয়ে করো মড়ার চাষ
জানো কি, কবরের ও প্রাণ আছে!
সেখানে সূচিত হয় মৃতের জীবন।
*ভালোবাসায় কঙ্কাল
ভালোবাসা নিলামে বিক্রি হবে
প্রেমিক হয়ে যাবে খুনী।
দেবালয় হয়ে যাবে শ্মশান
চামড়ার পোশাক ছেড়ে দিবে দেহ
মাংস খসে থাকবে শুধু কঙ্কালসার।
*হানাদার
আমার আমিত্বের সার্বভৌমত্বে তুমিই একমাত্র হানাদার।
অমর প্রেমের আত্মহত্যা
কার্নিশে ঝুলে থাকা প্রেম আত্মহত্যা করবে। আর সুইসাইডাল নোটে লেখা থাকবে প্রেম অমর, প্রেম স্বর্গীয়।